'হোয়াইট কলার'-দের কর্মক্ষেত্রে 'কারোশি' নিয়ে তেমন কথা হচ্ছে কি?
![](https://firebasestorage.googleapis.com/v0/b/sillypoint-3.appspot.com/o/images%2Fthumbs%2FLKcMM1691096694647karoshi_1366x1366.jpg?alt=media)
কারোশি (Karoshi)। জাপানি শব্দ। মানে হচ্ছে, অতিরিক্ত কাজের ফলে মৃত্যু। 'হোয়াইট কলার'-রা শুনলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসবেন। এসব খেটে-খাওয়া চাষা-শ্রমিকদের সমস্যা মনে করে আত্মপ্রসাদ লাভ করবেন। কিন্তু গত এক দশকের বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, কাজের চাপে মৃত্যু শুধু গায়েগতরে খাটা 'লেবার ক্লাস'দের হয় না। 'সাদা কলার' লোকজন শ্রমজীবী মনে ভাবতে পারেন না বটে, কিন্তু কোম্পানিগুলোর হাতে তারাও কার্যত বকলেস বাঁধা। আর কাজের চাপ সামলাতে না-পেরে মৃত্যুর ঘটনা উঁচুপদের চাকুরেদের মধ্যে ক্রমশই বাড়ছে। এছাড়া রয়েছে কারোজিসাতসু (Karojisatsu) বা অতিরিক্ত কাজের চাপে আত্মহত্যা।
গোটা বিশ্বের কর্মসংস্কৃতির বিপদের দিক চিহ্নিত করতে কেন এই দুই জাপানি শব্দের অবতারণা? আসলে জাপান দেশটা অতিরিক্ত কাজের কুফল ভোগ করার জন্যই খ্যাত। তাই এই সচেতনতামূলক শব্দগুলো জাপান থেকেই গোটা বিশ্ব ধার করছে। আটের দশক অবধিও জাপানের কর্মসংস্কৃতি ভয়ানকরকম বিষাক্ত, অস্বাস্থ্যকর ছিল। জাপান কিন্তু নিজের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে। কর্মীদের অত্যধিক চাপের মধ্যে রাখলে আখেরে ভালো ফল পাওয়া যাবে না, একথা আজ উন্নত দেশগুলোও বুঝেছে এবং মেনে চলছে। পুঁজি আজকাল নিজের স্বার্থেই এটা মেনে নিচ্ছে যে, কর্মীদের থেকে সর্বোচ্চ 'আউটপুট' পেতে গেলে তাদের শরীর-মনের খেয়াল রাখা জরুরি। কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় হাতে-গোনা কয়েকটা কোম্পানি ছাড়া এখনও বাকিরা এই নিয়ে ভাবিত কি? খোঁজ নিলে দেখা যাবে পরিস্থিতি বেশ গোলমেলে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এক্ষেত্রে একটা বিরাট সমস্যা অসংগঠিত ক্ষেত্র। অসংগঠিত ক্ষেত্রঅতিরিক্ত কাজের চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। কর্মীদের সুরক্ষাও সোনার পাথরবাটিই। কিন্তু সংগঠিত ক্ষেত্রের তথাকথিত সুবিধাভোগী 'সাদা কলার'দের ক্ষেত্রেও কি তাই? বড় বড় বেসরকারি কোম্পানিতেও কাজের চাপ বা কাজের সময়সীমা নিয়ে ততটা সচেতনতা দেখা যাচ্ছে কি? সবার অলক্ষ্যে ধ্বস্ত হয়ে চলেছে ন্যূনতম কাজের সময়সীমা। কাজের সময়-অসময় বলেও কিছুই থাকছে না। ফলে মাঝারি থেকে উঁচু-মাইনের অফিশিয়ালদের মধ্যেও বেড়ে চলেছে 'কারোশি'। এর মধ্যে বেশিরভাগই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যু। আর কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা ও মানসিক চাপ সহ্য করতে না-পেরে আত্মহত্যার ঘটনা তো অগণিত। মানসিক স্বাস্থ্যের বিঘ্ন ঘটে, শরীরও সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়ে। মানবসম্পদ হিসেবে দেখার চল আসছে। কর্মীদের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে ভাবছে। কিন্তু বহিরঙ্গে বদল এলে তো হবে না, পরিবর্তন চাই ভিতর থেকে। প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল পালিত হয় কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য দিবস। কিন্তু কর্মীদের কথা সত্যিই ভাবা হচ্ছে তো? বহু কোম্পানিতেই সাপ্তাহিক কর্মসময় ৫০ থেকে ৬০ ঘণ্টা। সেটা ৫ দিন বা ৬ দিনে পূরণ করতে হয়। কোথাও কোথাও সাপ্তাহিক কাজের সময় গিয়ে দাঁড়ায় ৭০, এমনকি ৮০ ঘণ্টাতেও। মনে রাখা দরকার, এটা সংগঠিত ক্ষেত্রেই ঘটে চলেছে।
স্বস্তির কথা, আজকাল কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। 'টক্সিক' আবহাওয়া তো বটেই, অতিরিক্ত কাজের চাপও যে ডেকে আনছে মারাত্মক বিপদ, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো আজকাল তাদের কর্মীদের পেশা ও পেশা-বহির্ভূত জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করাটা নিজেদের দায়িত্ব বলেই মনে করছে। কর্মীদের অধিকার, চিকিৎসাগত সুরক্ষা, মুক্ত কাজের পরিবেশ - সবকিছু নিয়েই আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলোয় মালিকপক্ষের স্বেচ্ছাচারকে নিয়ন্ত্রণে আনার উপায় ভাবা দরকার, সে নিয়ে কারোরই দ্বিমত নেই। কিন্তু শ্রেণিচেতনার কারণে নিজেদের শোষণটা অনেক সময় টের পান না সাদা কলার কর্মীরা। মনে রাখা দরকার, কাজের চাপের কথা উঠলে শ্রমিকশ্রেণির আসলে শ্রেণিবিভাগ হয় না। সে সাদা কলার কর্মীরা নিজেদের যতই আলাদা ভাবুন না কেন। গনগনে মধ্যাহ্ন-সূর্যের নিচে পানের পিক-লাঞ্ছিত গলিপথ হোক বা উঁচু বিল্ডিংয়ের সুসজ্জিত এসি রুম - শ্রমিক হচ্ছে শ্রমিক।
...........................
#Karoshi #Work Stress #overwork death #Professional Hazard #Work-Life Balance #silly পয়েন্ট #Karojisatsu