ত্রিপুরা রাজপরিবার ও জগদীশচন্দ্র
১. ১৮৮২ সালে স্বাধীন পার্বত্যপ্রদেশ ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য তাঁর স্ত্রী ভানুমতীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়লে একটি কাব্যগ্রন্থ তাঁকে আবার কাজে উৎসাহ ফিরিয়ে এনে দিয়েছিল। বইটির লেখক একুশ বছরের তরুণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর সেই কাব্যগ্রন্থটির নাম ‘ভগ্নহৃদয়’। রাজা তাঁর কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য দূত হিসেবে কলকাতায় কবির কাছে পাঠিয়েছিলেন তাঁর সচিব রাধারমণ ঘোষকে কিছু উপহারসহ, সেই প্রথম রবীন্দ্রনাথের কাব্য-রচনার স্বীকৃতিলাভ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতিতে এই ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন যথেষ্ট শ্রদ্ধার সঙ্গে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘প্রথম আলো’র সূচনাকাণ্ড এই ত্রিপুরা রাজবাড়ি থেকেই। তাঁর উপন্যাসটির শেষে যে ‘লেখকের কথা’, সেখানেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন ত্রিপুরা রাজপরিবার নিয়ে তাঁর আগ্রহের কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে, বা বলা ভালো কলকাতার ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ত্রিপুরা রাজবাড়ির যে নিবিড় সম্পর্ক, তা একরৈখিক নয় মোটেই, আর সেই বহুবর্ণ রেখাচিত্রে জগদীশচন্দ্র বসু একটি বিশিষ্ট রং।
ত্রিপুরা রাজপরিবারের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির যোগাযোগ এই ঘটনার বেশ কিছু কাল আগে থেকেই। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের কাছে এসেছিলেন বীরচন্দ্রের বাবা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য, বিশেষ এক রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে। গুরুত্বপূর্ণ সেই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিলেন প্রিন্স। রাজার সভাসদ্ কর্নেল মহিমচন্দ্র দেববর্মার লেখা ‘ত্রিপুর দরবারে রবীন্দ্রনাথ’ গদ্য থেকে জানা যায় যে তিনি নিজেও ঠাকুরবাড়িতে আসতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইপো বলেন্দ্রনাথের সহপাঠী হওয়ার সুবাদেই। তখন তিনি পড়াশুনো করেন কলকাতায়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও তাঁর এই সময়েই নিশ্চয়ই আলাপ হয়েছিল এবং পরে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ-পারিষদ হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার সূত্রপাত ঘটে। এই ঘনিষ্ঠতা স্থায়ী হয়েছিল ১৯২৩-এ মহিম ঠাকুরের মৃত্যু অবধি, প্রায় চারটি দশক। রবীন্দ্রনাথও ত্রিপুরায় প্রথমবার গিয়ে উঠেছিলেন তাঁর বাড়িতেই। বস্তুত রাজার সঙ্গে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যোগাযোগের একটা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিলেন কর্নেল মহিম ঠাকুর।
১৮৯৬ সালে কলকাতায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়া বীরচন্দ্র মাণিক্যের আকস্মিক মৃত্যুর পর ত্রিপুরার সিংহাসনে বসেন তাঁর সুপুত্র রাধাকিশোর মাণিক্য। বাবার মতো বিদ্যাবুদ্ধিতে দড় না হলেও তিনি ছিলেন সজ্জন, গুণীর কদর করতে জানতেন। রাজা হয়েই তিনি বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিলেন ততদিনে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। আর ‘ক্রমে ক্রমে রবিবাবুর যোগে স্যার আশুতোষ চৌধুরী, স্যার জগদীশ বসু, মহারাজা স্যার যতীন্দ্রনাথ, নাটোরের মহারাজ জগদিন্দ্রনাথ প্রভৃতি বঙ্গের খ্যাতনামা মহাপুরুষেরা রাধাকিশোরের বন্ধুতার জালে আসিয়া ধরা দিলেন।’(‘ত্রিপুর দরবারে রবীন্দ্রনাথ’, মহিম ঠাকুর)
জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে রাধাকিশোর মাণিক্যের আলাপ এক বিশেষ ঘটনার মধ্যে দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্য জগদীশচন্দ্র একবার তাঁর কলেজে গবেষণার ফলাফল দেখাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। মহিমচন্দ্রের লেখা থেকেই দেখি আবার— “একবার কলিকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র রবিবাবু প্রভৃতি বন্ধুদিগকে স্বীয় গবেষণার ফলাফল দেখাইবার বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। তখনও রাধাকিশোরের জগদীশবাবুর সহিত সাক্ষাৎ পরিচয় ছিল না। মহারাজ এ খবর পাইয়া বিনা নিমন্ত্রণে উক্ত কলেজের বিজ্ঞানাগারে যথাসময়ে উপস্থিত হইয়া সকলকে চমৎকৃত করিয়া দিয়াছিলেন। জগদীশবাবু ইংরেজীতে স্বীয় গবেষণার ফলাফল ইত্যাদি ব্যাখ্যা করিতেছিলেন। মহারাজ ইংরেজীতে সুশিক্ষিত ছিলেন না বলিয়া সম্পূর্ণভাবে তাহার বক্তব্য বুঝিয়েছিলেন কিনা অতি সঙ্কোচের সহিত জিজ্ঞাসা করায়, মহারাজ স্বয়ং দু-একটি Experiment নিজেই সম্পন্ন করিয়া দেখাইলেন এবং বলিলেন, “বাংলাতে আপনার আবিষ্কার সম্বন্ধে যে সব প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তাহা আমি পড়িয়াছি এবং বিজ্ঞান আলোচনায় আমি বিশেষ আনন্দ পাই, আমিও আপনার একজন ছাত্র।” জগদীশবাবু বলেন, “M.A., M.Sc. ক্লাসের ছাত্রদের এ তথ্যগুলি বুঝাইতে গলদঘর্ম্ম হইতে হয়, মহারাজ কেমন সুন্দরভাবে এবং সহজে এসব বুঝিতে পারিয়াছেন।”
এই ঘটনা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের পৌষ মাস অর্থাৎ ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসের। ততদিনে জগদীশচন্দ্র তাঁর গবেষণার সাফল্যের সুবাদে যথেষ্ট পরিচিত, তবু এইভাবে বাইরের মানুষজনকে কলেজের পরীক্ষাগারে প্রবেশ করানোর জন্য তাঁকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শুনতে হয় গঞ্জনা। ব্যথিত রবীন্দ্রনাথ তখন থেকেই মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন যেন জগদীশচন্দ্র গড়ে তুলতে পারেন নিজের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করবার উপযুক্ত একটি গবেষণাগার । যেখানে থাকবে না কোনও কর্তৃপক্ষের চোখরাঙানি। কিন্তু সে প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হতে তখনও প্রায় সতেরো বছর বাকি।
জগদীশচন্দ্রের জন্য গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথ চাঁদা তুলে কুড়ি হাজার টাকা সংগ্রহ করে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন, এর মধ্যে দশ হাজার বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে, বাকি দশ হাজার চাইবেন রাজার কাছে। কিন্তু রাজা এই খবর শুনে কবিকে বলেন, ‘এ বেশ আপনাকে সাজে না, আপনার বাঁশী বাজানোই কাজ, আমরা ভক্তবৃন্দ ভিক্ষার ঝুলি বহন করিব। প্রজাবৃন্দের প্রদত্ত অর্থই আমার রাজভোগ যোগায়। আমাদের অপেক্ষা জগতে কে আর বড় ভিক্ষুক আছে? এ ভিক্ষার ঝুলি আমাকেই শোভা পায়, আমাকেই ইহা পূর্ণ করিতে হইবে।’
অথচ তখন রাধাকিশোরের রাজকোষের হাল বেশ করুণ। রাজ্যে প্রবল ভূমিকম্পে তাঁর প্রাসাদ ধূলিস্যাৎ, তার ওপর যুবরাজ বীরেন্দ্রকিশোরের বিয়ের সময় আসন্ন। টানাটানির মধ্যেও প্রিয় বিজ্ঞানীকে অর্থসাহায্য করতে পিছপা হননি রাধাকিশোর। তাঁর মতে— ‘বর্ত্তমানে আমার ভাবী বধূমাতার দু’এক পদ অলংকার নাই বা হইল তৎপরিবর্ত্তে জগদীশবাবু সাগর পার হইতে যে অলংকারে ভারতমাতাকে ভূষিত করিবেন তাহার তুলনা কোথায়?’
