ডিএনএ গবেষণার জাদু, ফিরে আসছে বিলুপ্ত ডোডো পাখি?
পুরনো বা বিলুপ্ত জিনিসকে তুলনা করা হয় বহু বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া এই পাখির সঙ্গে। সেই ডোডো পাখির কি এবার প্রত্যাবর্তন ঘটতে চলেছে? সাম্প্রতিক ডিএনএ গবেষণার কল্যাণে অদূর ভবিষ্যতে সম্ভবত এমন ঘটনা সত্যি হতে চলেছে।
ডোডোপাখির বাসভূমি ছিল মরিশাস দ্বীপে। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের বেশ কিছু ডাচ ঔপনিবেশিকের বর্ণনায় ডোডো পাখির কথা জানা যায়। নানা রূপকথার গল্পে এই পাখির দেখা মেলে। সপ্তদশ শতক নাগাদই এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এই পাখির কংকাল সংরক্ষিত আছে মরিশাসের জাদুঘরে। ১৫৯৮ সালে ডাচ অভিযাত্রী এডমিরাল উইব্রান্ড ভ্যান ওয়ারুইজকের সৌজন্যে প্রথম ডোডোপাখি সম্পর্কে জানা যায়। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী এরা লম্বায় সাড়ে তিন ফুট ও ওজনে প্রায় ২০ কেজি। এই সমস্ত তথ্যের সপক্ষে অবশ্য তেমন প্রমাণ নেই। মানুষের সহজ শিকারে পরিণত হওয়ার কারণেই এরা বিলুপ্ত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
বিজ্ঞানীরা এই প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত ডোডো পাখির পুরো জিনোম সিকুয়েন্স করতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে ডোডোকে একদিন না একদিন ক্লোন করে পৃথিবীতে আবার ফিরিয়ে আনার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্বে আছেন ক্যালিফোর্নিয়ার জিনতত্ত্ববিদ ব্রেথ স্যাপাইরো। ২০১৫ সালে ‘হাউ টু ক্লোন আ ম্যামথ’ নামে একটি বই লিখে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। সেই বইতে ম্যামথ ও আরও কিছু প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর সঙ্গে ডোডোপাখির ক্লোনের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ২০০২ সালে স্যাপাইরো ও তাঁর সহযোগীরা প্রথম ডোডোর DNA বিশ্লেষণ করেন। অর্থাৎ এই নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনা ও ভাবনাচিন্তা বহুদিনের। সম্প্রতি রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিনের একটি সভায় স্যাপাইরো জানিয়েছেন, এই কাজে ইতিমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন তিনি ও তাঁর গবেষক দল। ডোডোর জিনোম সিকুয়েন্স করার জন্য তাঁরা একটি পায়রা থেকে DNA এডিট করেছেন , কারণ ডোডো আর পায়রার DNA সিকুয়েন্স এ বেশ মিল আছে। শীঘ্রই এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রও প্রকাশ করা হবে। তবে জিনের গঠনের নমুনা সম্পূর্ণ তৈরি করা গেলেও তাতে প্রাণের সঞ্চার করা যাবে কিনা, এই নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্লোনিং-এর তুলনায় পাখিদের ক্লোনিং অনেক বেশি জটিল। ফলে যে পদ্ধতিতে 'ডলি'-র মতো ক্লোন-ভেড়া তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল, ঠিক সেই পদ্ধতিতেই ডোডোর ক্লোন তৈরি করা যাবে কিনা, তা এখনই বলা মুশকিল।
ঋণ : ১) ফিরে এসো ডোডো / পঞ্চানন মণ্ডল / বিজ্ঞানকথা ডট কম
আরও পড়ুন: ভারতের প্রথম কার্বন-নিঃসরণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা : উষ্ণায়ন রোধে পদক্ষেপ