মহাকাশের বুকে টেলিস্কোপের সেলফি
নাসার দশ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রোজেক্ট, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ অবশেষে নির্দিষ্ট জায়গা খুঁজে সংসার পেতেছে, আর প্রথমেই একটি সেলফি তুলে তার শুভারম্ভ ঘোষণা করেছে। তা নতুন জায়গায় গেলে, নতুন মানুষ পেলে, আপনি-আমি সবাই সর্বপ্রথম ওই কাজটিই করি, বেচারা টেলিস্কোপই বা বাদ যায় কেন? নেহাত তার জীবনে ইন্সটাগ্রাম নেই, নেই নিত্যনতুন ফিল্টার, তাই সাদাকালো ছবিখানা নাসার ঘরে পাঠিয়েই তার শান্তি।
সেলফির সঙ্গে মানানসই হ্যাশট্যাগ যদি সে দিতে পারত তবে নিশ্চয়ই সেগুলো খানিক এইরকম হত -#সবচেয়ে_বড়_টেলিস্কোপ, #সার্চিং_ফর_বিগব্যাং কিংবা #গ্যালাক্সির_খোঁজে_গোরিলা। আকারে বহরে ওয়েব টেলিস্কোপ প্রায় তিনতলা বাড়ির সমান লম্বা আর একটা টেনিস কোর্টের সমান চওড়া, মহাকাশে এত বড় মাল নিয়ে যাওয়ার ফেরি রকেটই নেই! তাই গোটা টেলিস্কোপটাকেই জটিল এক অরিগ্যামি মেনে গুটিয়ে ফেলা হয়েছিল, যাতে রকেটের মাথায় সেটি দিব্যি এঁটে যায়। প্রাথমিক কাজটা উৎরে গেলেও নাসার সামনে উপস্থিত হল এক নতুন সমস্যা। এখনও অবধি এর যেসব পূর্বপুরুষদের মহাকাশে পাঠানো হয়েছে, তাদের পৌঁছনোর পরে আর বিশেষ কোনও হ্যাপা ছিল না, কয়েকটা সোলার প্যানেল আর অ্যান্টেনা একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে নিলেই হল। কিন্তু ওয়েবকে তো নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে নিজেকে আবার অরিগ্যামির খোলস ছেড়ে পুরোপুরি মেলে ধরতে হবে, যত জটিল সে ব্যবস্থা, ততই বেশি ভুলচুকের সম্ভাবনা। সেই উদ্বেগের ট্রাপিজে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এক অভাবনীয় সাফল্য। তার ছবি তোলার সরঞ্জাম, তাপরোধক বর্ম, সৌরঝড় নিরোধী মাস্তুল – সবকিছু একের পর এক ভাঁজ খুলেছে কোনওরকম গলদ ছাড়াই। এইবার সে তার কাজের জন্য প্রস্তুত। কাজ বলতে, বিগব্যাং-এর ২০০ মিলিয়ন বছর পরের ব্রহ্মাণ্ডের হালহকিকত জানা, প্রথম নক্ষত্রপুঞ্জ সৃষ্টির ইতিহাস খোঁজা। আর এই কাজে তার একমাত্র ভরসা একখানা বিশাল বড় আয়না।
আরও পড়ুন : সূর্য ছাড়াই সৌরবিদ্যুৎ : উদ্ভিজ্জ বর্জ্য থেকে সোলার প্যানেল উদ্ভাবন ফিলিপিন্সের ছাত্রের
কথায় বলে না, সোনায় মোড়া কপাল, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ক্ষেত্রে কথাখানা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি। তার ওই বিশাল আয়নাটা আসলে সোনা-বাঁধানো ১৮টা আলাদা আলাদা আয়নার সমষ্টি। মহাজাগতিক রহস্য সন্ধানে বেরিয়ে তাকে প্রচুর ছবি তুলতে হবে, যত বড় আয়না তত ভালো রেজোলিউশন। আর শুধু তো বহু বছরের পথ পেরিয়ে আসা আলোকরশ্মি নয়, মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইনফ্রারেড রশ্মিও, তাদের চিনে নেওয়ার জন্যই সোনার আস্তরণ। টেলিস্কোপ জায়গা মতো পৌঁছে গেলেও আয়নাগুলো ঠিকঠাক বিন্যস্ত ছিল না, সম্প্রতি সেই কাজটিও সম্পন্ন হয়েছে ভালোভাবে। আর তারপরেই ওয়েব বেছে নিয়েছে তার প্রথম চিত্রশিকার, Ursa Major নক্ষত্রপুঞ্জের সদস্য HD-৮৪৪০৬ নামের একটি তারা। একাকী, উজ্জ্বল এই তারাটিকে খুঁজে বের করা আসলে টেলিস্কোপের ক্যামেরাবাজি ক্যালিব্রেশন করার জন্য আদর্শ। তাই ওয়েব বাবাজিও তার বিশাল বড় ঝকঝকে আয়না মেলে নক্ষত্রটির আনুমানিক ঠিকানার আশেপাশে ১৫৬ রকম অবস্থান থেকে মোট ১৫৬০খানা ছবি তুলে নিয়েছে। তারপর সেইসব ছবির ভিড়ে বেছে বেছে, ১৮টা আয়নায় আলাদাভাবে তোলা ওই নক্ষত্রের ১৮খানা ছবি নিয়ে একটা অ্যালবাম বানিয়ে পাঠিয়েছে নাসার দপ্তরে। এহেন তারাটির আসল অবস্থান তো বিজ্ঞানীদের জানা, তাই সেখান থেকে গুনেগেঁথে ওয়েব বাবাজির আয়নাগুলোর সঠিক অবস্থান বুঝে ফেলতে তাঁদের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। আর এই সব কাজের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি যে নির্দিষ্ট ছকেই এগোচ্ছে, তার প্রমাণ ওই সেলফি। এক আয়না দিয়ে অন্য আয়নার সেলফি তুলতেই স্পষ্ট হয়েছে একাধিক আয়নার পারস্পরিক বিন্যাস, বিজ্ঞানীরাও একটু শান্তি পেয়েছেন।
যেমনটা আমরা পাই, দীর্ঘ ব্যবধানে থাকা প্রিয় মানুষের সেলফি দেখে।
..................
#NASA #James Webb #Telescope #Selfie of Star #সিলি পয়েন্ট #ওয়েব পোর্টাল