ফিচার

গোপাল হালদারকে ‘রকের ছেলে’ বলেছিলেন শম্ভু মিত্র

অর্পণ দাস Aug 22, 2021 at 6:11 am ফিচার

১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ। স্বাধীন ভারতবর্ষের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের ‘সাংস্কৃতিক সভায়’ কবিতা পাঠ করলেন শম্ভু মিত্র। একসময়ের গণনাট্য সংঘের শিল্পী, নবনাট্য আন্দোলনের পুরোধা, ‘বহুরূপী’-র কর্ণধার শম্ভু মিত্রের ‘রাজনৈতিক’ অবস্থানে শোরগোল পড়ে গেল বাংলার বামপন্থী সাংস্কৃতিক মহলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদক বামপন্থী সাহিত্যতাত্ত্বিক ও প্রাবন্ধিক গোপাল হালদার পত্রিকার পাতায় শম্ভু মিত্রকে ব্যঙ্গ করলেন। প্রত্যুত্তরে শম্ভু মিত্র গোপাল হালদারকে ‘রাস্তার রকের ছেলে’ বলে দাগিয়ে দিলেন। বাংলা সাংস্কৃতিক মহলের দুই দিকপালের শিশুসুলভ বিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বিগত দেড় দশকের ইতিহাস। সময়ের টানে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মতপার্থক্য কখন যেন কুরুচিকর ব্যক্তি আক্রমণের পর্যায়ে নেমে এসেছিল।


শম্ভু মিত্র গণনাট্য সংঘ ছেড়েছিলেন ১৯৪৮ সালে। তিনি একা নন, ওই সময়ে গণনাট্য সংঘ ছেড়েছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিজন ভট্টাচার্য, তুলসী লাহিড়ির মতো ব্যক্তিত্ব। শম্ভু মিত্র কখনও বলেছেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে অপমান করায় তিনি সংঘ ছেড়েছিলেন, কখনও বলেছেন ‘রাজনৈতিক দলের (এক্ষেত্রে সিপিআই) ভেঁপুদারদের খবরদারি’ সহ্য করতে না পেরে তিনি সংঘ ছেড়েছিলেন। উল্টোদিকে গণনাট্য সংঘের পক্ষ থেকে শম্ভু মিত্রের আচরণ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করা হলেও সংঘের শিল্পী-সংগঠকরা নাম না করে প্রায়শই শম্ভু মিত্রের মতো দলত্যাগীদের ‘সুবিধাবাদী’, ‘ক্যারিয়ারিস্টিক’ বলে তোপ দাগতেন। সে-সব সত্ত্বেও সেদিন শম্ভু মিত্র বাম প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনের পথ ছেড়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন অপেশাদার নাট্য আন্দোলনের পথ নির্মাণের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ১৯৪৮-র মে মাসে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হল ‘অশোক মজুমদার ও সম্প্রদায়’ নাট্যগোষ্ঠী। পরে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য তার নাম দিলেন ‘বহুরূপী’। ‘পথিক’, ‘ছেঁড়া তার’, ‘উলুখাগড়া’ অভিনয়ের পর ‘চার অধ্যায়’-এ ‘বহুরূপী’-র প্রতিষ্ঠালাভ। এবং ১৯৫৪-তে ‘রক্তকরবী’ প্রযোজনার পর ভারত-জোড়া খ্যাতি। শম্ভু মিত্রও এদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-পরিচালকের পরিচয় অর্জন করলেন।

গণনাট্য ছাড়ার পরেও শম্ভু মিত্র কয়েকবার বামপন্থী সাংস্কৃতিক মহলের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণমূলকভাবে উপস্থিত হয়েছিলেন। ক্রমে ‘বহুরূপী’-র সাফল্য যত বাড়তে থাকে, ততই শম্ভু মিত্রের সঙ্গে বাম-সাংস্কৃতিক মহলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ১৯৫৬ সালে ‘বহুরূপী’ নবনির্মিত সংগীত নাটক আকাদেমির স্বীকৃতি পায়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আকাদেমিকে সাহায্য করা কিংবা আকাদেমি ও আকাশবাণীর জন্য নাট্যপ্রযোজনার কাজে ‘বহুরূপী’ ও শম্ভু মিত্র যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫৯ সালে সংগীত নাটক আকাদেমির থেকে ‘বহুরূপী’ ১২০০০ টাকা পেয়েছিল। বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একাংশ সংগীত নাটক আকাদেমি প্রতিষ্ঠাকে কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ছক বলেই মনে করত। ফলত আকাদেমির হয়ে শম্ভু মিত্রের কার্যকলাপকে তাঁর রাজনৈতিক ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবেই দেখা শুরু হয়।

