জয়ের পাঠক-নির্মাণ
এই নিবন্ধের শিরোনামেই রয়ে গেল এক অমোঘ বিভ্রান্তি। জয় গোস্বামীর লেখা পড়েছেন বা পড়েন অথবা পড়বেন তিনিই তো জয়ের পাঠক। তাহলে নির্মাণ কেন? এই নিবন্ধের লক্ষ্য কিন্তু জয়-মুগ্ধ পাঠক সম্প্রদায় নয়। এখানে পাঠক পরম অনিবার্যতায় একবচনাত্মক। বিশেষ। চূড়ান্ত। হয়তো বা এক বিমূর্ত ধারণা মাত্র। প্রথাসিদ্ধ পাঠক ধারণার সঙ্গে এই পাঠককে মেলানো যাবে না। এখানে পাঠক নিজেই এক স্বয়ংসম্পূর্ণ তত্ত্ব। বিশ-একুশ শতকের এক বাঙালি কবির কাব্যতত্ত্বের কেন্দ্র।
সোমেশ্বরের মনে ধারণা জন্মাচ্ছে, তিনি যে একজন চূড়ান্ত পাঠকের কথা কল্পনা করেছেন সারাজীবন, এই হয়তো সেই পাঠক। লেখকের প্রথম ও শেষ আশ্রয়। (‘ঘাসফুলের কবি’)
‘ঘাসফুলের কবি’ গল্পে সোমেশ্বরের জবানিতে যে চূড়ান্ত পাঠকের কথা আমরা শুনেছিলাম, সেখানে স্পষ্টতই জয়ের আত্মপ্রক্ষেপণ দেখা যায়। কিন্তু চূড়ান্ত ‘পাঠক’ বলবো? না পাঠিকা? জয়ের কবিতা-গল্প-উপন্যাস-কাব্যপোন্যাস-প্রবন্ধ-কাব্যনাট্যে যে পাঠকের দেখা মেলে সে সবসময়েই মেয়ে। তার বয়েস পঁচিশের কাছাকাছি। যে প্রচুর কবিতা পড়ে। কিন্তু কখনোই কবিতা লেখে না। ‘মল্লার যেভাবে নামে’ গল্পের পাঠিকা বলেন,
লিখতে পারি না আমি। কবিতা পড়ি। মানুষ যেমন গান শোনে, তেমনি। কবিতার মধ্য দিয়ে নিজেকে যেভাবে বুঝতে পারি, পৃথিবীকে যেভাবে বুঝতে পারি, আর কিছুতেই তেমন পারি না।
‘ঘাসফুলের কবি’ গল্পে পাঠিকা ঘাসফুল কবিকে বলে,
আমি আপনার সব বই পড়েছি। স-অ-ব। টেনে বলে চুপ করে যায়।
এই দুই পাঠিকা কিন্তু একই পাঠক-ধারণার ভিন্নমুখী প্রকাশ।
এই পাঠক আসলে কবির নিজের ঠিক করে নেওয়া এক পরম গন্তব্য। যেখানে পৌঁছতে চায় তাঁর সব লেখা। এ এক অমোঘ বাসনা।
একজন স্থির, নিবিড় পাঠকলাভের বাসনা হয়তো তাঁর এখনও আছে। একটি প্রেমলাভের বাসনার মতো।
এখানে পৌঁছে একথা খানিক নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জয়ের বিশেষ পাঠিকাভাবনার সঙ্গে এক অসমবয়েসী প্রেমভাবনা অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে। এই পাঠক কোথাও লেখকের সঙ্গে একীভূত। এইখানে কিন্তু আমরা লেখক-নির্মিত-পাঠক-ধারণায় আর আটকে থাকছি না। আমরা ঢুকে পড়ছি সেই পাঠকের মনে। বুঝতে পারছি কিভাবে এই পাঠক বিশিষ্ট। কেন এই পাঠক চূড়ান্ত। এই পাঠক বলে,
আপনার সংসার থাকুক। ছেলেমেয়ে থাকুক। চাকরি খ্যাতি প্রতিপত্তি থাকুক। যা ইচ্ছে থাকুক। আপনি যেখানে খুশি থাকুন। কিন্তু ওই একটা জায়গায়, গোলাপেরও পরে, আপনি আমার। যেখানে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব। গোপন শ্রেষ্ঠত্ব। অন্য লেখকের লেখার তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব নয়। আপনারই ভিতরকার যেসব ময়লা, নোংরা, অপ্রয়োজনীয় ও দূষিত অংশ সেগুলির তুলনায় আপনার ভিতরকার শ্রেষ্ঠত্ব। সে-ই, সেইটুকু আমার। আপনার ভিতরকার শ্রেষ্ঠ কবিতা-আপনার নয়, আমার। সেই জন্যই, আপনি আমার।
আরও পড়ুন : স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় পেল ক্ষণকালের ছন্দ : সার্ধশতবর্ষে বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর / টিম সিলি পয়েন্ট
এই পাঠকের ভাষ্য আমরা অন্যত্রও পাব। যেমন জয়ের কাব্যনাট্য ‘যেখানে বিচ্ছেদ’। সেখানেও বয়েসে তরুণ এক পাঠিকা বলে,
হলো কী, আপনার লেখা। অনেক লেখা না-
একটা দুটো তিনটে লেখা, চারটে, বড়জোর
পাঁচটা হতে পারে...
