ইনসুলিনের গল্প
বর্তমান পরিস্থিতিতে মহামারি, অতিমারি শব্দগুলো আমাদের রোজনামচার সঙ্গে জুড়ে গেছে। অধুনা এই মহামারির বেশ কিছু বছর আগে থেকেই আরেক মারণ রোগ যে তলে তলে ডালপালা বিস্তার করে চলেছে, তা বোধহয় আমরা জেনেও না জেনে আছি। ডায়াবেটিস- দীর্ঘদিন পর্যন্ত যে রোগ মানুষকে ঠেলে দিয়েছে নিশ্চিত অঙ্গবিকলন বা ক্রমশ মৃত্যুর দিকে; সেই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের এক বিরাট আশীর্বাদ।
স্যার ফ্রেডরিক গ্র্যান্ট ব্যান্টিং, তাঁর পরিচিতি ইনসুলিনের সহ-আবিষ্কারক হিসেবে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে ক্ষরিত এই ইনসুলিন হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রাসাম্য বজায় রাখে। ১৯২১ সালে ব্যান্টিং ও তাঁর সহকর্মী চার্লস বেস্ট টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাকলিয়ডের গবেষণারে ইনসুলিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। অগ্ন্যাশয়ের 'আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস' গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এই ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়, যার কোনও চিকিৎসা তখনও পর্যন্ত প্রচলিত ছিল না। এই পরীক্ষায় ব্যান্টিং সুস্থ কুকুরের দেহ থেকে ইনসুলিন সংগ্রহ করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত কুকুরের দেহে বাইরে থেকে ওই ইনসুলিন প্রয়োগ করেন; কয়েকদিনের মধ্যে দেখা যায় আক্রান্ত কুকুরটি সুস্থ হয়ে উঠেছে। এরপর ব্যান্টিং ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের দেহে একইভাবে বাইরে থেকে ইনসুলিন প্রয়োগ করেন এবং এক্ষেত্রেও দেখা যায় রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করে ব্যান্টিং চিকিৎসা জগতে এক নতুন দিশা দেখালেন।এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য ১৯২৩ সালে ব্যান্টিং যুগ্মভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
পেশায় চিকিৎসক ব্যান্টিং-এর কৃতিত্ব শুধু নোবেল প্রাপ্তিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। কর্মজীবনের শুরুতে ব্যান্টিং সামরিক বাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সাহসিকতার সঙ্গে সেবাকার্যের জন্য তিনি সামরিক ক্রস পান ।
যুদ্ধশেষে দেশে ফিরে চিকিৎসা বৃত্তিতে মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীকালে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত 'ব্যান্টিং অ্যান্ড বেস্ট ডিপার্টমেন্টে অফ মেডিকেল রিসার্চ' বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। এছাড়াও ১৯৩৪ সালে তিনি 'নাইট কমান্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার' উপাধি পান। সারাজীবনে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট সাতটি সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি পান। আজীবন কর্মোদ্যোগী এবং কৃতী এই মানুষটির মৃত্যু হয় সামরিক দলে কাজ করাকালীন, একটি শোচনীয় বিমান দুর্ঘটনায়।