ইস্কুল বন্ধের লেখা
‘আন্টি, তুমি কেমন আছো? স্কুল কবে খুলবে গো?’
প্রায় দুই বছরে এই কথাটা ঠিক কতরকম স্বরে, কতরকম সুরে যে কানে এসে ধাক্কা দিয়েছে তার হিসাব নেই। আমি এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। আমি তাদের দলে যারা এই এতগুলো দিন ধরে ‘বসে বসে মাইনে নিচ্ছে’। এই লেখাটা যখন লিখব বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি প্রথমে ভেবেছিলাম সেই প্রক্রিয়াটা নিয়েই খানিক লিখব - যে কেমন ভাবে এই আমরা সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা এতগুলো মাস ধরে লকডাউনের সমস্ত নিয়মাবলি মেনে ঘরে শুয়ে বসে মাসে মাসে হাতে টাকা পেয়ে এলাহি আরামদায়ক জীবনযাপন করে চলেছি। কিন্তু তারপর মনে হল আমার বা আমাদের কাজের কৈফিয়ত দিয়ে, বা সমালোচনার যোগ্য জবাব দিয়ে যদি একখানা গোটা রচনা লিখে ফেলি তাহলে একজন সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা হিসাবে যে যন্ত্রণা প্রতিটাদিন আমায় দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে তার এক কণাও বোঝাতে পারব না। সেটা বোঝানোর সময় এসেছে। বোঝানো দরকার। আমার এই লেখায় কোনো তথ্য উঠে আসবে বলে মনে হয় না। উঠে আসবে অসহায়তা। তীব্র অসহায়তা।
২০২০ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখে আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে সায়েন্স সিটি বেড়াতে গিয়েছিলাম। বাসে চেপে গান নাচ করতে করতে গিয়েছিলাম। ৫-১০ বয়সের সীমা। বেশিরভাগই কোনোদিন সায়েন্স সিটি যায়নি। কী অপার বিস্ময়! প্রাণখোলা আনন্দ! কিছু বাচ্চা যারা প্রতিবছর স্কুল থেকে এইসব ছোটোখাটো বেরোনোর অংশ আগেই হয়েছে তারা একটু হম্বিতম্বি করছে। প্রথমবার এসেছে যারা তাদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিচ্ছে মূল্যবান উপদেশ। আন্টি-স্যারেদের থেকে ওদের দায়িত্ব কিছু কম নয়। একদম কচিগুলো হাত আঁকড়ে রয়েছে আমাদের। ডায়নোসর দেখে চিলচিৎকার! মাতব্বর এক ছাত্র ছোটদের বোঝাল, ‘ভয় পাচ্ছিস কেন? ব্যাটারিতে চলছে রে।’ ওই বছরই প্রাথমিকে যুক্ত হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণিও। সারাটাদিন হুল্লোড় করে যখন ফিরছি, এক ছাত্র বলল, ‘সামনের বার যদি আমাদের স্কুলটা ক্লাস সিক্স করে দেয় খুব ভালো হয় জান তো! আমার দিদুনের তো অত টাকা নেই, এরকম ঘুরতে যাওয়া হয়ই না। তোমাদের সঙ্গে কতবার ঘুরলাম। তোমাদের ছেড়ে যেতেই ইচ্ছে করে না আমার।’ সেদিন সেইসময় এই কথাটা শুনে শুধু হেসেছিলাম। মনে হয়েছিল এইটুকুই তো আমাদের মত ছাপোষা শিক্ষকদের পুরষ্কার। আজ কান্না পাচ্ছে। কারণ আজ সত্যিই আমি আর চোখের সামনে এরকম কোনো মুহূর্ত তৈরি হতে দেখতেই পাচ্ছি না। ‘হু’ জানিয়ে দিয়েছে অতিমারির শেষ এখনই হচ্ছে না। মাস্ক, স্যানিটাইজার যাপন চলবে। সামাজিক দূরত্ববিধি থাকবে। তাহলে কী হবে? ঠিক কী হবে? সায়েন্স সিটি ঘুরতে যাওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর থেকেই স্কুল বন্ধ। প্রায় দু-বছর পূর্ণ হতে চলল। আমাদের তরফ থেকে এই গোটা সময়কালে আমরা কী কী চেষ্টা ঠিক করে ফেলেছি বা করে চলেছি তার কৈফিয়ত দেব না তা তো আগেই বললাম। তাই আমার লেখায় কিছু চূড়ান্ত অযৌক্তিক মন্তব্য, কিছু চিৎকার ছাড়া আর কিছুই উঠে আসবে না। জানি না তার জবাব পাওয়া যাবে কী না। কিন্তু ওই যে বললাম সময় এসেছে চিৎকার করবার।
