কবিতা

রাত্রি সিরিজ

সৃজিতা সান্যাল 28 days ago কবিতা

...

.

প্রবেশক

 

কাব্য করতে ঘৃণা হয়, যখন আমারই বয়সি

মেয়েটির নিথরতা বারবার স্বপ্নে ফিরে আসে

নগ্ন তার চোখদুটো, দৃষ্টিশূন্য নীরবতা মেলে

প্রশ্ন করে কী কী দোষ, কোন পাপে শ্রমের শরীর 

বিদ্ধ হয়, বধ্য হয়, অযাচিত রক্তে স্নান করে!

 

সহপাঠী হতে পারত, কিংবা বন্ধু, হয়তো পরিচিতা

অথবা কিছুই নয়, অনন্ত বর্ষার মতো

মৃত্যুর পর্দাজুড়ে দুলে উঠত শুশ্রূষা, ছায়া

ক্ষতমুখ নিয়ে আজ সেই রাস্তা পড়ে আছে পথে

যে ঘুম সে চেয়েছিল অকথ্য ক্লান্তিদিন  পরে

লাশকাটা ঘরে সেই ঘুম পেল? জিরোয় এখন?

 

কবিতায় ঘৃণা আসে, বাংলা ভাষা মধুর, পেলব

শক্তি আছে এত বিষ পাত্রে তার ধারণের, বলো!

দাহ ও দহন শেষে পঙ্‌ক্তিগুলি গদ্যের ভিড়ে

ভেসে যায়, বাস্তুহারা, স্লোগান আর চিৎকার হয়ে

 

যেতে দিই, যদি কোনও ঠিকানাও খুঁজে পায় শেষে...

 

 

 

 

.

রাত্রিকে

 

ঘুমের পিপাসা আর ক্লান্তির প্রবল নিয়ে তোমার কাছে আসি।

রাত্রি।

যে ঘুমোতে পারেনি তার চোখ প্রশ্ন করে জেগে আছি কি না।

যার ঘুম শেষ হয়নি তার চোখও।

ছিন্ন করতল, কাঁধ, কবন্ধ দেহটি–

চোখমুখহীন, শব্দহীন, দৃশ্যহীন,

তবু প্রশ্ন করে, "জেগে আছ?"

 

রাতভর এত প্রশ্ন, অনাহূ

রাত্রি,

তুমি ঘুম দেবে কাকে?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

.

মিছিল

 

রাতগুলো ঢেউয়ের মতন। পেরোতে পারলেই সদ্যোজাত ভোর। কাজ আর কস্তুরীগন্ধ নিয়ে অপেক্ষায়, কত কোলাহল!

 

রাতগুলো স্থির। নিকষ। হত্যার। প্রতিহত্যার।

 

এককের।

 

ন্যায় চেয়ে রাস্তাগুলো দ্রোহে নামছে রোজ। অথচ এই যে যাবতীয় কীর্তি, স্বচ্ছলতা, স্নেহঋণ... পুঞ্জীভূত হল এক মানুষে আর অন্য মানুষ রয়ে গেল বুভুক্ষু কাঙাল, এ নালিশ নিয়ে আমি পথে নামব কার কাছে, পথের দেবতা?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

.

বর্ষণ যেদিন এল

 

বর্ষণ যেদিন এল,

ভাবলাম ভুল আছে। আকাশে। বা বিদ্যুৎকণায়। কিংবা মেঘে মেঘে সংঘর্ষযোগে। অথবা আমারই চলনে।

আমি কেন, কেন আমিই, এ প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে মেঘকে করলাম ব্রাত্য, বাতাসকে বহিষ্কার, বিদ্যুৎকে বললাম অবাঞ্ছিত সে।

 

 

তোমরা যেদিন এলে, অস্ত্র নিয়ে, আজানুলম্বিত শিকল নিয়ে,

সেদিনও, ভাবলাম, ভুল আছে। 

মেঘ, বাতাস ও বিদ্যুৎ ততদিনে মৃত। দোষ দেব কাকে?

 

 

বিভীষিকার গলিতে ঢুকে জানলাম,

ভুল আছে।

ভুল ছিল।

ভুল থাকবে।

শেষমেশ... আমার। আমারই কিছু বা।

 

 

 

 

 

 

 

.

 মানববন্ধন

 

তোমায় আর আমায় এখন মুড়ে আছে একই শোক, একই অন্ধকার। আমরা ভাবছি মরে যাওয়ার আগে ঠিক কতখানি কষ্ট হয়। ভাবছি মরে যাওয়ার আগে ঠিক কী ভাবছিল ও, আমাদের আত্মজা।

 

একই স্বপ্ন দেখে আমরা চিৎকার করছি ঘুমের ভিতর। এক লহমায় দেখা, ওই ঘুমেরই অন্দরে। অন্ধের স্পর্শের মতো আমি খুঁজে চলেছি তোমার হাত, তুমিও আমার।

 

তবু আমাদের শোক অতি ব্যক্তিগত ও নিভৃত বলে খুঁজে পাচ্ছি না...

