ব্যক্তিত্ব

হাজার হাজার গাছ-সন্তানের মা : একশো দশ পেরিয়েও বিরতি নেই সালুমারাদা থিম্মাক্কার

টিম সিলি পয়েন্ট Feb 5, 2021 at 5:37 am ব্যক্তিত্ব

সালুমারাদা থিম্মাক্কা এক মায়ের নাম। না, সমাজ-নির্ধারিত মাতৃত্বের সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি মা হতে পারেননি। গর্ভধারণ করতে পারেননি। তাই জুটেছে যথেচ্ছ লাঞ্ছনা, অপমান। কিন্তু সেই সব কিছু অতিক্রম করে তিনি আজ সারা পৃথিবীর গাছপ্রেমী এবং পরিবেশমনস্ক মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন এক উদাহরণ। সারাজীবনে তিনি রোপণ করেছেন ৩৮৫ টি বটগাছ, তাছাড়াও আরও নানা প্রজাতির ৮০০০-এরও বেশি গাছ।

কর্ণাটকের গুব্বি তালুক অঞ্চলের এক দরিদ্র পরিবারে থিম্মাক্কার জন্ম। দারিদ্র্যের কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পুঁথিগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের সেই সময়কার গন্তব্য হয়ে ওঠে চাষের মাঠের শ্রমিক কিংবা চায়ের দোকানের হেল্পার হিসেবেই। আমাদের সমাজের এমন অলিখিত নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি এক্ষেত্রেও। ফসলের মাঠের শ্রমিক হিসেবেই শুরু হয় সালুমারাদা থিম্মাক্কার জীবনযুদ্ধ। কুড়ি বছর বয়সে হালিকাল গ্রামের বাসিন্দা বেকাল চিক্কাইয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। দারিদ্র্য পিছু ছাড়েনি, কিন্তু সালুমারাদা থিম্মাক্কা আর বেকাল চিক্কাইয়ার সহজ জীবনবোধ তাদের শিখিয়েছিল দারিদ্র্য জয় করার মন্ত্র। দোষের মধ্যে তারা ছিলেন নিঃসন্তান, সুতরাং সমাজ তাদের করল একঘরে। পরিবার-পরিজন হীন নিঃসঙ্গ জীবন তাঁদের সাময়িকভাবে দমিয়ে রাখলেও খুব সহজে  তাঁরা খুঁজে পেয়েছিলেন তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন পথ। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গাছ লাগাবেন, তাঁদের সন্তান হবে গাছ। 

আরও পড়ুন : হাজারেরও বেশি অনাথ শিশুর 'মা' সিন্ধুতাই সাপকল 

শুরু হল ভাবনাচিন্তা। কোথায় পাবেন গাছের চারা? তার হদিশ পেলেও দরিদ্র নিঃসঙ্গ দম্পতি কী করে যোগাবেন সেই চারাগাছ কেনার অর্থ? কোথায় বা লাগাবেন সেই গাছ ? তবে কি ভাবনাই সার ? না জীবনযুদ্ধ যাদের নিত্যসঙ্গী তারা ঠিকই জেনে যায় চক্রব্যূহ থেকে বেড়বার রাস্তা। তাঁরা ঠিক করলেন কেনা চারাগাছ নয়, রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা বট গাছের চারা দিয়েই শুরু হবে তাঁদের কর্মকাণ্ড। এবার জমি খোঁজার পালা। এমন কাজের শুরুর দিকে পাশে দাঁড়ানোর লোকের চিরকালই বেশ ঘাটতি থাকে। তাই কারুর কাছে হাত না পেতে কর্নাটকের কুদুর অঞ্চল আর হালিকাল অঞ্চলের মাঝের মহাসড়কের দু'পাশে শুরু হয় চারা লাগানোর প্রস্তুতি।

সংসারের দারিদ্র্য কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি গাছেদের যত্নে। গাছে জল দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার, সার দেওয়া, বেড়া লাগানো এসবের মধ্যে দিয়েই বড় হয়ে উঠতে থাকে গাছ-সন্তানেরা। ১৯৯১ সালে মারা যান চিক্কাইয়া। কিন্তু থিম্মাকা থেমে থাকেননি। একদিন যে সমাজ সন্তানহীনতার অপরাধে তাঁদের একঘরে করেছিল, পরে সেই সমাজই তাঁকে সম্মান দিতে বাধ্য হয়েছিল। গ্রামবাসীরা তাঁকে ডাকত 'সালুমারাদা' বলে, কন্নড় ভাষা যার অর্থ 'গাছেদের সারি'। বর্তমান বোটানিক্যাল গার্ডেনের সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের রোপণ করা গাছেদের বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আর এই কয়েক কোটি টাকার বৃক্ষ বিক্রি করে তিনি নিজের সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ গঠনের ভাবনাকে কে দূরে সরিয়ে রেখে স্বার্থহীনভাবে নির্দ্বিধায় তুলে দেন রাষ্ট্র তথা সরকারের হাতে। 

১৯৯৭ সালে তাঁকে সম্মানিত করা হয় ‘ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী বৃক্ষমিত্র’ পদকে।  লেখক ইন্দিরানা বেলুর থিম্মাক্কার জীবনীগ্রন্থ লেখেন যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘সালুমারাদা সর্দারনী’ নামে।  এছাড়াও বিবিসির জরিপের হিসেব অনুযায়ী ২০১৬ সালের বিশ্বের ১০০ জন মহিলার মধ্যে নাম উঠে আসে এই বৃদ্ধার। একের পর এক পালক যোগ হতে থাকে তাঁর মুকুটে। পরিবেশ রক্ষায় তাঁর অবদানের জন্য জাতীয় নাগরিক সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ২০১৯ সালে পান পদ্মশ্রী সম্মান। এরপর কর্ণাটক সরকার তাঁর নামে ঘোষণা করেন ‘সালুমারাদা থিম্মাক্কা ছায়া পরিকল্পনা’ তহবিল। যার উদ্দেশ্য বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃতিসচেতন করে তোলা। এখন বয়েস একশো দশ পেরিয়েছে। বয়সের কারণে শরীর সেভাবে সঙ্গ না দিলেও তাঁর ইচ্ছাশক্তি চলছে টগবগিয়েই। নিজের কাজ যাতে নির্বিঘ্নে এগোতে পারে, সেজন্য তৈরি করেছেন ‘সা লুমারাদা থিম্মাক্কা ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’।


# Saalumarada Thimmakka #Indian environmentalist #Tree Planting #Padma Shri #Environment #Banyan Tree #পরিবেশ #গাছ #বৃক্ষরোপণ #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

23

Unique Visitors

219138