অন্যদিকে ১৯৬২-র নির্বাচন সিপিআই-এর কাছে ছিল অগ্নিপরীক্ষা। এর আগে সিপিআই-এর ১৯৫৬-র পালঘাট সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনের মাধ্যমেও ‘সমাজতন্ত্র’ পৌঁছনো সম্ভব। ১৯৫৭-র নির্বাচনী ফলাফলও একেবারে খারাপ হয়নি। ১৯৬২-র ভোটে প্রথমবার ‘বিকল্প সরকার’-এর ডাক দেওয়া হয়। ১৯৫৯-র খাদ্য আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের ব্যাপারে সিপিআই বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল। তাছাড়া দ্বন্দ্ব জর্জরিত সিপিআই তখন ভাঙনের প্রায় শেষ সীমায় এসে উপস্থিত হয়েছে। ফলে ভোটের ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে ছিল।

এই অবস্থায় হুমায়ুন কবিরের নির্বাচনী প্রচারসভায় শম্ভু মিত্র, উদয়শঙ্কর, মনোজ বসুদের যোগদান যেন আগুনে ঘি ঢালে। সেখানে শম্ভু মিত্র রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা ও হুমায়ুন কবিরের লেখা দুটি কবিতা পাঠ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ‘পরিচয়’ পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৬৮ বা ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ সংখ্যায় ‘ক্যাজুয়েলটি’ শিরোনামে একটি লেখায় সম্পাদক গোপাল হালদার তিনজনকেই তীব্র ব্যঙ্গবিদ্রূপ করলেন। কংগ্রেসি নির্বাচনের মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার নিয়ে উদয়শঙ্করকে বললেন ‘ভঙ্গির ব্যবসায়ী’, মনোজ বসুর ‘ভুলি নাই’ গ্রন্থের রেশ টেনে তাঁকে বললেন ‘ব্যবসাদার’। শম্ভু মিত্রের জন্য একটু বেশি বাক্যব্যয় করলেন। বললেন, “শম্ভু মিত্র রাজনীতি ছাড়া কিছুই করেন না”। তিনি আরও লিখলেন শম্ভু মিত্র নাকি ১৯৪৩-১৯৬২ পর্যন্ত জনতার রাজনীতি (এক্ষেত্রে সিপিআই-এর রাজনীতি) ‘ফেল’ করতে দেখে অবশেষে পদবী-পারিতোষিক-সম্মান-সংগঠনের সুজলা সুফলা সাফল্য পাওয়ার জন্য ‘মন্ত্রীনীতি’ নিয়েছেন। ভোটে হুমায়ুন কবির জেতার পর কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হন। পরবর্তীকালে গুজব ছড়িয়ে গিয়েছিল যে ‘হুমায়ুনী’ কবিতা পাঠের বিনিময়ে শম্ভু মিত্র বছর দুয়েক পরে বিদেশভ্রমণের টিকিট পান।

গোপাল হালদারের ‘ক্যাজুয়েলটি’ প্রকাশের তিন মাস আগে অগ্রহায়ণ সংখ্যার ‘সংস্কৃতি সংবাদ’ অংশে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহুরূপী’-র বর্তমান ভূমিকা সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন “সাম্প্রতিক কালে ‘বহুরূপী’ জীবিত থেকেও যেন নেই”। বাস্তবিক গত তিনবছরে ‘বহুরূপী’-র একমাত্র নতুন প্রযোজনা ‘কাঞ্চনরঙ্গ’। রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬১-র নভেম্বরে দিল্লিতে ‘বিসর্জন’ মঞ্চস্থ করলেও কলকাতার দর্শক তখনও তার স্বাদ পায়নি। লেখাটির শেষে দীপেন্দ্রনাথ ‘পরিচয়’-এর তরফ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর সঙ্গে একটা তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য জুড়ে দিয়েছিলেন, “ভরসা রাখি ‘মুক্তধারা’র মতো এই নাটকটি ‘কাঞ্চনরঙ্গ’র বন্যায় তলিয়ে যাবে না”।

