৪০০ বছরের পুরনো চিত্রকর্মে জাহাঙ্গীরের সঙ্গী 'রোবোটিক্স'
৪০০ বছর আগের এক চিত্রকর্ম। তাতে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা আদপে বাস্তবে কোনোদিন ঘটেইনি। আর সেই ছবিতেই বিশেষজ্ঞরা এমন এক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির খোঁজ পেয়েছেন, যাকে দক্ষিণ এশীয় চিত্রকর্মে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের প্রথম দৃশ্যায়ন বলছেন তাঁরা।
১৬২০ সালে আঁকা এই ছবির প্রধান চরিত্র মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর আর পারস্যের সাফাভি বংশের শাসক শাহ আব্বাস। তাঁদের সৌজন্য সাক্ষাৎকারই ছবির বিষয়বস্তু। ইতিহাস বলছে, এই দুই ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার কখনও ঘটেইনি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনেক সময় এই ধরনের ছবি আঁকানো হত বলে ইতিহাসবিদেরা দাবি করেছেন। ছবিতে তাদের দুই পাশে আছে জাহাঙ্গীরের ভাই আসাফ খান ও পারস্যে নিয়োজিত মুঘল রাষ্ট্রদূত খান আলম। তাদের চারপাশে আছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আনা সাজসজ্জার সরঞ্জাম। এদের মধ্যে একটি সরঞ্জামই কৌতূহল উস্কে দিচ্ছে শিল্প-ইতিহাসবিদদের।
শ্যারন লিটলফিল্ড তার প্রবন্ধ 'দ্য অবজেক্ট ইন দ্য গিফট: অ্যাম্বাসিস অব জাহাঙ্গীর অ্যান্ড শাহ আব্বাস'- এ উল্লেখ করেন, চিত্রটিতে আছে ভেনিসের একটি তৈজসপত্র, চীনের কাপ, একটি তরবারি, ইতালিয়ান টেবিল এবং পানীয় উপস্থাপন করার ইউরোপীয় জলযান (হরিণের উপর বসা ডায়ানা)।
আর এই শেষ বস্তুটি নিয়েই যত কৌতূহল। খান আলমের বাঁ হাতে থাকা হরিণের উপর বসা রোমান শিকারী দেবী ডায়ানার সোনালি ব্রোঞ্জের মূর্তিটি। যেটি হরিণের শিং আঁকড়ে ধরে আছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এখান থেকে পান করা যায় এমন কোনো উপায় অন্তত খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না। এই আশ্চর্যদর্শন জিনিসটা তাহলে ঠিক কী?
শিল্প ও শিল্পের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাঁরা একরকম সিদ্ধান্তে এসেছেন। তাঁদের মতে, এটি একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। যন্ত্রটি রোমান যুগে তৈরি হয়েছিল। এখন এই চিত্রকর্মটি ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের ফ্রিয়ার গ্যালারিতে আছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই গ্যালারির কিউরেটর ছিলেন জার্মান-আমেরিকান শিল্প ইতিহাসবিদ রিচার্ড এটিংহাউসেন। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত তার বই 'পেইন্টিং অব দ্য সুলতান অ্যান্ড এমপেরোর অব ইন্ডিয়া ইন আমেরিকা কালেকশন'- এ প্রথম জাহাঙ্গীরের পেইন্টিংয়ে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, যান্ত্রিক খেলনাটি উদ্ভব হয়েছে ১৬ শতাব্দীতে জার্মানির অগসবার্গে। এতে চাকা আছে। আর হরিণের মাথাটি আলাদা করা যায়, যাতে ভেতরে মদ রাখা যায়।
ওয়াল্টার আর্ট মিউজিয়ামে এমন একটি যন্ত্র ছিল বলে উল্লেখ করেন গবেষক লরেঞ্জ সিলিগ। মিউজিয়ামের কিউরেটর জোয়ানাথ স্পাইসার বলেন, 'ডায়ানা' যন্ত্রটির ব্যাস ৩০ ইঞ্চির মতো। মদপানের জন্য একধরনের খেলায় তা ব্যবহার হতো। যন্ত্রটিতে বাতাস দেওয়া হতো আর তা গ্রামোফোনের মতো ঘুরতে থাকে এবং একসময় থেমে যায়। যে ব্যক্তির সামনে থামবে তাকে একবার মদে চুমুক দিতে হবে। জেসিকা কিটিংয়ের লেখাতেও এই যন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। গিয়ার, চাকা আর স্প্রিং দিয়ে এই ধরনের যন্ত্র তৈরি হত।
কূটনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে এমন অনেক জিনিসপত্রই উপহার হিসেবে লেনদেন হত। ফলে এ-যন্ত্র মুঘল দরবারে কীভাবে এসে পড়ল তা ভেবে চোখ কপালে তোলার কিছু নেই। এর পক্ষে একটি পাথুরে প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরের দরবারের ইংরেজ কূটনীতিবিদ থমাস রো ১৬১৬ সালের এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ রাজা জেমস স্টুয়ার্ট কর্তৃক বাদশাকে দেওয়া উপহারের তালিকায় 'ডায়ানা' শব্দের উল্লেখ করেছিলেন। এই ডায়ানাই হচ্ছে ছবির আশ্চর্য পানযন্ত্র, মনে করছেন ইতিহাসবিদেরা।
........................
#Jahangir #Jahangir Entertains Shah Abbas #Historical Painting #silly point