কী কে একটা হতে লাগলো পড়ে! মনে হলো পেয়ে গেছি।
এই আমার লেখক। এ ঠিক আমার কথা জানে!
একটু আগেই আমরা বলেছিলাম লেখক-পাঠকের একীভূত হয়ে যাওয়ার কথা। ‘যেখানে বিচ্ছেদে’-ও পাঠিকা বলবে,
না আমি দ্বিতীয় কেউ নই।
যে তুমি তোমার ঐ ফেলে আসা কবিতা গুচ্ছের মধ্যে আছো
হ্যাঁ সেই তোমাকে আমি জানি, কারণ আমি,
আমিও রয়েছি ওইখানে। কবিতার মধ্যে ওই মেয়েটি তো আমি।
এ যেন এক চির না-হওয়া প্রেম। যার জন্য লেখা হয়েছে কবিতা, সে বাস্তবে এসে পৌঁছলো অনেক পরে।
‘মল্লার যেখানে নামে’-তে লেখক জানিয়েছেন,
বানিয়েই লেখা। ওই মেয়েটা একটু আগে জানতে চাইছিল, 'লুকোও তৃণ'-র কবিতাগুলি কবে লেখা। তখন কবির ২৪/২৫ বছর বয়স। তখন কবি গালে হাত দিয়ে ভাবছেন, কেউ আসবে। একটি নারী। যার সঙ্গে সাত পা হাঁটতে পারা যাবে। যার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে কয়েক পলক। সারা দিন, মনে মনে কথা বলা যাবে যার সঙ্গে। লেখা যাবে লম্বা লম্বা চিঠি। কেউ আসবে।
কেউ আসেনি। সে কোথাও ছিলও না। তবু সে আসবে মনে করে লেখা হয়ে গেছে গোছা গোছা কবিতা।
সেদিন যে আসেনি, সে এলো অনেক পরে। এলো পাঠকের বেশে। কবি মনের কল্পনায় যে মেয়েটি ছিলো, সে যখন সত্যিই এই পৃথিবীতে এল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কবির জীবনে সূর্যাস্তের আভা পড়েছে তখন। অথচ, তাঁর কবিতা যাকে লক্ষ করে, সেই মেয়ে কবিতাতেই নিজেকে খুঁজে নিয়েছে। এসেছে কবির কাছে। জয়ের চব্বিশ-পঁচিশ বছরের কোনো লেখায় কি সেই মেয়ের দেখা আমরা পেতে পারি? যে তখনো কবির জীবনে আসেনি, তবু যে ‘আসবে মনে করে লেখা হয়ে গেছে গোছা গোছা কবিতা’? ‘ঘাসফুলের কবি’ সোমেশ্বর যার জন্য বলেছিলেন,
ঠিক, তোমার জন্যই লিখেছি। তোমার জন্যই লিখবো। তবে দেখা পাবো ভাবিনি।
যার জন্য ‘মল্লার যেভাবে নামে’ গল্পের কবি লিখেছিলেন ‘লুকোও তৃণ’ বইটি। এই সন্ধানে আমাদের যেতে হবে জয়ের কবি জীবনের একদম প্রথমদিকে।
জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই নভেম্বর। প্রথম কবিতার বই জানুয়ারি ১৯৭৭-এ। ‘ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’। কবির বয়েস তখন তেইশ। পরের বছর বেরোলো ‘প্রত্নজীব’। তার প্রথম কবিতা, ‘হাসি, হাসিগুলি, হাসিদের’। সেখানে আমরা দেখি কবিতার উদ্দিষ্ট এমন একজন, যে জানেই না, তার জন্য কেউ কবিতা লিখছে।
আসলে, তোমাকে আমি মনে মনে মোমবাতি বলে ডাকতুম।
সাদা মোমবাতি, তুমি জানতে না।
পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরে জয়ের কোনো কাব্যগ্রন্থ বেরোয়নি। কিন্তু তা বলে জয়ের কলম থেমেও থাকেনি। এই পর্বে লেখা কবিতাগুলো নিয়ে জয়ের সাতাশ বছর বয়সে, ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হলো ‘আলেয়া হ্রদ’। এর ‘জন্তু’ কবিতায় আমরা দেখতে পাবো ‘অনুবাবু’কে। পাঠিকার ভাবমূর্তি সন্ধানে এই অনুবাবু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কবিতা লেখা হয় ২২ অক্টোবর ১৯৭৯ সালে। কবির বয়েস তখন ঠিক পঁচিশ।
আরও পড়ুন : "আজিকে তো কুসুমের মাস" : স্মরণে কবি অজিত দত্ত / আহ্নিক বসু
কাগজে বসাই তবে, অনুবাবু। আরো একবার ওই আধমরা গাছের তলা থেকে
তোমাকে বসাই এসো সাদা কাগজের মধ্যে।...