এই অর্থ পুরোটাই রাজা দিয়েছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত খরচের তহবিল থেকে, যা কোথাও কোনও হিসেবে কখনও দেখানো হয়নি। ‘জগদীশচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর (রাজার) মৃত্যুর পর এ ব্যাপারে আলোকপাত না করতেন তাহলে উত্তরপুরুষ কোনকালেও জানতে পারত না ভারতীয় বিজ্ঞানসাধনায় নীরব দাতা এই রাজপুরুষের মহিমান্বিত ভুমিকার কথা’। (‘উত্তরপূর্ব ভারত ও রবীন্দ্রনাথ’, বিকচ চৌধুরী, এবং মুশায়েরা)
তবে এখানেই শেষ নয়, এরপরেও রবীন্দ্রনাথ বন্ধুর জন্য হাত পেতেছেন রাজার কাছে। ১৯০০ সালের জুলাই মাসে বৈজ্ঞানিক সফরে দ্বিতীয়বারের জন্য ইউরোপ যাত্রা করেন জগদীশচন্দ্র। প্যারিসে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে পদার্থবিজ্ঞানের সম্মেলনে আমন্ত্রিত হিসেবে তাঁর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা প্রচার করাই ছিল এই সফরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। তবে এই সফরের অনুমতি আদায় করা নিয়েও তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারি কর্তাব্যক্তিদের বেশ টানাপোড়েন চলে। তাঁকে মাত্র পনেরো মাসের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। তবে সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তাঁর গবেষণার উদ্দেশ্যেই আরও বেশ কিছুকাল বিলেতে থেকে যাওয়াটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। এই সময়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান রবীন্দ্রনাথ। যদিও প্রাথমিকভাবে সে দেশ থেকে রমেশচন্দ্র দত্ত কবিকে আলাদাভাবে চিঠি লিখে একটি দু’লক্ষ টাকার তহবিল তৈরির জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তবে সেই অনুরোধের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের নিজের মনের মধ্যেও জেগে ছিল বন্ধুকে যতটা সম্ভব সাহায্য করবার নিবিড় বাসনা। আর এই কাজে তিনি সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য হিসেবে মনে করেছিলেন রাধাকিশোর মাণিক্যকে। এইসময়কার বহু চিঠিপত্রে ধরা রয়েছে বন্ধুকে সাহায্য করবার জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টা জারি রাখবার ধারাবাহিকতা।
যেমন, একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ রাজাকে লিখছেন (২৪ শ্রাবণ, ১৩০৮)— ‘জগদীশবাবুর জন্য কিছু করিবার সময় অগ্রসর হইতেছে। তাঁহার বিজ্ঞানালোচনার সঙ্কটকাল উপস্থিত হইয়াছে। তিনি যে উচ্চের দিকে উঠিতেছিলেন পরাধীনতা ও বাহিরের বাধায় তাঁহাকে হঠাৎ নিরস্ত করিলে আমাদের পক্ষে ক্ষোভ ও লজ্জার সীমা থাকিবে না। মহারাজ আপনাকে স্পষ্ট কথা বলি— আমি যদি দুর্ভাগ্যক্রমে পরের অবিবেচনাদোষে ঋণজালে আপাদমস্তক জড়িত হইয়া না থাকিতাম তবে জগদীশবাবুর জন্য আমি কাহারও দ্বারে দণ্ডায়মান হইতাম না, আমি একাকী তাঁহার সমস্ত ভার গ্রহণ করিতাম। দুরবস্থায় পড়িয়া আমার সর্ব্বপ্রধান আক্ষেপ এই যে দেশের হিতকার্য্যের জন্য পরকে উত্তেজনা করা ছাড়া আমার দ্বারা আর কিছুই হইতে পারে না। মহারাজের উদার হৃদয়, লোকহিতৈষা মহারাজের পক্ষে স্বাভাবিক, সেই গুণে আমি মহারাজের নিকট একান্ত আকৃষ্ট হইয়া আছি। জগদীশবাবুর জন্য আমি প্রত্যক্ষভাবে মহারাজের নিকট দরবার করিতে ইচ্ছুক— এজন্য আমি আগরতলায় যাইতে প্রস্তুত’(‘উত্তরপূর্ব ভারত ও রবীন্দ্রনাথ’)
মনে রাখা দরকার এই চিঠি রবীন্দ্রনাথ যে দিন লিখছেন, সেদিনই তাঁর মধ্যম কন্যা রেণুকার বিয়ে, তিনি নিজে রয়েছেন চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে!