সব মিলিয়ে চৈত্র ১৩৬৮ সংখ্যার পাঠকের চিঠিতে বিস্ফোরণ করলেন শম্ভু মিত্র। রীতিমত পয়েন্ট করে গোপাল হালদারের প্রতিটি ব্যঙ্গের উত্তর দিলেন। তিনি লিখলেন ‘রাজনীতি’ নয়, আজীবন থিয়েটারটাই তিনি মন দিয়ে করে এসেছেন। হুমায়ুন কবিরের ‘সাংস্কৃতিক সভায়’ আবৃত্তিপাঠের বিষয়ে তিনি উত্তর দিলেন “যদি আমি যেতামই কোনো নির্বাচনী সভায়, এবং যদি কোনও ব্যক্তিবিশেষকে আমার ভালো বলেই মনে হত, তাতে কী হত? গোপালদার পক্ষে গেলেই কি আমি মহৎ শিল্পী হতাম? আর না গেলেই কি আমার সংস্কৃতি বিকৃত?” একই নির্বাচনে সিপিআই-এর জোটের প্রচারে নাটক-গান-আবৃত্তি-বক্তৃতা নিয়ে গণনাট্য সংঘসহ অসংখ্য শিল্পী পথে নেমেছিলেন। তাঁদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তোলা হয়নি। আসলে সেই সময়ে এরকম একটা জলাচল ভেদাভেদ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মানেই তিনি ‘প্রগতিশীল’ এবং বামবিরোধী হলেই তিনি ‘প্রতিক্রিয়াশীল’।

চিঠিতে গোপাল হালদারের ‘ফেল’-এর জবাবে শম্ভু মিত্র লিখলেন যে ‘ফেল’ করেছে গণনাট্য সংঘ। তার একমাত্র কারণ শম্ভু মিত্র ও মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য সেখানে কাজ করতে পারেননি। পরবর্তী ‘ফেল’ হল ‘বহুরূপী’-র নাট্যপ্রযোজনা নিয়ে ‘প্রগতিশীল’ মহলের তীর্যক সমালোচনা বা নীরবতার মধ্যেও তাঁদের সাফল্য। ১৯৫২-র ‘দশচক্র’ প্রযোজনা সম্পর্কে ক্ষণজীবী ‘গণনাট্য’ পত্রিকা শম্ভু মিত্রের ‘প্রগতিশীলতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ‘রক্তকরবী’-র জয়জয়কারের মধ্যেও ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা নীরব ছিল। এবং শেষে দিল্লিতে ‘বিসর্জন’-এর মঞ্চাভিনয়ের সঙ্গে ‘কাঞ্চন’-এর যোগাযোগ নিয়ে ‘পরিচয়’-এ দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য। যা ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে মনে হয়েছিল শম্ভু মিত্রের। যার জবাবে তিনি সবচেয়ে বড়ো ‘ফেল’ বললেন গোপাল হালদারকে। কারণ তিনি ‘পরিচয়’-এর দায়িত্ব ভুলে বর্তমানে “রাস্তার রকের ছেলেদের মতো দায়িত্বহীন টিপ্পুনি কাটতে” ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। চিঠির শেষের দিকে শম্ভু মিত্র রবীন্দ্রনাথকে ভোটমঞ্চে দাঁড় করানোর অভিযোগের উত্তর দিলেন। ঠিক উত্তর দিলেন না, শুধু মনে করিয়ে দিলেন ১৯৪৯-এ সিপিআই-এর ‘ঝুটা স্বাধীনতা’র সময়ে ‘পরিচয়’ ও অন্যান্য বামমনস্ক পত্রিকার পাতায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে করা মন্তব্যগুলি। সেই সময়ে ‘মাকর্সবাদী’ পত্রিকায় ভবানী সেন ও প্রদ্যোৎ গুহের লেখায় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ‘বুর্জোয়া’ এবং বিবেকানন্দ ছিলেন ‘ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু ফিউডাল’।

চিঠির শেষে ‘পুনশ্চ’ দিয়ে শম্ভু মিত্র লিখলেন “চিঠিটা সম্পূর্ণ ছাপিয়ে গালাগালি দেবেন”। ‘পরিচয়’ পত্রিকা বা গোপাল হালদার ‘গালাগালি’ দেননি, এমনকি আর কোনো উচ্চবাচ্যও করেননি। কিন্তু বৈশাখ ১৩৬৩ সংখ্যায় মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের পুত্র নরনারায়ণ ভট্টাচার্য ‘উপলব্ধি ও সত্য’ শিরোনামে একটি লেখা লিখলেন। তিনিও শম্ভু মিত্রের ‘কংগ্রেসি জনসভায়’ কবিতাপাঠকে ব্যবসা বলে একহাত নিলেন এবং তাঁর ‘বহুরূপী’ নামকরণটির অধঃপতনকে ব্যঙ্গ করলেন। তিনি লিখলেন শম্ভু মিত্রের বয়ান অনুযায়ী মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের ‘কাজ করতে না পেরে’ গণনাট্য ছাড়ার যুক্তি ‘সর্বৈব মিথ্যা’। তিনি গণনাট্য সংঘের মতবাদ ও দর্শনে আমৃত্যু বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি দল ছেড়েছিলেন শুধুমাত্র শম্ভু মিত্রের প্রতি অপত্য পুত্রস্নেহের জন্য। জীবিত থাকলে তিনি শম্ভু মিত্রের আচরণকে আদর্শচ্যুতি রূপেই দেখতেন বলেই নরনারায়ণবাবুর বিশ্বাস। 

