'চাষ' করে খায় গোফার প্রজাতির ইঁদুর, দাবি সাম্প্রতিক গবেষণায়
মানবসভ্যতার অগ্রগতির অন্যতম সোপান কৃষিকাজ। কিন্তু কৃষিবিদ্যা শুধু মানুষের আয়ত্বাধীন, এমন না-ও হতে পারে। সাম্প্রতিক একটি পর্যবেক্ষণ বলছে, মানুষের এই কৃতিত্বে ভাগ বসাতে পারে গোফার প্রজাতির ইঁদুর। উত্তর ও মধ্য-আমেরিকার তৃণভূমি অঞ্চলে অতি সুলভ এই ইঁদুরদের জানা আছে কৃষিবিদ্যার প্রাথমিক কিছু সূত্র, এমনই দাবি করছেন একদল জীববিজ্ঞানী। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে 'কারেন্ট বায়োলজি' পত্রিকায়। এ দাবি প্রমাণিত হলে মানুষ বাদে গোফার ইঁদুরকেই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রজাতি বলে গণ্য করতে হবে, যারা কৃষিকাজ জানে।
মাটির নিচেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় গোফার ইঁদুররা। বসবাসের জন্য মাটির নিচে দীর্ঘ টানেলজাতীয় গর্ত তৈরি করে তারা। এক-একটি গর্ত প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। এ-ধরনের প্রচুর টানেলের নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই টানেলগুলির মধ্যেও প্রকারভেদ আছে। কিছু টানেল এরা শুধু বসবাসের জন্য ব্যবহার করে, আর অন্যগুলি ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র খাদ্যের যোগান বজায় রাখতে। মূলত পাম গাছের শিকড়কে কেন্দ্র করেই এই টানেলগুলি নির্মাণ করে গোফাররা। ঘাস ছাড়া এই শিকড়ই তাদের অন্যতম খাদ্য। এইসব শিকড়কে অন্যান্য পোকা-মাকড়দের থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট পরিশ্রম করে গোফাররা। অবাক করার মতো তথ্য হল, পুরো শিকড়কে একবারে খেয়ে ফেলে না গোফাররা। আংশিকভাবে খেয়ে রেখে দেয় যাতে শিকড়গুলি যাতে আবার বাড়ার সুযোগ পায়। তবে গবেষকদের সবচেয়ে বেশি অবাক করে অন্য একটি বিষয়। এই আধ-খাওয়া শিকড়গুলির গোড়াতেই মূলত মল-মূত্র ত্যাগ করে গোফাররা। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই কাজ তারা স্বভাববশত করে না। মল-মূত্র যে সারের কাজ করে, তা গাছের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে তা নাকি জানা আছে তাদের। গবেষকদলের সদস্য, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগের ভেরনিকা সলডেন মন্তব্য করেছেন, "মূলের বৃদ্ধির জন্য সবরকম অনুকূল পরিস্থিতি গোফার ইঁদুররা তৈরি করে।" গোফারদের এই কার্যকলাপকে সে অর্থে 'কৃষিকাজ' নলা যায় কিনা সে নিয়েও অবশ্য বিতর্ক উঠে গেছে। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে হয়তো জীববিজ্ঞানের এক চমকপ্রদ অধ্যায় উন্মোচিত হবে।
......................
তথ্যসূত্র : The New York Times (www.nytimes.com)