এই কবিতা পড়লে মনে হবে কবির খুব কাছের কেউ অনুবাবু। তার খুব কাছে কাটানো কয়েকটি মুহূর্ত বসিয়ে তৈরি হয়েছে এই কবিতা। তার হাঁটার ভঙ্গি, হাত নেড়ে বারণ করাটা, ‘অতগুলো খেতেই পারবো না’ বলা, মাথা হেলিয়ে টিউবকলে ঝুঁকে জল খাওয়া, পেন্সিল দিয়ে কপালে ঝুরো চুল সরানো এইসব টুকরো টুকরো ছবি কবিতাতে বসাতে বসাতেই তো তৈরি হয়ে ওঠে কবিতাটি। এমনকি শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিতও এসে যায় কখনও কখনও,
অনুবাবু, অনু, বুকের ঢেউদুটি এত ছোট!
শ্বাস দিয়ে বাজিয়েছি ওই শাঁখ, আর চুল মুঠো করে রেখেছিলো ততক্ষণ
রোগা রোগা ফরসা আঙুলেরা
তাতে অল্প নখ...
স্বভাবতই মনে হয় এই কবিতার আলম্বন-বিভাব কোনো বাস্তব নারী, তার সঙ্গে কাটানো কিছু বাস্তব মুহূর্ত।
‘জন্তু’ কবিতাটি শিরোনামবিহীন হয়ে ফিরে আসবে আবার। ১৯৯৮ সালে। জয়ের বিখ্যাত কাব্য-উপন্যাস ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’-এর পাতায়। সেইখানে কবি চরিত্র ইন্টিরিয়ার মনোলগে বলে চলবে অনুবাবুর ইতিহাস। কী সেই ইতিহাস?
(কি জানো পণ্ডিতদিদি, অনুবাবু আসলে দুজন!)
... ... ...
মেয়েটি গাছের কাঁধে ভর দিয়ে। নাম অনুরাধা।
দেখিনি। শুনেছি মাত্র। ছবি তুলল কলেজের দাদা।
হাতে পড়ল সেই ছবি। একটি গাছ একটি মেয়ে তাতে।
দু এক ঝলক দেখে ফেরত দিই প্রেমিকের হাতে।
সামনের বাড়িতে একটা মেয়ে আসতো। বাবু ডাক নাম।
ভালো নাম জানা নেই। দুয়ে মিলে কবিতা লিখলাম।
বান্ধবী তো নয়ই। নেই কারো সঙ্গে মুখেরও আলাপ।
যা কিছু পড়েছ তোমরা সবই শুধু সত্য অপলাপ।
যা লিখি সকলই মিথ্যা যত কান্ড সমস্ত বানানো
ও মেয়ে, নতুন এলে, তুমি আর কতটুকু জানো
মেয়েরা আসেনি কেউ। লজ্জা পাই সে কথা স্বীকারে
শুধু আগে দেখতাম খাতা হাতে কলেজের ধারে
কিংবা পোস্টাপিস মোড়ে নিচু মুখে যেত একজন
কোনোদিন কথা হয়নি। তাকে আর দেখিনা এখন।
লেখার পারম্পর্য ধরলে, এ কথা মনে হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়, যে, জয়ের পাঠক-ধারণার ভিত্তি প্রথম যৌবনের কোনও এক অসম্পূর্ণ প্রেম।
‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ কাব্যোপন্যাসে যাকে বলা হচ্ছে ‘নতুন এলে’ সেই এম এ পাঠরতা মেয়েটিও কিন্তু কবি-চরিত্রের ‘পাঠিকা’।
এ মেয়ে কোথায় থাকে? যে পাঠিকা কোথা
বয়ে যায়?
