ব্যক্তিত্ব

স্মরণে সুন্দরলাল বহুগুণা

টিম সিলি পয়েন্ট May 23, 2021 at 0:32 am ব্যক্তিত্ব

কোভিড আক্রান্ত হয়ে মে মাসের ৮ তারিখে ভর্তি হয়েছিলেন হৃষীকেশের এইমস হাসপাতালে। গত ২১ তারিখ, রাত ১২ টা ৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন চিপকো আন্দোলনের নেতা, কিংবদন্তী পরিবেশকর্মী সুন্দরলাল বহুগুণা। প্রয়াণকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। সুন্দরলালের জন্ম ১৯২৭ সালের ৯ জানুয়ারি, উত্তরপ্রদেশের তেহরি-তে। মাত্র তেরো বছর বয়েস থেকেই নানারকম সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে তাঁর জড়িয়ে পড়া শুরু। গান্ধীবাদী সমাজকর্মী শ্রী দেব সুমনের নেতৃত্বে অস্পৃশ্যতা-বিরোধী মতাদর্শ ও অহিংসার বাণী প্রচার করতেন। পরিণত বয়সে পৌঁছে তাঁর কর্মোদ্যোগের অভিমুখ ঘুরে যায় পরিবেশ-সচেতনতার দিকে। ‘Ecology is the permanent Economy’ - এই কথাটিই মূল মন্ত্র হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। কর্পোরেট লোভ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে লুঠ করে নেবার যে পরিকল্পনা ছকছে, তা যে দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের সর্বনাশ ডেকে আনতে চলেছে, তা উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। তাই দীর্ঘ সময় ধরে পায়ে হেঁটে হিমালয়ের হাজার হাজার প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম পরিদর্শন করেন সুন্দরলাল। আড়াই বছর ধরে প্রায় ৪৭০০ কিলোমিটার পদব্রজে পরিভ্রমণ করে তিনি হিমালয় অঞ্চলের বিপন্ন পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করেন। তাদের বার্তা নিয়ে পৌঁছে যান এমনকি দিল্লিতে - খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তাঁর আর্জি মেনে পাহাড়ে গাছ কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ইন্দিরা গান্ধি। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০, সুন্দরলাল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হিমালয় অঞ্চলের মদ-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মহিলাদের গড়ে তোলা আন্দোলনে। রাসায়নিক সারকে অবলম্বন করে পরিকল্পিত ‘গ্রিন রেভল্যুশন’-এর বিরুদ্ধে তাঁরই নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘বীজ বাঁচাও আন্দোলন’।

এরপর ১৯৭৪ সালে চিপকো আন্দোলন। এর সূত্রপাত কিন্তু সুন্দরলালের হাত ধরে নয়। কনট্রাকটরের হিংস্র করাতের চোখে চোখ রেখে গাছ জড়িয়ে ধরে চিপকো শুরু করেন তাঁর স্ত্রী বিমলা এবং তাঁর নেতৃত্বে মারোড়া গ্রামের নারীরা। সুন্দরলাল স্ত্রীর পাশে দাঁড়ান, জনমত সংগঠিত করেন। কালক্রমে সুন্দরলালের নামের সঙ্গেই সমার্থক হয়ে যায় চিপকো আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনের সলতে পাকিয়েছিলেন বিমলা বহুগুণা, স্বামীর ছায়ায় যাঁর নাম আলাদা করে মনে রাখি না আমরা অনেকেই। মনে না রাখাটা অন্যায়। 

আটের দশকে বালকো কোম্পানি বক্সাইটের লোভে থাবা বসিয়েছিল ওড়িশার জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ গন্ধমাদন পাহাড়ে। স্থানীয় আদিবাসীদের মরণপণ লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা। বালকো হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। 

১৯৯৫ সাল নাগাদ উত্তরপ্রদেশে তেহরি বাঁধ-বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সুন্দরলাল অনশনের পথ নিয়েছিলেন। দুই দফায় যথাক্রমে ৪৫ ও ৭৪ দিন অনশন করেছিলেন তিনি। এই আন্দোলনের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তারও হতে হয়।


এরপরেও নর্মদা বা অন্যান্য নদী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করেছেন। বৃদ্ধ বয়সেও একটুও কমেনি তাঁর উৎসাহ বা উদ্দীপনা। সবসময় খাদির পোশাক পরিহিত, সদাহাস্যময় সুন্দরলাল যেন ছিলেন এক অলীক মানুষ। মানুষের সঙ্গে মেলামেশায় অসম্ভব স্বচ্ছন্দ ছিলেন। একজন প্রকৃত জননেতার সমস্ত গুণ তাঁর মধ্যে ছিল। পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণ সহ অনেক সম্মান পেয়েছেন। তবে যিনি কর্পোরেট লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে গলা তুলতে শিখিয়েছেন, রাষ্ট্র তাঁকে কী কী পুরস্কার দিয়েছে সে তালিকা নিরর্থক। পরিবেশ-প্রাণচক্রের সর্বমুখী সর্বনাশকে সভ্য মানুষ যেভাবে আমন্ত্রণ করে এনেছে, ঠিক সেই আবহে সুন্দরলালের মতো ব্যক্তিত্ব চলে গিয়ে ভয়ানক নিঃস্ব করে দিয়ে গেলেন আমাদের।  


.............................

[ ছবি: অন্তর্জাল ]

#বাংলা #সুন্দরলাল বহুগুণা #ফিচার #টিম Silly পয়েন্ট #বীজ বাঁচাও আন্দোলন #চিপকো আন্দোলন #বিমলা বহুগুণা #গন্ধমাধন পাহাড় #তেহরি নদী #নর্মদা নদী #সিলি পয়েন্ট #web portal

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

32

Unique Visitors

215001