বারবার করে লকডাউন হচ্ছে, আনলক হচ্ছে, বিধিনিষেধ আসছে, যাচ্ছে। বড়োদের ইস্কুল কলেজ যাও বা দু-দিনের জন্য খুলল, ছানাদের বেলায় সেই শিকে ছেড়েনি। প্রাণ আগে না শিক্ষা সেই প্রশ্ন একাধিকবার উঠেছে। কিন্তু শুধু কি স্কুলে এলেই প্রাণের ঝুঁকি বেড়ে যায়? আমরা বাবা মায়েরা জীবিকার দায়ে রোজ বাড়ির বাইরে পা রাখছি, বাজারহাট করছি। আরও অনেক কিছুই করছি কিন্তু সেগুলোর কথা উঠলে কেউ বলতেই পারে, না গেলেই তো হয়! তবে প্রথমেই যে কারণদুটি বললাম সেগুলোর বিপরীতে যুক্তি দেওয়াটা একটু সমস্যাজনক। কারণ ভারতবর্ষের মত দেশে ঘরে বসেই চাকরি, বাজার সবটা সেরে ফেলতে পারছে এরকম মানুষের সংখ্যা কত তা নেটদুনিয়া ঘটলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ফলত আমাদের থেকেই তো বাচ্চারা প্রভাবিত হতে পারে। মাঝে মাঝেই তো মাঠ, ময়দান, চিড়িয়াখানা, সিনেমাহল সব খুলে যাচ্ছে। ৫০ থেকে ১০০, তারপর ২০০, তারপর বিধিনিষেধ ছাড়া বিয়েবাড়িও হচ্ছে। এইসব জায়গায় আমরা কী বাড়ির বাচ্চাদের না নিয়ে যাচ্ছি? গিয়ে খাবার খাচ্ছি না? মাস্ক নামিয়ে লোকের সঙ্গে কথা বলছি না? এসব ছাড়া ভারতবাসীর বারো মাসে অষ্টআশি পরবের কথা, ভোটরঙ্গের কথা তো না হয় ছেড়েই দিলাম। স্কুল কলেজেই যে কি একমাত্র জুজু তা এখনও অবধি স্পষ্টই হল না আমার কাছে! সব চলছে, সব। শুধু স্কুল-কলেজে তালা। করোনা যেন থাবা পেতে ক্লাসরুম, ক্যান্টিন, খেলার মাঠেই বসে আছে দেশের ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে দেবে বলে!
আরও পড়ুন : অনলাইন ক্লাসের গল্প: ইচ্ছে আর উপায় / দেবলীনা ত্রিপাঠী
আমি কিন্তু একবারও বলছি না বাকি সব বন্ধ করে স্কুল-কলেজ খোলার কথা। অনেকেই শপিং মল বন্ধ করে স্কুল খুলতে বলেছেন, আমি তা বলব না। বলব না কারণ ওই শপিং মলে ছোটোখাটো চাকরি করা মানুষগুলোর মধ্যে বেশিরভাগের সন্তানই পড়তে আসে আমাদের মত স্কুলগুলোতেই। তাদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরণের জন্য শপিং মল খোলা থাকারও প্রয়োজন আছে। ছোট খাটো ফাস্ট ফুডের দোকানের মালিক সন্তানকে হয়ত বহু কষ্টে ভর্তি করেছেন শহরের মোটের উপর নামী কোনো স্কুলে। দোকান বন্ধ হলে সেই স্কুলের মাইনে আসবে কী করে? কত কত মানুষের আয় যুক্ত বলুন তো পার্লার, জিম, পর্যটন কেন্দ্রের দোকান ইত্যদির সঙ্গে। এখানে ‘ছোট পুঁজি, বড়ো পুঁজি’ এই যুক্তির আগমন ঘটালে মুশকিল। এই মুহূর্তে বড়ো পুঁজির সঙ্গে কিন্তু জুড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব। এ এক ভয়ঙ্কর গোলকধাঁধা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ‘বড়ো রেস্তোরাঁ খোলা চলবে না, ছোট দোকান থেকেই জিনিস কিনুন’-এ কথা আমরা নিজেদের জীবনে যাপন করতে পারি। কিন্তু অন্য মানুষকে জোর করতে পারি কী? বড়ো রেস্তোরাঁয় যিনি বেয়ারার চাকরি করেন, লকডাউনে রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলে মালিক তাকে মাসের পর মাস যথাযোগ্য মাইনে দেন বলেই কী আমরা ধরে নিই? নাকি ওখানে কাজ করতে গেছেন বলে তার সংসারের কথাটা আমাদের ভাবার দরকার নেই! তার বাড়ির বাচ্চা আমাদের সরকারি স্কুলে আসেনা বলে তার যন্ত্রনা কে গুরুত্ত্ব দেব না এমনটা তো নয়। তাই ওগুলো যেমন বিধিনিষেধ মেনে খোলা হচ্ছে, স্কুল কলেজও খোলা হোক। অফিসে যেমন রস্টার করে কর্মচারীরা যাচ্ছেন, স্কুল কলেজের ক্ষেত্রে তা কী একেবারেই অসম্ভব? ক্লাস অনুযায়ী ভাগ ভাগ করে শিক্ষার্থীরা কী আসতে পারে না? মাঝখানে তো করাও হল কিছুদিন। ঐভাবেই চলুক