এই পাঠিকাকে নিয়েই তো ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’-র কবি একটি সিগারেট প্যাকেটে লিখে ফেলবেন,
হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে
অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
এই কবিতাটি বস্তুত কবির পঁয়ত্রিশ বছরে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা’-র বিভাব কবিতা। যদি ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’র সাক্ষ্য মানি তাহলে এ কবিতা কবি-নির্মিত পাঠক ধারণার উৎসমূল বলে চিহ্নিত করা যায়। এখানেই প্রথম আমরা পাঠিকার স্বর শুনতে পেয়েছি। যদিও তা একটিমাত্র বাক্য - ‘পড়ে রইল যে’। যে বাক্যটি জন্ম দিয়েছে এই কবিতার। কবি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর অতলকে। কিন্তু সেই অতলে তলিয়ে যাওয়া হয়নি তাঁর। ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিলো’-র পাঠিকা এবং প্রেমিকা, কবিচরিত্রটিকে কোনো ভালোবাসার নীড়ে পৌঁছে দে নি। এই না-হওয়া প্রেমগুলোই কি ফিরে ফিরে আসবে পঞ্চাশোত্তর প্রৌঢ় কবির কলমে? এক চূড়ান্ত পাঠিকার বেশে? কবির বয়েস বেড়েছে কালের নিয়মে। কিন্তু তার বয়েসের শুকনো পাতার ডালে ঝড় হয়ে যে আসবে সে সদ্য তরুণী। কবিমানসীর বয়েস বাড়ে না।
একটি দিন মেশে অন্য দিনে
একটি প্রেম মেশে কি অপরে?
(‘মহুকথা’)
এইখানে শুরু হয় অসম বয়েসের এক অমোঘ দ্বন্দ্ব। কবি যাকে চেয়েছেন, সে এসেছে অন্য এক সময় খণ্ডে। অন্য কেউ হয়ে। তাই হয়তো ‘মল্লার যেভাবে নামে’র অন্তিম আর্তনাদটি অনিবার্য হয়ে পড়ে।
যখন আমার পঁচিশ বছর বয়স ছিল তখন কোথায় ছিলে? কোথায় ছিলে তুমি!
তবে এই আর্তনাদ শুধুমাত্র কবির নয়। পাঠিকারও বটে। ‘মল্লার যেভাবে নামে’-তে পাঠিকার যে স্বর আমরা শুনতে পাইনি তাই-ই পাবো ‘ঘাসফুলের কবি’ গল্পে। সেখানে ঘাসফুলের মুখে আমরা শুনব,
এত আগে কেন জন্মালেন? আমার চেয়ে কুড়ি বছর আগে কে জন্মাতে বলেছিল আপনাকে? আমার কথা একবারও ভাবলেন না? ভাবলেন না? যার জন্য লিখছি, যার দিকে যাচ্ছে লেখাগুলো, সে যখন পাবে, তার কি অবস্থা হবে? সে কি করবে নিজেকে নিয়ে? কি করবে সে লেখককে নিয়ে? ...মানে, বলুন... আসলে... এসব লেখা তো আমার? আমারই। দিয়ে দেবার আগে কেন ভাবেননি একবার?
আরও পড়ুন : ‘নাই বা বুঝুক বেবাক লোক’ / বিবস্বান দত্ত
‘যেখানে বিচ্ছেদ’ কাব্যনাটকেও প্রায় একই স্বর শোনা যাবে,
কেন তুমি কেন অত আগে জন্মে গেছ? কেন, কেন?
আমার জন্যে কি একটু অপেক্ষা করতে পারতে না?
অপেক্ষা? জন্মের জন্য?
দশ বছর, কুড়ি বছর, পঁচিশ বছর
কেন, কেন অপেক্ষা করোনি!...
আসলে তো অপেক্ষা করা যায় না। কবির যথার্থ দোসর হতে পারে একমাত্র সেই-ই যে কবির মানস যাপনের সঙ্গী। নিয়ত যাপনের মানুষটি তো আসলে খণ্ডিত। তাই কবির যথার্থ দোসর সম্ভবত হতে পারে একমাত্র তাঁর পাঠক। সমস্ত পাঠক নয়। এক ‘চূড়ান্ত পাঠক’। কিন্তু সেই পাঠকের দেখা পেতে পেরিয়ে যায় সমস্ত জীবন। তারপর যদি দেখাও হয়, তখন কবির বিগত বসন্ত। কোনো মিলনের রাগ তাঁর জীবন বীণায় আর বেজে উঠবে না। তবু এই পাঠকই কবির গন্তব্য। ‘সন্ধেফেরি’-তে জয় লিখেছিলেন,
ও মেয়ে, পাঠক তুমি, যে-যুগেই থাকো
জানি আসছ, আসছ তুমি, এসো, হাত রাখো
যুগ পেরিয়ে, নিজের জীবন পেরিয়ে যার কাছে পৌঁছতে হয়, সেই তো কবিমানসী। সেই-ই জয়ের চূড়ান্ত পাঠিকা। তার সঙ্গে দেখা হোক বা হোক, সে আছে, সে আসছে, এই প্রত্যয়টুকুই কবির সম্বল।