ফিচার

নামদেও ধসাল ও দলিত প্যান্থার আন্দোলন

টিম সিলি পয়েন্ট Feb 18, 2022 at 7:50 am ফিচার

দলিত' শব্দটি এখন মান্যভাষার শব্দভাণ্ডার থেকে বাদ দিতে চাইছেন অনেকে। কিন্তু এই অভিধায় যাঁদের ভূষিত করা হয় বা হত, এই জাত-পাত অধ্যুষিত ভারতে তাঁদের নিয়ে বিতর্ক তো এত সহজে শেষ হবার নয়। নিম্নবর্গের কণ্ঠ সাহিত্য বা শিল্পে একটা আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে এটাও অস্বীকার করা যায় না। বাজার নিজের প্রয়োজনেই হয়তো এই ট্যাগগুলোকে কিছুটা মান্যতা দিচ্ছে।

মহারাষ্ট্রকে বলা হয় নিম্নবর্গের সাহিত্যের আঁতুড়ঘর। বিশ শতকের পাঁচ-ছয়ের দশক থেকে সমাজে ‘অস্পৃশ্য’ বলে চিহ্নিত একদল মারাঠি লেখক তাদের অস্পৃশ্যতার অভিশাপে অভিশপ্ত জীবনের যন্ত্রণা থেকে, জন্ম দিলেন ভারতীয় দলিত সাহিত্যের। অবশ্য ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে অচ্ছুতদের সমানাধিকার অর্জনের লড়াই শুরু হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকারের লড়াই থেকে শুরু করে ১৯৫৬ সালে হিন্দু জাতিভেদ প্রথা থেকে মুক্তির জন্য গণহারে বৌদ্ধ ধর্ম নেওয়া -  এইসব শতাব্দীবিস্তৃত প্রেক্ষাপট থেকেই জন্ম নিয়েছিল দলিত সাহিত্য আন্দোলন। নামদেও ধসাল ছিলেন এই সাহিত্য-আন্দোলনের প্রাণপুরুষ। 


নামদেও ধাসালের জন্ম ১৯৪৯ সালে পুনের কাছে এক গ্রামে। তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন মাহার সম্প্রদায়ভুক্ত, যে সম্প্রদায় আবহমান সময় ধরে অস্পৃশ্যতা, অর্থনৈতিক শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনায় জর্জরিত। ফলে দ্রোহের আগুন তিনি জন্মসূত্রেই লাভ করেছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে দারিদ্র্য ও বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে আসা নিম্নবর্গের মানুষই তাঁর সাহিত্যরচনার প্রেরণা। তাঁদের দুঃসহ জীবনই প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর লেখায়। নিপীড়িত জীবনের কথকতা করেছেন বলেই কোনও তথাকথিত মেকি ভদ্রতার ধার ধারেনি তাঁর ভাষা। তিনি মূলত কবি ছিলেন। তবে কবিতার পাশাপাশি সমান তালে লিখেছেন প্রচুর গদ্যও । প্রধানত মরাঠি ভাষায় লিখেছেন। কিছু লেখা রয়েছে ইংরেজি ও হিন্দিতেও। ধসালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'গোলপিঠা' প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। সে বছরই তাঁর নেতৃত্বে স্থাপিত হয় দলিত প্যান্থার গোষ্ঠী। এ ব্যাপারে ধসালের সহযোগী ছিলেন অর্জুন ডাঙ্গল, রাজা ধালে ও জে.ভি.পওয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবিদ্বেষবিরোধী বিখ্যাত 'Black Panther' আন্দোলনের অনুসরণে তাঁরা তাঁদের গোষ্ঠীর নাম দেন 'দলিত প্যান্থার'। আম্বেদকর, জ্যোতিরাও ফুলে ও কার্ল মার্ক্সের মতাদর্শ মিলিয়ে তাঁরা তৈরি করেছিলেন নিজস্ব মতাদর্শ। আর তাঁদের সক্রিয়তা ছিল মূলত সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই।  তবে এঁদের মধ্যে ধসালই লেখক হিসেবে সবচেয়ে সাড়া ফেলেছিলেন। প্রথম গ্রন্থটিই ১৯৭৪ সালে তাঁকে এনে দিয়েছিল সোভিয়েত ভূমি নেহরু পুরস্কার। 

আরও পড়ুন:শিকারিরাই এখন রক্ষক : আমুর ফ্যালকন সংরক্ষণে পথ দেখাচ্ছেন ফটোগ্রাফার/ মন্দিরা চৌধুরী

ধসালের অন্যান্য প্রশংসিত কাব্যসমগ্র ‘তুহি ইয়ত্তা কাঞ্চি’, ‘খেল’, ‘য়া সত্তেত জীভ রামাত নাহি’, ‘মি মারলে  সুর্যচ্যা  রথাচে  সাত ঘোড়ে'। এছাড়া 'অন্ধেলা শতক' বা 'আম্বেদকরি চালওয়াল'-এর মতো গদ্যের বই তাঁর সৃষ্টির তালিকায় উজ্জ্বল সংযোজন। পরবর্তীকালে অবশ্য বিদ্রোহী সত্তা বিসর্জন দিয়ে দক্ষিণপন্থী আগ্রাসী রাজশক্তির ছত্রছায়ায় চলে আসার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০০৪ সালে সাহিত্য একাডেমি গোল্ডেন লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে ভূষিত হন | ১৫ ই জানুয়ারী, ২০১৪ তারিখে বোম্বে হাসপাতালে নামদেও ধসাল মারা যান। 


#দলিত #অস্পৃশ্যতা #সমানাধিকার #টিম সিলি পয়েন্ট #নামদেও ধসাল #দলিত প্যান্থার আন্দোলন

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

20

Unique Visitors

219131