ভারতের প্রথম কার্বন-নিঃসরণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা : উষ্ণায়ন রোধে পদক্ষেপ
অতিমারির প্রকোপ মোটামুটি সামলে উঠতে না উঠতেই হুড়মুড়িয়ে দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেল। মানবতার জন্য এই সংকট যেমন ভয়াবহ, ততটাই বিপজ্জনক পৃথিবীর সার্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য। কেন? যুদ্ধ হলেই চড়চড় করে বাড়ে জ্বালানির চাহিদা, অস্ত্র কারখানার পালে বাতাস লাগে আর আমাদের নীল গ্রহের ফুসফুস আরও একটু করে বিষিয়ে যেতে থাকে।
দূষণ ও উষ্ণায়নের ক্রমাগত বৃদ্ধির পিছনে প্রচলিত খনিজ জ্বালানির ব্যবহার একটা ভালোমতো মাথাব্যথার কারণ। এ এক এমন শাঁখের করাত, যেখানে গয়ংগচ্ছ মনোভাবের ফলে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা হয়ে উঠবে মাত্রাছাড়া, আবার তাড়াহুড়ো করতে গেলে সভ্যতার কারিগরি উন্নতির পথে নেমে আসবে বিপর্যয়ের খাঁড়া। এমতাবস্থায় যা সবচাইতে প্রয়োজনীয় তা হল দেশের শিল্পক্ষেত্রের চাহিদা এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের তাগিদের মধ্যে একটি সংযোগ বজায় রাখা। ভারতে সেই কাজের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হল সম্প্রতি – প্রতিষ্ঠিত হল “National Centre of Excellence in Carbon Capture and Utilisation (NCOE-CCU)”। IIT (মুম্বই)-এর তত্ত্বাবধানে থাকা এই কেন্দ্রটির মূল উদ্দেশ্য দেশের শিল্প ও শক্তিক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণের মাত্রায় লাগাম পরানো এবং নিঃসৃত কার্বনকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। যেকোনও ভারি শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভুত হয় রাশি রাশি কার্বন ডাই-অক্সাইড, তা সে আপনি কয়লা পোড়ান কিংবা তেল। জ্বালানি ছাড়া যন্ত্র চলে না, আবার জমতে থাকা কার্বনের পরত ধীরে ধীরে অচল করে দেয় আমাদের পরিবেশযন্ত্রকেই। এর মাঝামাঝি সমতা রেখে চলা, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে কঠিন ট্র্যাপিজের নামান্তর। কার্বন নিঃসরণের নিয়ন্ত্রক এই জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্রটি সেই পথে এক এমন মোড়, যেখানে এসে একত্র হবে আধুনিক গবেষণা এবং হাতেকলমে প্রয়োগের অভিজ্ঞতা। সেই তাগিদেই দেশের অন্যান্য আইআইটি এবং উৎপাদন শিল্পক্ষেত্রগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক (DST) এই উদ্যোগ নিয়েছে। নিঃসৃত কার্বনকে সংগ্রহ, ব্যবহার ও সঞ্চয় করার (Capture, Utilization, and Storage) লক্ষ্যে, জলবায়ুর পরিবর্তনে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভূমিকাটুকু বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী যাবতীয় ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা এই উদ্যোগের আশু কর্তব্য। এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যে প্রযুক্তি, তার ক্রমাগত উন্নতিসাধনও হয়ে চলেছে এই কর্মকান্ডের হাত ধরে।
বিগত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে (CoP26) ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কার্বন নিঃসরণ এক বিলিয়ন টন অবধি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অখনিজ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার প্রায় ৫০% বাড়ানোর অঙ্গীকার জানিয়েছে। একদিকে বিশ্বমঞ্চে ভারতের এই পদক্ষেপ, অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খনিজ কয়লার ভান্ডার ডেউচা-পাচামির রঙিন হাতছানি, এই দুইয়ের সাম্য রক্ষায় দিশা দেখাতে পারে শুধু এবং শুধুমাত্র উন্নততর কার্বন-পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তি। যদিও গোটা পৃথিবীর মোট গ্রীনহাউস গ্যাস উৎপাদনে ভারতের অবদান খুবই কম (৪%) কিন্তু গুনতির হিসেবে আমরা তৃতীয় স্থানে, চীন ও আমেরিকার ঠিক পরেই। তাই এই গ্রহকে আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য করে রেখে যেতে যেটুকু দায়িত্ব বর্তায়, তা আমরা অস্বীকার করতে পারি না কোনোমতেই। সেই মানবিক কর্তব্যপালনে বিজ্ঞানই আমাদের প্রধান আয়ুধ, NCOE-CCU-এর স্থাপনা সেই আয়ুধেই শান দেবে।
#উষ্ণায়ন #কার্বন নিঃসরণ সংস্থা #পরিবেশ ও প্রাণচক্র #টিম সিলি পয়েন্ট #ওয়েব পোর্টাল