টেলিফোন, তুমি কার? পেটেন্ট নিয়ে লড়াই উঠেছিল তুঙ্গে
কুইজ বা জেনারেল নলেজের বইয়ে টেলিফোনের আবিষ্কর্তা হিসেবে রয়েছে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের নাম। কিন্তু একটু এদিক-ওদিক হলে তাঁর জায়গায় লেখাই থাকতে পারত অন্য একজনের নাম। টেলিফোন আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিয়ে কাজিয়া পৌঁছে গিয়েছিল চরম স্তরে। ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকজন নামজাদা বিজ্ঞানী শামিল হয়েছিলেন টেলিফোনের পেটেন্ট দখল নেবার যুদ্ধে। এমনকি, আশ্চর্যজনকভাবে একই দিনে দুই উদ্ভাবক পেটেন্ট অফিসে জমা করেন তাঁদের দাবিপত্র। দিনটি ছিল ১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
টেলিফোন তৈরির প্রথম প্রয়াস গ্রাহাম বেলের আগে করেছিলেন স্যামুয়েল মর্স। খুব কম খরচে তিনি টেলিফোনের একটা প্রাথমিক মডেল বানিয়েছিলেন। 'মর্স কোড'-এর মাধ্যমে দূরে দূরে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল। পরে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত মডেল তৈরি করার কাজ শুরু করেন গ্রাহাম বেল। তবে মজার কথা, ঠিক একই সময় একই বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন আরেকজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। এলিশা গ্রে। আরও মজার কথা, কাকতালীয়ভাবে ঠিক একই দিনে পেটেন্ট অফিসে জমা পড়ে দুজনেরই আবেদন। প্রযুক্তির ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। কার আবেদন আগে জমা পড়েছিল? নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তাঁরা কি জানতেন একে অপরের গবেষণার ব্যাপারে? তাঁদের চিঠিপত্র থেকে যেটুকু আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাঁরা জানতেন।
যা-ই হোক, টেলিফোনের দখল এই নিয়ে তর্কবিতর্ক গড়ায় অনেকদূর। পেটেন্ট-পরীক্ষক জেনাস উইলবার শেষমেশ রায় দিয়েছিলেন বেলের পক্ষে। তবে এই রায় নিয়েও নানা কানাঘুষো রয়েছে। উইলবার নাকি মদ্যাসক্ত ছিলেন। বেলের উকিল মার্সেলাস বেইলি নাকি বোতল ঘুষ দিয়ে পেড়ে ফেলেছিলেন বিচারকমশায়কে। তবে এলিশা গ্রে-কে পেটেন্টের ময়দান থেকে হটিয়ে দেবার পরেও কিন্তু সহজে নিষ্কণ্টক হয়নি বেলের দাবি। বিখ্যাত মার্কিন আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসনও দাবি করেছিলেন টেলিফোনের পেটেন্ট। সারাজীবনে ২৩০০-রও বেশি পেটেন্টের মালিকানা পাওয়া এডিসনকে পথ থেকে সরাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির তাস খেলতে হয়েছিল বেলকে। ব্রিটিশ সরকারকে তিনি বোঝাতে পেরেছিলেন যে এডিসন লন্ডনে অন্যায় ব্যবসা ফেঁদে বসছে। সে-সময়ের টেলিফোন বিষয়ক যাবতীয় মামলার নথিপত্র ঘাঁটলে এক বিস্ময়কর হিসেব পাওয়া যায়। জানা যায়, প্রায় ৬০০ মামলায় জড়িয়ে পড়তে হয়েছিলে বেলকে। সব জায়গায় জয়ী হয়ে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে 'বেল টেলিফোন কোম্পানি'। ১৮৮৫ সালে এই কোম্পানি নাম বদলে হয় American Telephone and Telegraph Company (AT&T)। অমরত্বের পথে অনেক কাঁটা থাকে। সেসব কাঁটা সরানোর নেপথ্য কাহিনিগুলোও খুব পরিচ্ছন্ন বা নির্দোষ নয় সবসময়। টেলিফোনের পেটেন্ট-বিতর্ক সেকথাই প্রমাণ করে।
..................
#Alexander Graham Bell #Elisha Gray #Telephone