মুক্তগদ্য

মিছিলের ডায়েরি থেকে : ১

শৌভিক মুখোপাধ্যায় Jan 1, 2021 at 6:02 am মুক্তগদ্য

সূর্যাস্ত বুকে ভরে যারা বাড়ি ফেরে তাদের মন ভালো নেই। একথা জানতে রাজার চিঠির দরকার হয় না। অসুখের রং ধুলোমাখা রাধাচূড়ার মত । ফিকে হলুদ। অসুখ আর রোগের ফারাক খুব সূক্ষ্ম। একবার যে চিনতে পেরেছে তার বেঁচে থাকা একের ঘরের নামতার চেয়েও সহজ। যারা পারে না তারা অবাক হতে ভুলে গেছে বহুকাল। শীতের ভোরে ময়ূরকন্ঠী আকাশ দেখেও উত্তুরে হাওয়ার ভয়ে জানলা বন্ধ করে দেয়। দরজা খোলে না। তবে তেমন ডাক এলে ফেরানো যায় কি? কাকে, কখন, কী ডাকবে কেউ জানে না। শ্যামলদাকে ডেকেছিল সুমনাদির দুচোখ। পৌষরাতে সাড়া দিয়ে চৌকাঠ পেরিয়ে শ্যামলদা বডি হয়ে ফিরেছিল। সুমনাদিকেও পাওয়া যায়নি আর। সেই থেকে এই পাড়ার মনখারাপ। মাঠের উপর দিয়ে জোরে হাওয়া বইলে, চাপা হা হা শব্দ শোনা যায় । সে শব্দ থামে ঈশ্বরের বাঁশির সুরে। ঈশ্বর, ঈশ্বর পাগল। সে ডাক শুনেছিল সংসারের। কারখানায় লকআউট হলে বাপের ঘর চলে গিয়েছিল রাধিয়া। মুন্নির বয়স তখন মাত্র তিন। ঈশ্বরের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। জোয়ারের জল উঠে মন্দিরের চাতাল ভিজিয়ে দিলে, নাটমন্দিরে বসে হাড়-মাসের খাঁচার ভিতর থেকে সব হারানোর সুর শোনায় ঈশ্বর। মুশকিলে পড়ে চা দোকানের আখতার। ঈশ্বরের বাঁশির সামনে বেচাকেনার চুলচেরা হিসেব গুলিয়ে যায়। জোর করে মন নামিয়ে আনে। চৌমাথার মোড়ের খালি দোকানটা আজকাল ওকে ইশারা করে। দখল নেওয়ার সেলামি জোগাড় করতেই হবে। এঁটো কাপ ডিশ ধুতে ধুতে ভিখু আনমনা হয়ে যায় । লক্ষ্য করেছে শ্মশানঘাটের রোশন ডোম তার নাম ধরে ডাকলে হাত পা এলিয়ে পড়ে। কালিন্দি ডাকলে এমনটা কখনও হত না। নিজেকে কেমন যেন অন্য মানুষ মনে হয়। আখতারের ধমকে মনকে থামিয়ে রাখে অনেকক্ষণ। নদীর ডাকাডাকিতে অস্থির ন্যাড়া মাঠে ধুলোর ঘূর্ণি ওঠে। বাচ্চাদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল ভুলি মাঠের মাঝে বসে পা চাটতে থাকে। এলোমেলো পায়ে ছুটে এসে মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুধ খেতে শুরু করে ওরা। বিরক্ত হয়ে শাসন করলেও শোনে না। নদীর কাছে ভেঙে যেতে যেতে আরো একবার নিজেকে সামলে নেয় পাড়া। কান চেপে 'ছলাৎ ছল' ডাক এড়ায়। মায়ার জোরে।


[অলংকরণ : অভীক] 

#মুক্তগদ্য #শৌভিক মুখোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

7

Unique Visitors

219110