মিছিলের ডায়রি থেকে : ২
জ্বরোয়া
জ্বরের মধ্যে সর্বনাশী একটা ব্যাপার আছে।জ্বর হলেই সব ভুলে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। বানিয়ে তোলা দুঃখকে অস্বীকার করে বলতে ইচ্ছে করে, 'আছিস?' কিন্তু আদতে তো কেউ থাকে না। তাই কদিন জ্বরে পুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। কাঁহাতক আর কাল্পনিক প্রত্যাখ্যান মেনে নেব।
জ্বর হলে ঘ্রাণ শক্তি তীব্র হয়ে ওঠে ।আর কারুর হয় কিনা জানি না তবে আমার এটা খুব হয়।মা পাশে বসলে শুশ্রূষার গন্ধ টের পাই, ঠাকুমা মাঝরাতে উঠে খোঁজ নিলে উদ্বেগের।অফিসের সহকর্মীরা যখন বলে ,'আসতে হবে না, থাক।' তখন কখনও মনে হয় স্নেহের গন্ধ পাচ্ছি। কখনও আবার আপসের গন্ধে মাথা ধরিয়ে দিলে জ্বর গায়েই বেরিয়ে পড়ি। এখন যেমন এই লেখায় স্বীকারোক্তির গন্ধ পাচ্ছি। অথচ তোমার গায়ের গন্ধ পাচ্ছি না একটুও।
সেদ্ধ সেদ্ধ খেতে ভালো লাগে না বলে কতবার অসুখ হলেও চুপ করে থেকেছি। তারপরেও মা ঠিক টের পেয়ে গেছে। কখনও ঘুম থেকে সময়মত উঠছি না দেখে, কখনও এক পাশে ফেলে রাখা মোবাইল ফোন দেখে। অবশ্য এটা এখন হামেশাই হয়। কথা থেমে গেছে। মোবাইল পড়ে আছে এক পাশে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে মা মাথার কাছে চুপ করে বসে থাকছে, কিন্তু অসুখটা ধরতে পারছে না।
আরও পড়ুন : মিছিলের ডায়েরি থেকে : ১ / শৌভিক মুখোপাধ্যায়
জ্বরের ঝোঁকে মনে হয় কারুর সঙ্গে কথা বললে বেশ হতো। এসব সময় , যখন কাশির সঙ্গে মৃদু গোঙানি অপরিহার্য হয়ে আসে, মনে হয়, কারুর সঙ্গে বসে কোনো কিছু নিয়ে ভাবলে বেশ হতো।তারপরই মনে হয় অসুস্থ মানুষকে কেই বা সময় দেবে? আমি ও কি দিতাম? ফোন বন্ধ করে দিই। ইয়ে কারুর সঙ্গে মানে সবার সঙ্গে নয় কিন্তু, তাহলে তো আমি জ্বরে পড়তুমই না।
কাশি হলে আমি খুব ভয় পাই। প্রতি দমকে মনে হয়, ছিঁড়ে খুঁড়ে ভেতরটা বাইরে বের করে আনবে। সে আনে আনুক।কিন্তু একই সঙ্গে যদি তোমার কথাও সবাই জেনে যায়! কাশি হলেই চটজলদি কাফ সিরাপ খুঁজি। সেখানেও সমস্যা। মিশে থাকা অ্যালকোহল তোমার কথাই লিখিয়ে নেয়।
জ্বর হলে তাই চুপ করে শুয়ে থাকাই নিয়ম। এখানেও আমি উল্টোটা করি। সুস্থ অবস্থায় চুপ করে থাকি। আর কিছুই না, বেফাঁস মন্তব্য শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে ম্যানেজ করার মতলব। যেমন কদিন পরেই যদি কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন করে, বলব ওসব জ্বরের প্রলাপ।
এভাবেই তো কাটিয়ে দিলাম এতগুলো বছর।
[ছবি : অভীক]
#গদ্য #শৌভিক মুখোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট