ঘুড়ির প্যাঁচে মান্না-রফি, সাক্ষী পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়
তখন মুম্বইয়ের বান্দ্রায় নিউ টকিজ সিনেমার কাছে মান্না দে-র ফ্ল্যাট। আর উল্টোদিকেই আরেক কিংবদন্তী মহম্মদ রফির বাড়ি। মাঝখানে একটি পার্ক। ঘটনা হচ্ছে, মান্না আর রফি দুজনেই ঘুড়ি ওড়াতে দারুণ ভালবাসতেন। দুজনের সম্পর্কও খুব ভালো ছিল। তাঁদের এই ঘুড়ি-প্রীতি আর ‘প্যাঁচ খেলা’-র সাক্ষী ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেদিন ‘দোলনা’ নামে একটি ছবির একটি গানের রেকর্ডিং নিয়ে কথা বলার জন্য মান্না দে-র বান্দ্রার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন পুলকবাবু। সঙ্গে ছিলেন সুরকার শৈলেন মুখোপাধ্যায়। কফি সহযোগে আলোচনার ফাঁকে জানলার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ লাফিয়ে উঠলেন মান্না। ব্যাপার আর কিছুই না, রফি সাহেব ঘুড়ি বেড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের লাটাই-ঘুড়ি বের করে তিনতলার ফ্ল্যাটের সামনের বারান্দা থেকে নিজের ঘুড়ি ছাড়লেন মান্না। পুলক আর শৈলেন অবাক। মানুষটার ছেলেমানুষি দেখে মজাও পাচ্ছেন। পায়ে পায়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পুলকের হাতেই মান্না ধরিয়ে দিলেন লাটাই - “ধরুন তো লাটাইটা। টেনে কেটে দিই রফিকে। প্রমাণ করে দিই আমি শ্যামবাজারের ছাওয়াল।”
আর সত্যিই, রফির ঘুড়ির নীচে নিজের ঘুড়ি এনে ফেলে মোক্ষম কায়দায় টেনে খেলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই রফিকে ভো কাট্টা করে দিলেন মান্না। ঘুড়ি কেটেই প্রচণ্ড উল্লাস! তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে ধুয়ো তুললেন পুলক আর শৈলেনও। এদিকে ঘুড়ি নামাতে না নামাতেই ফোন এল রফি সাহেবের। তিনি ‘টেনে’ প্যাঁচ খেলার নিয়ম শিখতে চান মান্নাবাবুর কাছে। দুই অসামান্য সংগীতশিল্পীর জীবনের এই মজাদার ঘটনাটি নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘কথায় কথায় রাত হয়ে যায়’-তে লিপিবদ্ধ করেছেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন : গণনাট্য সংঘের ফতোয়া ও সলিল চৌধুরী
….……………………………………………..
ঋণ : কথায় কথায় রাত হয়ে যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স