পড়শিনগর : চাইনিজ চেকার
প্রায় হপ্তা খানেক হতে চললো। নতুন দেশ, নতুন শহর, নতুন মানুষ। সামনে বছরটাও নতুন। একেক সময় বড় অদ্ভুত লাগে। এই ধরুন আজ থেকে দশ বছর আগে আমায় যদি কেউ বলতো "আজ থেকে ঠিক দশ বছর পর রাত্রি বারোটার সময় চীনের উহান শহরে বসে তুই দেশের কথা ভাববি...", আমি তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতাম "কি দিয়ে নেশা করেন দাদা? এত ভালো হ্যাল হয়!" কিন্তু এই ব্যাপারটা তো সত্যি।
এখন যেমন আরও একটা জিনিস মনে হচ্ছে। ভারত সহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে যখন ৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সালটা শেষ হচ্ছে, চীনে কিন্তু তখনও এই বছরটা চলছে। নতুন বছর শুরু হতে ২৬ দিন বাকি। এদেশে এসে আরও ছাব্বিশ টা দিন বেশি পেয়ে গেলাম এই বছরে। অথচ আজকের দিনটা আমার দেশে শেষ হতে এখনো ২ ঘন্টা ১৯ মিনিট বাকি। আমি যেন আটকে আছি দু'দেশের মধ্যিখানের ওই আড়াই ঘন্টা সময়ে।
আজ এখানে চাইনিজ উইন্টার ফেস্টিভাল ছিলো। এক এদেশীয় বন্ধু (লিউ) জানালো আজ নাকি এখানে সবাই ডাম্পলিং খায়। এটাই এখানকার রেওয়াজ। আজ যারা ডাম্পলিং খাবে, সারা বছর তারা ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। সব্বাই মিলে মেতে উঠলাম নতুন পাওয়া এই এক দিনের উৎসবে। খেতে খেতে মনে হচ্ছিলো আমরাও পৌষ সংক্রান্তিতে পুলি পিঠে খেয়েই বড় হয়েছি।
বড় হওয়ার গল্প না হয় অন্য কোন আড্ডায় হবে। কিন্তু আজ, এই অচেনা শহর আমায় মনে করিয়ে দিচ্ছে 'সত্যিকারের এডভেঞ্চার' ঘটে যাওয়ার সেই দিন। "সেদিন সে একা একা সবার চোখ এড়িয়ে ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে উঠোনে পা দেয়। চৌকাঠ ডিঙিয়ে যেতে পোষা ছেলের অনেক সাহস লাগে। কিন্তু ভয়কে ছাপিয়ে ওঠে অন্য রকম ডাক। এই ডাকে সাড়া না দিলে কোনো শিশুর প্রাণ বাঁচে না।"
[লেখার মাঝের ছবি : শ্রীময় ভট্টাচার্য
কভার পোস্টার: অর্পণ দাস]
#বাংলা #মুক্তগদ্য #শ্রীময় ভট্টাচার্য #চাইনিজ চেকার #চীন