শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত, রবীন্দ্রনাথ ও আনন্দ সমরকুন
অনেকে বলেন দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত রচনার আসল কৃতিত্ব নাকি আমাদের রবি ঠাকুরের। তাঁরই লেখা নাকি অনুবাদ করেছিলেন তাঁর সিংহলি অনুরাগী আনন্দ সমরকুন। তবে এ-বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণাদি নেই। রবীন্দ্রনাথের গানের কোনও সংকলনে এ-গানের চিহ্ন নেই। শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞরা বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রভাব থাকলেও তিনি সরাসরি কোনওভাবেই ওই গানের রচনায় জড়িয়ে ছিলেন না। সঙ্গীতজ্ঞ সমরকুন বিশ্বভারতীর ছাত্র এবং রবীন্দ্রনাথের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন বলেই হয়তো এত বিতর্কের সূত্রপাত।
সমরকুনের জন্ম ১৯১১ সালে। ১৯৩০ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি বিশ্বভারতী গিয়েছিলেন। পরে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। সিংহলি ভাষার সংগীত-সাহিত্যের সূত্রপাত কার্যত সমরকুনের হাতেই। বলা বাহুল্য তাতে থেকে গিয়েছিল রবীন্দ্রসংগীতের স্পষ্ট প্রভাব।
চারের দশকের শুরু দিকেই তিনি 'নমো নমো মাতা' গানটি লেখেন। গানটি জাতীয়তাবাদী চরিত্রের হলেও সমরকুন কিন্তু জাতীয় সংগীত হিসেবে গানটি লেখেননি।
১৮৪৫ সালে সন্তানের মৃত্যুর পর তিনি ভারতে যান। সেখানে মূলত চিত্রশিল্পের চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। বছরকয়েক পর স্বদেশে ফেরেন। ১৯৫০ সালে নতুন দেশের জাতীয় সঙ্গীত ঠিক করার জন্য স্যার এডউইন ভিজয়রত্নের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। সেই সময় আনন্দ তার অনূদিত ‘নমো নমো মাতা’ গানটি ওই কমিটির কাছে দেন। কমিটি ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর ৩৫ সেকেন্ডের এই গানটিকেই শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এম. নালাথাম্বি গানটি তামিল ভাষায় অনুবাদ করেন। ১৯৫৭ সালে গানটি নিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় বিতর্ক দেখা দেয়। ‘নমো নমো মাতা’ লাইনটি পরিবর্তন করে 'শ্রীলঙ্কা মাতা, আপা শ্রীলঙ্কা মাতা নমো নমো' করা হয়। তাঁর অনুমতি না-থাকা সত্ত্বেও এই পরিবর্তন করা হয়। অরম অপমানিত বোধ করেন সমরকুন। ১৯৬২ সালে অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। অনেকের মতে, সমরকুন আত্মহত্যা করেন। গানের কথার পরিবর্তন তিনি মেনে নিতে পারেননি। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর। ২০১৭ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচের সময়েও জাতীয় সংগীত, রবীন্দ্রনাথ ও সমরকুন বিষয়ক এই বিতর্ক নতুন করে উঠে এসেছিল। মৃত্যুর পরেও বিতর্কমুক্ত হতে পারেননি শ্রীলঙ্কার এই অসাধারণ প্রতিভা।
#Rabindranath #Ananda Samarakoon #Srilanka #National Anthem