কেউই, কাউকেই।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

.

তোমাকে

 

স্পর্শ দিয়ে চেনা যায় যে পুরুষ, একান্তে বলি তাকে,

তুমি আমি যুযুধান দুই পক্ষ নই। আমিও হেঁটেছি পথ, পাশাপাশি। অন্ধকারে দীর্ঘ শীত রাত্রিটিরে ভালো, আমিও বেসেছি। জনম অবধি রূপ দেখেছি আমিও।

 

দেখেছি মরণফাঁদ। সচকিত। মৃত্যু লিখেছে নাম সে ডানায়, যেখানে তোমার নাম যত্নে ছিল আঁকা।

 

তোমাকে, হ্যাঁ তোমাকেও, অবিশ্বাস করি ইদানীং।

এর চেয়ে বড়ো মৃত্যু কিছু আছে আর?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

.

মিটিং

 

সমস্ত স্লোগান নিভে যাওয়ার আগে একবার দেখা হোক আমাদের। প্রার্থনায় বা মিছিলে, নতজানু বা উদ্ধত ধিক্কারে, দেখা হোক।

 

(...দেখা হলে জেনে নিতাম চুল কতটা রুক্ষ, পেটে ভাত পড়েনি কতদিন, পায়ের তলায় কত বছরের ক্লান্তি, ঘুম এল না কতগুলো রাত...। জেনে নিতে নিতে বীজপত্র ফেটে জন্ম নিত যে মায়াতরু, যে বিশল্যকরণী...)

তাকে ছোঁয়ার আগেই মুখে মুখে, পায়ে পায়ে ইশতেহার রেখে হারিয়ে যাই আমরা। মিশে যাই ভিড়ে।

 

ভিড়ে মিশে যাই। ভিড়ে মিশে যাব।

দেখা হোক। কিংবা নাই-ই হোক। আমাদের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

.

অভিসার

 

কংসরাজের দিনকাল। এ সময়ে স্রেফ প্রেমের কাব্য অন্যায়, লোকে বলে।

 

লোকে বলে, সুতরাং আসন্ন ঝড়, প্রলয়ঘটিত, আগলে রাখি লোহার খাঁচায়। আমার অশ্রু দিয়ে তৈরি হয় শস্ত্রসমূহ। দেহবাসনার অন্দরে ঢুকে যায় গোপেদের জমায়েত, মিছিল, সমবেত গান।

 

 

কবিতা অন্যায়, তাই রাত জাগি। পথে নামি। কাঁটার আদল ফুটে রক্ত ঝরে পায়ে। কানে ভাসে বাঁশির সুর। ঘর পর এই লগ্নে একাকার।

 

রাধা নই, পুরাণপৃষ্ঠার কেউ নই। সামান্যা গোপিনী। গোপীজনবল্লভও জানেন না, আমার সমস্ত হাঁটাই অভিসার। সমস্ত পথই প্রতিরোধ।

 

 

 

এবং আমার বেঁচে থাকাই দুরন্ত অবোধ্য নিয়তিময় চিৎকার।

 

 

 

 

 

 

.

কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন

 

মরে গিয়েও বেঁচে আছি। সপাট। মরার জন্য যারা বাড়িয়ে দিয়েছিলে সাহায্যের হাত, ধন্যবাদ জানাই তাদের।

আমার চুপ থাকা নিয়ে, কথা না বলা নিয়ে কত বক্তব্য ছিল তোমাদের! অথচ কথা বললেই খুঁজে পেতে বারুদের বিষাক্ত গন্ধ। অথবা দুরারোগ্য রোগের ছোঁয়াচ।

তোমরা জানতে, না শোনার চেয়ে মহার্ঘ্য ঔষধ কিছু হয় না এই অসুখের। তাই বধির সেজে নিজেদের ঘিরে নিলে সুদৃশ্য কাচের বোতলে। সেখান থেকে বড়ো সপ্রতিভ দেখায় তোমাদের। আজও।

 

 

আজ, এখন, এই মুহূর্তে আমার ঘুম থেকে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ। আলো। রক্তবীজের মতো অগুনতি ছায়াশরীর। স্পৃষ্ট হলে দেখো, চিড় না ধরে ওই চিরসুরম্য বয়ামে!

 

অলংকরণ: অভীক 

#কবিতা #সিলি পয়েন্ট #স্পর্ধা #we want justice

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

24

Unique Visitors

208848