না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও চেষ্টা করে তো দেখা যায় একবার। দুঃখের বিষয় এই দুই বছরে একবারও এমন প্রচেষ্টা নিতে দেখা গেল না প্রশাসনকে। অতিমারির শেষের অপেক্ষায় বসে থাকলে সত্যিই এক বা একাধিক প্রজন্মকে আমরা পাব, যারা হবে স্বল্প শিক্ষিত বা একেবারে অশিক্ষিত। কারণ সত্যিই অনলাইনে পড়াশোনা হয়না তা আমরা এতদিনে বুঝে গেছি। যাদের নিয়মিত অনলাইন ক্লাস হচ্ছে তাদের অভিভাবকেরাও এখন সোচ্চার হচ্ছেন। কারণ সকলেই বুঝতে পারছেন অবস্থা ভালো দিকে এগোচ্ছে না। আর যারা অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না তারা যে কোথায় সেই হিসেব সত্যিই চোখ মেলে দেখলে আমাদের লজ্জার শেষ থাকবে না। আমার স্কুলের কথাই বলি। একটা ক্লাসে চল্লিশজন বাচ্চা। বিশ্বাস করুন তার মধ্যে ঠিক একুশ জনের স্মার্টফোন আছে, যার মধ্যে আবার পাঁচ-ছজনের গোটা বাড়ি মিলিয়ে একটাই স্মার্টফোন। এইবার একটা ক্লাসের অর্ধেক বাচ্চা প্রতিদিন অনলাইন ক্লাসের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবে আর বাকি অর্ধেক পাবে না আমরা কিন্তু এই সত্যিটাকে মেনে নিয়েই এগোচ্ছি। এটা ঠিক কত বড়ো একটা সামাজিক এবং মানবিক অন্যায় একবার ভেবে দেখুন তো! যাদের স্মার্টফোন নেই তারা কেন, কীসের জন্য দিনের পর দিন বঞ্চিত হবে? স্মার্টফোন থাকাটা কোনো মানুষের জীবনে আবশ্যক হবে কেন? কেন কিছু বাচ্চা বারবার ফোন করে কাঁদবে আমাদের কাছে? তাহলে কী এবার ধরেই নিতে হবে যে শিক্ষার অধিকার আইন যাদের স্মার্টফোন আছে শুধুমাত্র তাদের জন্যই! সামাজিক বৈষম্য ছিল, থাকবে। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে তো সেটাই পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে সর্বশিক্ষা আইনের মাধ্যমে। শিক্ষা সকল শিশুর অধিকার। কিন্তু এই অতিমারি চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা সেই সত্য থেকে ঠিক কত মাইল দূরে। এই মুহূর্তে শিক্ষায় অধিকার শুধু তাদের যাদের সামান্য বিলাসিতা করবার সুবিধা আছে। খেয়েপরে বাঁচাটাই যাদের কাছে এই মুহূর্তে বড়ো দায় তাদের পড়াশোনা না জানলেও চলবে। কীভাবে যে হাজার হাজার বাচ্চাকে স্কুলছুট হওয়া থেকে বহু কষ্টে আটকে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা তা শুধু তারাই জানেন। এই অতিমারিতে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কী পরিমাণে বেড়েছে তা কী আমরা জেনেও না জানার ভান করে থাকব? সমস্যাটা তো সেখানেই। কারো কারো একটা মেমরি কার্ড শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে নতুন কিনতে হচ্ছে, আর কেউ বইপত্র বাক্সে তুলে চায়ের দোকানে গেলাস ধোয়ার কাজ করতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : ঘুমপাড়ানি গান কিংবা বাংলার শিক্ষা / পূর্বা মুখোপাধ্যায়
অনেক মানুষের এমন বক্তব্যও উঠে আসতে দেখলাম যে সরকারি স্কুলে কীই বা পড়াশোনা হয়! আপনাদের বিশ্বাস করানো আমাদের দায়িত্ব নয়। কিন্তু কিছু তো সামাজিক দায় থেকেই যায়, তা থেকেই বলছি। বিশ্বাস করুন হয়। কোন মাত্রায় হয়, কী কী ভাবে হয় সেই নিয়ে বিশদে একটা লেখা লিখব না হয়। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই পড়াশোনা তো হয়ই কিন্তু তা ছাড়াও সরকারি স্কুলগুলোতে কিছু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কর্মকান্ডও হয়। যেমন খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন আমাদের দেশে কত কত সরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্যোগে কত কত বাল্যবিবাহ রোধ হয়। আপনাদের বিশ্বাস না হলেও আমাদের স্কুলে এমন বাচ্চারাও আসে যারা সকালে একটি দানাও পেটে না দিয়ে স্কুলে আসতে বাধ্য হয়। টিফিনের ঘন্টা কখন পড়বে জিজ্ঞেস করতে থাকে ক্লাসের মাঝে বারবার। তখন হালকা বকুনি দিয়েছি। এখন কায়মনোবাক্যে আবার সেই প্রশ্ন শুনতে চাই, আবার গলাটা একটু গম্ভীর করে বলতে চাই, ‘আহ! আগে এটা শোন।’ প্রত্যেকবার শীতকালে গোটা রাজ্য জুড়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নতুন বন্ধু, প্রাইজ এই সবকিছু মিলিয়ে জমাটি উৎসব চলে। জানিনা আবার কবে সেদিন আসবে। যদি সম্ভব হয় কখনও মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন। ওদের তৈরি অনুষ্ঠান, নাটক, ওদের খেলায় দক্ষতা দেখলে হয়ত উত্তর মিলবে। বাবা বা মা ছেড়ে চলে গেছে, মাকে বাবা চোখের সামনে পুড়িয়ে মেরেছে, বাবা-মা কেউ নেই, একমাসে একটা খাতা বা পেন্সিল কিনতেও পেরে উঠছেন না অভিভাবক -- ইত্যাদি বহু আখ্যানের মিশ্রণে চলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বাচ্চাগুলোর মানসিক পরিস্থিতি একটু একটু করে উজ্জ্বল হতে থাকে স্কুলে আসতে আসতে। মায়ার হাতটুকু, বন্ধুদের সঙ্গটুকু থেকে তারা বিচ্ছিন্ন আজ প্রায় দু-বছর। নিম্নবিত্ত ঘরে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুরা সরকারি স্কুলগুলি থেকে শিক্ষা, চিকিৎসা সবটা পায় বিনামূল্যে। তাদের থেরাপি করা হয় নিয়মিত। স্কুলে নিয়মিত আসে তারা, সহপাঠীদের সান্নিধ্যে মনের ভিতরে হীনম্মন্যতা বোধ তৈরি হয়না। আজ সবটা বন্ধ। এমন এক বাচ্চার অভিভাবক স্পষ্ট জানাচ্ছেন এরকম আরো কিছুদিন চললে দু-বছর নিয়মিত স্কুলে এসে সে যা যা আয়ত্ত করতে পেরেছিল সবটাই ভুলে যাবে। শুধু সে বলে নয়, বেশিরভাগ বাচ্চাই ভুলে যাচ্ছে। বাবা মা পেটের ভাত জোটাতে প্রায় সারাদিন বাইরে। হয়ত তারা নিজেরা নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত। এবার তাদের বাচ্চারা কী উপায়, কার সাহায্যে নতুন ক্লাসের বইটা পড়বে? বা নতুন অঙ্কটা করবে? বাবা মা পড়াশোনা করার যুযোগ পাননি বলে ছেলেমেয়েরাও পাবে না?
আরও পড়ুন : অনলাইন শিক্ষা ও প্রান্তিক সমাজ: একটি সোনার পাথরবাটির গল্প / বিপ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য্য
কতগুলো মারাত্মক অসংলগ্ন কথা ছাড়া হয়ত সেভাবে কিছুই বলতে পারলাম না। যে কথাগুলো বললাম সেগুলো হয়ত অনেকেই অনেক ভাবে উচ্চারণ করেছেন আগে, তবুও বললাম। কারণ বারবার করে উচ্চারিত হওয়া দরকার। আসলে সত্যিই এখন বোঝা যাচ্ছে না কোনটা অপরিহার্য আর কোনটা নয়। শিক্ষা যে অপরিহার্য এবং সকল শিশুর যে তার উপর সমানাধিকার সেই সম্পর্কিত স্লোগান তুলতে হবে আমাদের, প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে হবে। কোটি কোটি শিশু শুধুমাত্র বিত্তের অভাবে হারাবে তাদের অবশ্যপ্রাপ্য এ আর হতে দেওয়া যায় না। স্কুল খুলতে হবে, কলেজ খুলতে হবে। শিক্ষাঙ্গনই একমাত্র করোনার আঁতুড়ঘর নয়। বাকি সব কিছু যখন স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারে, শিক্ষাও তার স্বাভাবিক গতিপথে ফিরুক। শৈশব ফিরিয়ে দেওয়া হোক। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যদি বাকি সবটাই চলতে পারে, তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে অবশ্যই আবার পড়াশোনা শুরু করা যেতে পারে। ব্যাস, এইটুকুই।