সেলুলয়েডের ‘মহাত্মা’রা
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে নিয়ে দিস্তে দিস্তে বই যেমন লেখা হয়েছে, প্রচুর নিউজপ্রিন্ট যেমন খরচ হয়েছে, তেমনই বহু ছায়াছবিতেও এসেছে তাঁর চরিত্র। ছবি তাঁকে নিয়েই হোক বা সমকালীন অন্য কোনও ব্যক্তি বা বিষয় নিয়ে, মহাত্মা গান্ধী স্ক্রিনে এসেছেন এমন ছবির সংখ্যা নেহাত কম না। ভারতীয় ছবি তো বটেই, বেশ কিছু অ-ভারতীয় ছবিও রয়েছে এই তালিকায়। বিভিন্ন সময়ে কিংবদন্তী অভিনেতাদের পাশাপাশি অনেক স্বল্প-পরিচিত অভিনেতাও গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নাইন আওয়ারস টু রামা’ নামে একটি ব্রিটিশ ফিল্মের বিষয় ছিল মহাত্মাকে হত্যা করার আগে নাথুরামের মানসিক অবস্থা। স্ট্যানলি উলপার্টের একই নামের উপন্যাস থেকে ছবিটি তৈরি হয়েছিল। মার্ক রবসনের পরিচালনায় এ ছবিতে গান্ধী ও নাথুরামের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে জে. এস. কাশ্যপ এবং হর্স্ট বুশলজ।
স্যার রিচার্ড অ্যাটেনবরোর বহু-চর্চিত ‘গান্ধী’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে, যাতে মহাত্মার ভূমিকায় স্যার বেন কিংসলে-র অভিনয় প্রবাদের পর্যায়ে চলে গেছে। সঙ্গে মার্টিন শীন, এডওয়ার্ড ফক্স, ট্রেভর হাওয়ার্ড, জন মিলসের মতো অভিনেতাদের পাশপাশি ছিলেন সৈয়দ জাফরি, ওম পুরী, অমরীশ পুরী, হাবিব তনবীর, শ্রীরাম লাগু, পঙ্কজ কাপুর, নীনা গুপ্তা, সুপ্রিয়া পাঠক, দিলীপ তাহিল, মোহন আগাসের মতো ভারতীয় অভিনেতারাও। সুরাবর্দীর ভূমিকায় ছিলেন উৎপল দত্তের লিটল থিয়েটার গ্রুপ-খ্যাত বিশিষ্ট বাঙালি অভিনেতা শেখর চট্টোপাধ্যায়। সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ইত্যাদি নানা বিভাগ মিলিয়ে মোট আটটা অস্কার জিতেছিল এই ছবি।
‘দ্য মেকিং অব দ্য মহাত্মা’ (১৯৯৬) ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ প্রযোজনা। ফতিমা মীরের উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ফতিমাই। ছবিটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শ্যাম বেনেগল। গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রজিত কাপুর।
গান্ধীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমল হাসানের বিখ্যাত ও বিতর্কিত ঐতিহাসিক ফিকশন ছবি ‘হে রাম’ ২০০০ সালে একইসঙ্গে তামিল ও হিন্দি ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল। সকেত রামের ভূমিকায় কমল হাসান, আমজাদ আলি খানের ভূমিকায় শাহরুখ খান, গান্ধীর ভূমিকায় নাসিরুদ্দীন শাহ ছাড়াও অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন ওম পুরী, হেমা মালিনী, রানি মুখোপাধ্যায়, গিরিশ কারনাড, সৌরভ শুক্ল প্রমুখ।
২০০০ সালেই জব্বার পটেলের পরিচালনায় ভীমরাও আম্বেদকরের একটি বায়োপিক মুক্তি পায়। নাম ‘ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর’। মলয়ালি ইন্ডাস্ট্রির তারকা মামুত্তি অভিনয় করেন আম্বেদকরের ভূমিকায়। গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেন মোহন গোখলে।
২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাভারকারের বায়োপিক ‘বীর সাভারকর’-এ গান্ধীর ভূমিকায় ছিলেন বলিউডের পরিচিত মুখ সুরেন্দ্র রাজন। পরের বছর সুরেন্দ্র রাজন আবার গান্ধীর চরিত্রে মুখ দেখান রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় অজয় দেবগণ অভিনীত ‘দ্য লেজেন্ড অব ভগত সিং’ ছবিতে। ২০০৪ সালে শ্যাম বেনেগলের বিখ্যাত নেতাজী-জীবনীচিত্র ‘সুভাষচন্দ্র বোস : দ্য ফরগটেন হিরো’ ছবিতেও সুরেন্দ্রই গান্ধীর অভিনয় করেন। এখানেই শেষ নয়। গত বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে বাঙালি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ‘গবেষণামূলক’ ছবি ‘গুমনামী’তে নেতাজীর চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বেছে নিয়ে চমক দিয়েছিলেন। সেই সৃজিতও গান্ধী চরিত্রে ঝুঁকি না নিয়ে সুরেন্দ্রকেই বেছে নিয়েছেন। ফলে সুরেন্দ্র রাজনই একমাত্র অভিনেতা যিনি বড়পর্দায় মোট চারবার মহাত্মার চরিত্রে অভিনয়ের বিরল কৃতিত্ব দখলে রেখেছেন।
