সেলুলয়েডের জওহরলাল
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম একজন পুরোধা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জীবন নিয়ে চর্চা হয়েছে বিস্তর। ইতিহাসবেত্তা-রাজনীতিবিদ-গবেষক-সমালোচকেরা নেহরুর রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রচুর কাটাছেঁড়া করেছেন এবং সেই সুবাদে কলম পেষাও হয়েছে প্রভূত পরিমাণে। তবে নেহরুকে নিয়ে চর্চা শুধু দু'মলাটের মধ্যে থেমে থাকেনি, রুপোলি পর্দাতেও এসেছে বারবার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিনেতা জওহরলালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এঁদের মধ্যে কোনও কোনও অভিনেতা আবার শুধু পণ্ডিত নেহরুর চরিত্রে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বড়ো পর্দার পাশাপাশি ছোটো পর্দাতেও কাজ হয়েছে জহরলাল নেহরুর জীবন নিয়ে।
পর্দার নেহরুদের মধ্যে সম্ভবত সবথেকে বেশি জনপ্রিয় ও আলোচিত হলেন রোশন শেঠ। তিনি একাধিকবার নেহরু চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৮২ সালে রিচার্ড অ্যাটেনবরোর বিখ্যাত 'গান্ধী' চলচ্চিত্রে রোশন শেঠ প্রথমবার পণ্ডিত নেহেরুর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে বেন কিংসলে ছিলেন তাঁর সহ-অভিনেতা। ১৯৮৮ সালে নেহরুর আত্মজীনীমূলক গ্রন্থ 'দ্য ডিসকভারি অফ ইণ্ডিয়া' অবলম্বনে সরকারি উদ্যোগে একটি টেলিভিশন সিরিজ বানানো হয়, যেটি সম্প্রচারিত হয়েছিল দূরদর্শন চ্যানেলে। এই সিরিজটি পরিচালনা করেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। 'গান্ধী' ছবিতে রোশন শেঠ বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর এই সিরিজেও তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল নেহরু চরিত্রের জন্য। ওম পুরি, ইরফান খান, ইলা অরুণ-এর মতো শিল্পীরাও এখানে অভিনয় করেছিলেন। এই সিরিজ এবং রোশন শেঠের অভিনয় - দুইই যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সে সময়ে।
এরপর ১৯৯০ সালে জহরলাল নেহরুর জীবন আশ্রয় করে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, নাম 'নেহরু : দ্য জুয়েল অফ ইণ্ডিয়া'। এই সিনেমায় জহরলালের চরিত্রে অভিনয় করেন প্রতাপ শর্মা, কমলা নেহেরুর চরিত্রে অভিনয় করেন তনুজা। এছাড়া অনুপম খের, গিরিশ কারনাডের মতো নামজাদা অভিনেতারা অভিনয় করেছিলেন এই সিনেমায়।
সিরিজটি চলেছিল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, ১৯৮৮ সালের জুন মাস থেকে ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত।
১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জীবন নিয়ে তৈরি 'সর্দার' ছবিতে জওহরলাল নেহরুর চরিত্র এসেছিল। এই চরিত্রে অভিনয় করেন বেঞ্জামিন গিলানি। বল্লভভাই-এর চরিত্রে অভিনয় করেন পরেশ রাওয়াল, গান্ধীজির চরিত্রে অভিনয় করেন অন্নু কাপুর। এছাড়া সুহাসিনী মুলে, আশিস বিদ্যার্থী অভিনয় করেছিলেন ছবিটিতে।
এরপর ২০০২ সালে মুক্তি পায় রাজকুমার সন্তোষীর 'দ্য লেজেন্ড অফ ভগৎ সিং', যার নামভূমিকায় ছিলেন অজয় দেবগণ। এখানে নেহরুর চরিত্রে অভিনয় করেন সৌরভ দুবে। এই সিনেমায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিলো। ২০০৪ সালে মুক্তি পায় বিজয় ঘাটগে পরিচালিত ছবি 'শোভাযাত্রা', এই ছবিতে নেহরু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ডেনজিল স্মিথ। ছবিটি বা অভিনয় কোনওটাই খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি।
আরও পড়ুন : সেলুলয়েডের ‘মহাত্মা’রা
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা পরিচালিত ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ ছবিতে জওহরলালের চরিত্রে অভিনয় করেন বলিউডের অতিপরিচিত মুখ দিলীপ তাহিল। পরের বছর শ্যাম বেনেগালের টিভি সিরিজ সংবিধান-এও তিনি এই চরিত্রে অভিনয় করেন।
এছাড়াও জহরলাল নেহেরুর জীবন কেন্দ্র করে আরো একটি টেলিভিশন সিরিজ প্রদর্শিত হয়েছিল ২০১৩ সালেই। একটি জনপ্রিয় বেসরকারি চ্যানেলে সম্প্রচারিত এই সিরিজটির নাম ছিল 'প্রধানমন্ত্রী'। এই সিরিজে নেহরু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন 'দ্য লেজেণ্ড অফ ভগৎ সিং' খ্যাত সৌরভ দুবে। এই সিরিজ চলেছিল এক বছরের কিছু কম সময় ধরে, ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই সিরিজও দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়েছিলো।
২০১৯ সালে মুক্তি পায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য-নির্ভর একটি বাংলা ছবি 'গুমনামী'। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিতে নামভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি জওহরলাল নেহরুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সঞ্জয় গুরবক্সানি।