নন্দ প্রস্তিঃ এক গ্রামীণ আদর্শ
"The role of the teacher is like the proverbial ‘ladder’. It is used by everyone to climb up in life, but the ladder itself stays in its place."
ডঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালামের এই উদ্ধৃতিটি হয়তো নিজের অজান্তেই সারাজীবন ধরে পালন করে চলেছেন এক গ্রামীণ শিক্ষক – নন্দ প্রস্তি। ওড়িশার জজ্পুর এলাকার বার্তান্ডা গ্রামে তাঁর নিবাস। ঐ গ্রামে গত প্রায় ৭৫ বছর ধরে তিনি চালাচ্ছেন এক অবৈতনিক স্কুল। নেই কোন স্কুলবাড়ি, নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। প্রতিদিন তাই নিয়ম করে গাছের তলাতেই বসে পড়ে ক্লাস। চলে পাঠদান।
বর্তমানেও গ্রাম্য খুদেদের একমাত্র ভরসা সেই নন্দ প্রস্তি-ই। একটি বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রায় ৭৫ বছর আগে একদিন মাঠে কাজ করার সময় তাঁর উপলব্ধি ঘটে যে, তাঁর নিজের গ্রামের বহু মানুষের অক্ষরজ্ঞান নেই। ফলে তারা সই করতেও অক্ষম এবং এই কারনেই তাদের একমাত্র ভরসা টিপছাপ। তাই তিনি সেই সকল মানুষকে ডেকে পাঠান নামসই শেখানোর স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে ভগবৎগীতা পাঠ করতেও সচেষ্ট হন এবং হাঁটতে শুরু করেন শিক্ষার আলোয় মোড়া এক পথে – এইভাবেই কর্মজীবনকে ছাপিয়ে গিয়ে নন্দ প্রস্তি’র শিক্ষক জীবনের সুরুয়াত। এখন তিনি তাঁর প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের নাতি-নাতনিদের সন্তান-সন্ততিদের পড়ান। এমনভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার দায় ভার নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে প্রস্তি’ই বার্তান্ডা গ্রামে জ্বালিয়ে রেখেছেন শিক্ষার বাতিস্তম্ভ। ইতিমধ্যে বহুবার বহুসময়ে সরকারি অনুদানের প্রতিশ্রুতি এসেছে; অনেক সহৃদয় মানুষও তাঁর জন্য গড়ে দিতে চেয়েছেন স্কুলবাড়ি। কিন্তু তিনি বারবার এইসকল অনুদান, সুযোগ- সুবিধা নিতে অস্বীকার করেছেন। প্রকৃতির কোল থেকে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের ছিনিয়ে নিয়ে তাদের কংক্রিটের চারদেওয়ালে ভরে দিতে তিনি একেবারেই নারাজ। কিন্তু বার্তান্ডা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, নন্দ প্রস্তি’র বয়সের কথা মাথায় রেখে গ্রাম পঞ্চায়েত তাঁকে একটি স্কুলবাড়ি গড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, নন্দ প্রস্তি’র সকল অনিচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তারা তাঁকে পুনরায় অনুরোধ জানাবেন, তিনি যেন সেই স্কুলবাড়িতেই তাঁর শিক্ষক জীবনের আগামী ক্লাসগুলো নেন।
আশা রাখি এইভাবেই বার্তান্ডা গ্রামটির পরবর্তী প্রত্যেকটি প্রজন্ম শিক্ষিত হবে; পাল্টেও যাবে সময়ের নিয়মে। শুধু থেকে যাবেন নন্দ প্রস্তি।
তথ্যসূত্রঃ
1.https://indiatimes.com/trending/human-interest/nanda-prasty-odisha-teacher-523878.html