রাজার পাঠানো দশ হাজার টাকা রবীন্দ্রনাথ বিলেতে বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন, পরে রাজা আরও দশ হাজার টাকা দেবেন এমনটা তাঁকে জানিয়েছিলেন। অন্য কিছু কাজে তিনি আর্থিক সঙ্কটে না থাকলে পঞ্চাশ হাজার অব্দি দিতে পারতেন, এমনটাও জানা যাচ্ছে বন্ধুকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি থেকে। বন্ধুর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি অক্টোবর বা নভেম্বর ১৯০১-এর দিকে ত্রিপুরা গিয়েছিলেন। রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করেই বন্ধুর অসুবিধার কথা বিস্তারিতভাবে জানিয়ে সাহায্য প্রার্থনার উদ্দেশ্যেই তাঁর সেবারের ত্রিপুরাগমন।
এরপরে ১৯০২ সালের ৩১ জুলাই রাজার দেওয়া আরও পাঁচ হাজার টাকা তিনি জগদীশচন্দ্রকে পাঠিয়েছিলেন।
২.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরায় এসেছিলেন মোট সাত বার। প্রথমটি ১৮৯৯ সালের মার্চ মাসে, তখনও রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য জীবিত। এরপরে ১৯০৬ সালের মধ্যে আসেন আরও চারবার, এবং রাধাকিশোর মাণিক্যের মৃত্যুর পরেও দু-বার। এবং শেষবার আসেন ১৯২৬ সালে, এরপরেও তিনি চোদ্দ বছর জীবিত ছিলেন কিন্তু কেন আর আসেননি, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আপাতত প্রয়োজন নেই।
তবে জগদীশচন্দ্র ত্রিপুরায় এসেছিলেন ১৯২৭ সালে। রাধাকিশোরের পৌত্র বীরবিক্রম মাণিক্যের রাজ্য-অভিষেক উপলক্ষ্যে। সেবারে রবীন্দ্রনাথও আমন্ত্রিত ছিলেন, কিন্তু আসেননি। জগদীশচন্দ্রের সেই প্রথম এই দেশে আসা। ততদিনে রাধাকিশোর মাণিক্য প্রয়াত, সুতরাং জগদীশচন্দ্র মনে করলেন, এবার তাঁর সেই ঋণস্বীকারে মুক্তকণ্ঠ হতে বাধা নেই। তিনি বলেন— ‘মহারাজ রাধাকিশোরের জীবদ্দশায় আমি তাঁর ঋণ স্বীকার করতে পারিনি তাঁর নিষেধের জন্যে। আজ সেই মহান রাজার অসামান্য বদান্যতার কথা সকলকে জানিয়ে দেবার সুযোগ ঘটলো বলে আমি আনন্দিত। আমি আজ সকলকে মুক্তকণ্ঠে আমার অসীম কৃতজ্ঞতার কথা বলতে চাই।’ (‘উত্তরপূর্ব ভারত ও রবীন্দ্রনাথ’)
তবে জগদীশচন্দ্র এই ঋণ স্বীকার আরও একবার করেছিলেন বছর দশেক আগেই, তাঁর বসু বিজ্ঞান মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সেবারে তিনি বলেছিলেন, দ্বিতীয়বারের ইউরোপ প্রবাসের সময় তাঁর গবেষণাকে সকলের সামনে প্রকাশ করবার কাজে বেশিদিন থাকবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য তিনি পেয়েছিলেন পরলোকগত রাজার কাছ থেকেই।
পরাধীন দেশের এক বিজ্ঞানীর গবেষণায় এইভাবেই সহায়তা এসেছিল এক ক্ষুদ্র স্বাধীন দেশীয় রাজ্যের নৃপতির কাছ থেকে, যা খুব বেশি আলোচিত হয়না জগদীশচন্দ্রের জীবনীতে।
(ক্রমশ)