২০০৬ সালে রাজকুমার হিরানির পরিচালনায় সঞ্জয় দত্ত ও আরশাদ ওয়ারসি-অভিনীত ‘লগে রহো মুন্নাভাই’ ছবিতে গান্ধীর ‘ভূতের’ চরিত্রে অভিনয় করেন দিলীপ প্রভভালকর। গান্ধীর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের পথকে সহজপাচ্য ও তরলায়িত করে, বলিউডি মশলায় জারিত করে পরিবেশন করা এই ছবিটি প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
ফিরোজ আব্বাস খানের পরিচালনায় ‘গান্ধী, মাই ফাদার’ (২০০৭) ছবিটির বিষয় মহাত্মার সঙ্গে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হরিলালের সম্পর্কের সমীকরণ। দিনকর যোশীর একটি উপন্যাসকে ভিত্তি করে তৈরি এই ছবিটির প্রযোজনা করেন অনিল কাপুর। গান্ধীর ভূমিকায় দর্শন জরিওয়ালা এবং হরিলালের ভূমিকায় অক্ষয় খান্নার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।
গান্ধী-হিটলার সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড হিটলার’ নামে ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বলিউড ছবি বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। রাকেশ রঞ্জন কুমারের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় এ ছবি একেবারেই সাফল্য পায়নি। ইতিহাসের যথেচ্ছ বিকৃতির অভিযোগ তুলে সমালোচকেরাও ছবিটিকে তুলোধোনা করেছিলেন। তবে ছবির কাস্টিং কিন্তু বেশ কৌতূহলপ্রদ। হিটলারের ভূমিকায় রঘুবীর যাদব এবং ইভা ব্রাউনের ভূমিকায় নেহা ধুপিয়ার নাম চমকে দেবার মতো। গান্ধীর চরিত্র করেছিলেন অভিজিত দত্ত।
২০১২ সালে দক্ষিণ ভারতীয় পরিচালক এ. বালাকৃষ্ণণ ‘ওয়েলকাম ব্যাক গান্ধী’ নামে একটি ফ্যান্টাসি ছবি করেন যেখানে দেখানো হয়, আজকের দিনে গান্ধী ফিরে এলে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারত। এখানে গান্ধীর ভূমিকায় ছিলেন এস. কনগরাজ।
বিজয় তেন্দুলকরের চিত্রনাট্য ও কেতন মেহতার পরিচালনায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বায়োপিক ‘সর্দার’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। তাতে নামচরিত্রে পরেশ রাওয়াল ও গান্ধীর চরিত্রে অন্নু কাপুর অভিনয় করেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পরিচালক গুরিন্দর চাড্ডার পরিচালনায় ২০১৭ সালে মুক্তি পায় ‘ভাইসরয়’জ হাউজ’ নামে একটি পিরিয়ড ছবি। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের সময়কাল নিয়ে তৈরি এ ছবিতে মাইকেল গ্যাম্বন, হিউ বনভিল, গিলিয়ান অ্যান্ডারসনের মতো অভিনেতাদের পাশাপাশি গান্ধীর ভূমিকায় ছিলেন নীরজ কবি। এছাড়া ওম পুরী, হুমা কুরেশি, মনীশ দয়াল প্রমুখ আরও কয়েকজন ভারতীয় অভিনেতাও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডকে বিষয় করে ২০১৯ সালে একটি ইন্দো-ব্রিটিশ পলিটিকাল থ্রিলার মুক্তি পায়। করিম ত্রাদিয়া ও পঙ্কজ সেহগলের পরিচালনায় এ ছবিতে গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেন জেসাস সান্স। অন্যান্য ভূমিকায় স্তিভন লাং, ওম পুরী, ভিনি জোন্সের মতো অভিনেতারা ছিলেন।
কভারের ছবিঃ (ঘড়ির ক্রমানুসারে) বেন কিংসলে, রজিত কাপুর, মোহন গোখলে, দিলীপ প্রভভালকর
#Bengali #Article #Mahatma #Mohandas Karamchand Gandhi #Gandhiji #Silverscreen #Indian Actor #Western Actor #Nine Hours to Rama #J.S.Kashyap #Gandhi #Richard Attenborough #Ben Kingsley #The Making of The Mahatma #Rajat Kapoor #Hey Ram #Nasiruddin Shah #Dr. Babasaheb Ambedkar #Mohan Gokhle #Surendra Rajan #The Legend of Bhagat Singh #Bose: The Forgotten Hero #Veer Savarkar #Lage Raho Munnabhai #Dilip Prabhavalkar #Gandhi My Father #Harilal Gandhi #Dear Friend Hitler #Abhijit Dutta #Welcome back Gandhi #Sardar #Annu Kapoor #Viceroy's House #Neeraj Kabi #Jesus Sans #বাংলা #ফিচার #গান্ধিজি #বলিউড #হলিউড #নামভূমিকায়