মিছিলের ডায়েরি থেকে : ৩
হেমন্তের রাতে বেশি দেরি করতে নেই। ঘুমিয়ে পড়তে হয়। ঘুম না এলে চোখ বুজে থাকো, কথা বোলো না। এক ঋতুর জন্যে ভেবে নাও পৃথিবী ভালো আছে। এলোমেলো চিন্তাদের ক'মাস পরে কড়া নাড়তে বলে, বানিয়ে তোলা অহৈতুকী সুখে ছিপ ফেলে নিমগ্ন হয়ে থাকো। নয়তো, সামান্য ফাঁক পেয়েই বিষাদ আসনপিঁড়ি হবে। শরৎ ফুরিয়েছে সম্প্রতি। ধারাবাহিক নয়, এবার বিক্ষিপ্ত উদযাপন। এগিয়ে আসছে রিক্ততার ঋতু। সমস্ত বল্কল খসিয়ে জন্মদিনে ফিরে যাচ্ছে পৃথিবী। এসময় যারা ছেড়ে যায়, তারা আয়ুর এক অংশ সঙ্গে নিয়ে যায় চিরতরে।কোনো এককালে যারা ভালোবেসেছিল তাদের জন্য মন কেমন করে। প্রত্যাখ্যানের মধ্যেও যেটুকু আমি রাখা ছিল, ফিরে মুছে ফেলতে ইচ্ছে হয়। অথচ তা সম্ভব নয়। এটুকু প্ররোচনাই রাত জাগাবার জন্যে যথেষ্ট। পাতলা কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে জমি। সে কুয়াশা ভোরে উগরে দিয়ে ঘুমে বুজে আসবে চোখ।কখনও ঘুমটুকু বড় মহার্ঘ নিরাময়। অমোঘ। অথচ অধরা। খিদে আর ঘুমের জন্য আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। খিদের বিকল্প প্রেম নয়। ঘুমের বিকল্প নয় ভালোবাসা। ঘুম না এলে মনে হয় দিনটা ঠিক মত শেষ হয়নি । হয়তো কাল শেষ হবে। নয়ত পরশু। এক ঘুম থেকে আরেক ঘুমের মাঝের সেতুতে থেমে যাচ্ছে সময় । অফুর হচ্ছে দিন। দীর্ঘ দিনের ক্লান্তি থেকে নিষ্কৃতি চেয়ে পরিযায়ী বুকে মাথা কুটছে আদর। এও অলীক। ক'রাত জেগে থাকার পরেই আমরা বুঝতে পারি, মৃত্যুর চেয়ে বড় কোনো নিষ্কৃতি নেই। হেমন্তের রাত সেই আপাত মুক্তি খুঁজে নেওয়ার সাহস যোগায়। প্রতিদিন। অবিরত । হেমন্তের রাতে বেশি দেরি করতে নেই। ঘুমিয়ে পড়তে হয়। ঘুম না এলে চোখ বুজে থাকো, কথা...
#বাংলা #মুক্তগদ্য #শৌভিক মুখোপাধ্যায়