নির্বাচনের ফলাফল সিপিআই-এর পক্ষে যায়নি। ১৯৬২-র শেষে চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের সময়ে সিপিআই-এর একটা বিশেষ অংশের রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য বামপন্থী শিল্পীরা হয়ে গেলেন ‘দেশদ্রোহী’। তাঁদের উপর নেমে এল রাষ্ট্র ও উগ্রজাতীয়তাবাদীদের নিপীড়ন। শম্ভু মিত্র ওই চিঠিতে লিখেছিলেন সংবিধানের ‘ডেমোক্রাসি’-র অধিকারে তিনি যে-কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন। সেটা মানুষের মৌলিক অধিকার। ভবিষ্যতে গোপাল হালদার যদি কখনও মন্ত্রী হন, তাতেও সেই নীতি বদলে যাবে না। চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পর বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের আক্রান্ত হওয়ার সময় অবশ্য শম্ভু মিত্র ‘ডেমোক্রাসি’ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

শম্ভু মিত্রের জীবন মানেই একরাশ বিতর্ক। সেই বিতর্কের মধ্যে থেকে ‘ব্যক্তি’ শম্ভু মিত্রকে খুঁজে পাওয়া বেশ দুরূহ ব্যাপার। একসময়ে তিনি গণনাট্য ছেড়ে ‘বহুরূপী’ তৈরি করেছিলেন, সেই বহুরূপী থেকেও তিনি সরে গেলেন। ‘রক্তকরবী’ বা অন্ধকারের নাটক প্রযোজনা হোক কিংবা তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক—বিতর্ক তাঁর সঙ্গ ছাড়েনি। সেই তুলনায় ‘পরিচয়’-এর বিবাদের ব্যাপ্তি খুবই নগণ্য। এর আগে কখনও তিনি স্বভাবসুলভ তির্যক বক্রোক্তিতে উত্তর দিয়েছেন, কখনও বা উদাসীন ভঙ্গিতে পাশ কাটিয়ে গেছেন। কিন্তু ‘পরিচয়’-এর চিঠিটির মতো খুব কমক্ষেত্রেই শম্ভু মিত্রকে এরকম ভাষায় জবাব দিতে দেখা গেছে। বস্তুত সময়টাই ছিল বিদ্বেষ আর অবিশ্বাসের। শিবের নয়, মনসার রাজত্ব। মানুষের প্রতিটি আচরণ তখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছিল। অতীত ঘেঁটে তুলে এনে বিচার করা হচ্ছিল তাঁর বর্তমান অবস্থান। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলার দুই বিখ্যাত ব্যক্তি জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্যক্তিগত কলহে। ‘পরিচয়’ বা গোপাল হালদার আর কোনো জবাব দেননি। বছর শেষে যুদ্ধের পর শম্ভু মিত্রের বক্তব্য নিয়ে আর তোলপাড় হওয়ার সুযোগও পাওয়া গেল না। চিঠির আলোচনাও হারিয়ে গেল কালের অন্ধকারে। ক্রমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুলভ্রান্তি জুড়ে তৈরি হওয়া মানুষ শম্ভু মিত্রের পরিচয় ঢাকা পড়ে গেল ঋষিসুলভ গাম্ভীর্যের অবয়বে। ব্যক্তি বনাম গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে আজীবন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য আঁকড়ে ধরা মানুষটি নিজেই একদিন ‘প্রতিষ্ঠান’-এ পরিণত হলেন।

**********************************

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ভবানী সেন গ্রন্থাগার

********************************** 

#শম্ভু মিত্র #গোপাল হালদার #গণনাট্য সংঘ #বামপন্থী আন্দোলন #সিপিআই #খাদ্য আন্দোলন #নাটক #বাংলা থিয়েটার #সংগীত নাটক আকাদেমি #অর্পণ দাস #সিলি পয়েন্ট #বাংলা পোর্টাল #ওয়েবজিন #বহুরূপী #হুমায়ুন কবির #কংগ্রেস #নির্বাচন #ফিচার

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

135

Unique Visitors

183786