মুখে কুলুপ কিংবা ওলপ দেওয়া : কোথা থেকে এল এই শব্দ?
কেউ কথা বলতে নেহাতই অনিচ্ছুক। ঠাট্টা করে বলা হল, সে নাকি মুখে কুলুপ দিয়েছে। জন্মসূত্রে আরবি এই শব্দটি বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবেই প্রচলিত। যার মানে তালা। আবার বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত জানাচ্ছেন, আসলে পুরনো দিনে এ প্রসঙ্গে যে শব্দটি প্রচলিত ছিল, তা হল ওলপ। সেকালের দিনে মেয়েমহলের আড্ডায় দেখা যেত, মেয়েরা এ ওকে ঠাট্টা করে বলছেন, "ওলো, তুই যে মুখে ওলপ দিয়েছিস, তোর মুখে রা নাই।" কিন্তু কোথা থেকে এল এই বিশেষ শব্দ? ওলপ শব্দের মানেই বা কী?
সে কথাও জানাচ্ছেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত নিজেই। আসলে এই শব্দের সঙ্গে জুড়ে আছে পুরনো বাংলার এক আন্তরিক প্রথা। এখন শুভকাজের আমন্ত্রণে কেউ কেউ বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ সারেন বটে, পাশাপাশি ব্যস্ততার দরুন ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে কিংবা ফোনের মাধ্যমেও নিমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু সেকালে এই নিমন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল নাপিতদের। দেশি তুলট কাগজে লাল কালি দিয়ে লেখা হত নিমন্ত্রণের চিঠি। কাগজ বাঁধা হত লাল সুতো দিয়ে। আর চিঠির সঙ্গে কিছু মিষ্টি দিয়ে বাড়ি বাড়ি নিমন্ত্রণ করে আসতেন নাপিত। এর জন্য তাঁর কিছু পাওনাও মিলত। তবে সেই হিসেবের বাইরে, পত্রবাহক যদি মিষ্টিও খেয়ে ফেলেন? সেই সম্ভাবনা রুখতে এক উপায় বের করেছিলেন সেকালের বাঙালি গৃহস্থেরা। মিষ্টির হাঁড়ির মুখে সরা উলটে দিয়ে ময়দা গুলে তার চারদিকে লাগিয়ে দিতেন তাঁরা। অর্থাৎ কার্যত সিল করে দেওয়া হত হাঁড়ির মুখ। যাতে তা খুলে মিষ্টি খেয়ে ফের ঢাকনা আটকে দেওয়ার কোনও সুযোগই না থাকে। এই জিনিসটিকেই বলা হত ওলপ। আর তাই, কেউ মুখ বন্ধ করলে তার সঙ্গে তুলনা টানা হত ওলপ দেওয়ার। ওলপ দিলে যেমন হাঁড়ি থেকে মিষ্টি পড়ে যাওয়ার উপায় নেই, তেমনই মুখ থেকে কথা বাইরে আসার উপায় রাখছেন না তিনি, এমনটাই ছিল এই মশকরার অর্থ।
.................
#Idiom #বাগধারা #silly পয়েন্ট