হিগিনবথামস : ভারতের প্রাচীনতম বইয়ের দোকান
আজ থেকে প্রায় ১৮০ বছর আগের কথা। সে সময়ের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির বন্দরে এসে পৌছলেন এক ভাগ্য বিড়ম্বিত ইংরেজ যুবক, নাম অ্যাবেল জসুয়া হিগিংবটহ্যাম্। সে দিন কে'ই বা জানত, এই যুবক ভারতের পুস্তক বিপণনের বাজারে নিজের নাম চিরতরে লিখে রেখে যেতেই এ দেশের মাটিতে পা দিয়েছেন! বেশি ভণিতা না করেই বলা ভালো, হিগিনবথাম সাহেবের দোকানটিই হল ভারতের সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান, যা আজও চেন্নাইয়ের আন্নাসালাই অঞ্চলে স্বমহিমায় বিরাজমান।
মাদ্রাজে এসে হিগিনবথাম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন স্থানীয় ওয়েসলিয়ান বুকস্টোরের ম্যানেজার হিসাবে। দোকানটি ছিল প্রোটেস্টান্ট মিশনারিদের পরিচালিত এবং ধর্মীয় বইপত্রই মূলত বিক্রি করা হত।ক্রমাগত লোকসানের কারণে ১৮৪৪ সাল নাগাদ কর্মকর্তারা দোকানটিকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এই সুযোগে হিগিনবথাম দোকানটিকে কিনে নিয়ে নিজের স্বাধীন ব্যবসায় নেমে পড়লেন। দোকানটির নাম রাখলেন ‘হিগিনবথামস’। ১৮৬৯ থেকে সুয়েজ ক্যানেলের মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাট উন্নতি ঘটে যায়। তিন মাসের জায়গায় মাত্র তিন সপ্তাহে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে মালপত্রবাহী জাহাজ পৌঁছতে থাকে অনায়াসে। আর এই সমস্ত জাহাজগুলিতে ইউরোপ থেকে বহু মূল্যবান ও দুর্লভ বইপত্র আমদানি করতে থাকেন হিগিনবথাম। বইয়ের দোকানের পাশাপাশি তিনি নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থাও শুরু করেন ১৮৬০ এর গোড়ার দিকে। ১৮৮৪ তে তাঁর সংস্থা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় -- ‘Sweet Dishes : A Little Treatise on Confectionery’ নামে একটি রান্নায় বই। ১৮৭৫ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস্, সপ্তম কিং এডওয়ার্ড যখন ভারতে আসেন হিগিনবথাম-এর দোকান থেকেই তাঁর জন্য বই সংগ্রহ করা হত। ধীরে ধীরে হিগিনবথাম বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধভাবে বইয়ের সাপ্লাই শুরু করেন।তাঁর ক্রেতাদের নাম শুনলে চমকে যেতে হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলী থেকে শুরু করে মাইসোরের মহারাজা, চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কে ছিলেন না সেই তালিকায়! পরবর্তীকালে প্রায় গোটা দক্ষিণ ভারত জুড়ে ‘হিগিনবথামস’- এর বুকস্টোর চেইন ছড়িয়ে পড়ে। এক সুদীর্ঘ সময় ধরে পাঠক রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজও ‘হিগিনবথামস’ এর যাত্রা অব্যাহত।
আরও পড়ুন : বইয়ের তাকেই থাকার ব্যবস্থা : অভিনব আয়োজন জাপানের ‘BOOK & BED’ বইঘরে
........................