ফিচার

কেবল কার্টুনে নয়, মিকি মাউস অংশ নিয়েছিল বিশ্বযুদ্ধেও

তোড়ি সেন Jan 23, 2022 at 9:58 am ফিচার

মহাভারত যখন লেখা হয়েছিল, বেদব্যাস বা গণেশ ত্রিকালজ্ঞ হলেও সম্ভবত আন্দাজ করতে পারেননি যে আধুনিক পৃথিবীতে এমন কোনও বিশাল মাপের যুদ্ধ হতে পারে। মানুষ তো দিনের শেষে দু-মুঠো খেয়েপরে শান্তিতে বাঁচতে চায়। দিনের পর দিন আধপেটা খেয়ে, না ঘুমিয়ে, পরিবার পরিজন ছেড়ে গুলিগোলার মধ্যে বসে থাকতে কি ভালো লাগে কারও! কিন্তু, ক্ষমতার লোভ যে বড় লোভ। তাই, বিশ শতকের পৃথিবীতে একবার নয়, দু-দুবার এরকম দুটো যুদ্ধ বাধল। যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলে। এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ংকর বিধ্বংসী যুদ্ধ আজ পর্যন্ত আর হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই যুদ্ধে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ লোকই মারা গিয়েছিল। এক ইউরোপেই সরকারি হিসেবে মৃত ১৫ থেকে ২০ লক্ষ লোক। সংখ্যাটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রায় দ্বিগুণ।

নাহ, যুদ্ধের গল্প শোনাতে বসিনি। শোনাব একটা ইঁদুরের কথা। তাও সে জ্যান্ত নয়, তাকে দেখা যায় ছবিতে। সত্যজিৎ রায়ের শর্ট ফিল্ম 'Two'-এর দৃশ্যগুলোর কথা মনে আছে? সেখানে যুদ্ধের বিধ্বংসী চেহারাকে পুঁজিবাদের অহমিকার সঙ্গে জুড়ে দিতে বড়লোক বাড়ির বাচ্চাটির মাথায় প্রথম থেকেই দেখা যায় মিকি মাউসের কানওয়ালা একটা টুপি। এই ফিকশনাল ইঁদুরের কথা বলতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ না এনে উপায় নেই। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে বড়ো লড়াই হল নর্মান্ডি উপকূল দখলের জন্য যুদ্ধ। আর এই লড়াইটার কোড নেম ছিল, মিকি মাউস!

এমন জনপ্রিয়তা একটা পুঁচকে নেংটি ইঁদুরের! অথচ জানেন কী, কোনও আলো ঝলমলে, বড়োলোক স্টুডিওতে মিকির জন্মই হয়নি! তার জন্ম বা বেড়ে ওঠার পথটা মোটেই খুব সহজ ছিল না। এমনকি, তার জন্মের সময় তার জনক নিজেই ছিলেন কাঠ বেকার!

মিকি মাউস কে বানিয়েছেন, সব্বাই জানে। হ্যাঁ, ওয়াল্ট ডিজনির কথাই বলছি। একটা প্রচলিত গল্প আছে, ডিজনির স্টুডিওতে আনাগোনা ছিল একটা ইঁদুরের। একদিন কী খেয়ালে ডিজনি তাকে খাতায় ধরে ফেললেন। কিন্তু তাঁর মনে হল, ছবিটা দেখে ব্যাটা নাক সিঁটকেছিল। একটা বাচ্চা ছেলেটা ছবি দেখতে আসত, সেও দেখেশুনে রায় দিল, ছবিটা বড্ড বেশি ইঁদুর ইঁদুর লাগছে। আপনি ভাবছেন, এ আবার কী কথা? ইঁদুরকে ইঁদুর লাগবে না তো মানুষের মতো লাগবে? না মশাই! ইঁদুরকে যদি ইঁদুর-ই মনে হয়, তবে তো ফোটো তুললেই হয়, আর্টিস্টের কারিকুরি তাহলে রইল কোথায়! আর সেইজন্যেই নাকি পাঁচটার জায়গায় চারটে আঙুল দিয়ে, আর কানগুলো গোল গোল করে ইঁদুরটার দিব্যি মেকওভার করে ফেলেন ডিজনি। 

কিন্তু আসল কথাটা অন্য। ডিজনি তখন চাকরি করেন ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে। সেখানে তিনি আর তাঁর বন্ধু আব আইওয়ার্ক্স মিলে প্রথম যে অ্যানিমেশন চরিত্রটা বানান, সে একটা খরগোশ। নাম, অসওয়াল্ড দ্য লাকি র‍্যাবিট। জনপ্রিয়তা বাড়ছে, কিন্তু শিল্পীদের কথামতো অ্যানিমেশন ছবির পিছনে বাজেট বাড়ে না! উলটে কমে গেল। রাগের চোটে দুই বন্ধু চাকরি ছেড়ে দিলেন। এদিকে কাজকর্ম না করলে খাবেন কী! অসওয়াল্ড-এর কপিরাইট ইউনিভার্সালের। তাহলে নতুন চরিত্র ভাবতে হয়! কুকুর, বিড়াল, গোরু, ঘোড়া, যা নিয়েই ভাবেন, কিছুতেই ঠিক মনঃপূত হয় না। আসলে অসওয়াল্ড-এর ভূত ঘাড় থেকে নামছিল না যে! শেষকালে একদিন এককালের পোষা ইঁদুরগুলোর কথা মনে পড়ল ডিজনির। ভাবলেন খানিকটা অসওয়াল্ডের ধাঁচে ইঁদুর আঁকা যায় কি না দেখা যাক। বন্ধু বানিয়ে ফেললেন ছবির খসড়া। নাম হল মর্টিমার মাউস। কিন্তু নামটা পছন্দ হল না বলে মিসেস লিলিয়ান ডিজনি ইঁদুরটার নাম রাখলেন ‘মিকি’। শুরু হয়ে গেল মিকির জয়যাত্রা। আর বছর পেরোতে না পেরোতেই বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র হয়ে দাঁড়াল মিকি মাউস।


#মিকি মাউস #ডিজনি #বিশ্বযুদ্ধ #কার্টুন #তোড়ি সেন #ফিচার #সিলি পয়েন্ট #বাংলা পোর্টাল #mickey mouse #disney #silly point

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

159

Unique Visitors

183825