টোকিও থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজ : বিপ্লবী 'আশা সান'-এর ডায়েরি এবার ইংরেজিতে
জাপানে তাঁর সতীর্থরা তাঁকে ডাকতেন আশা সান। অর্থাৎ প্রিয় বা শ্রদ্ধেয় আশা। আসল নাম ভারতী সহায় চৌধুরী। কিন্তু আশা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। পরিবারসূত্রে প্রবাসী ভারতীয়। মাত্র ১৭ বছর বয়েসেই যোগ দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রানি বাহিনিতে। সম্মুখ সমরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন যুদ্ধদীর্ণ টোকিও থেকে থাইল্যান্ডের জঙ্গল। নেতাজির স্নেহধন্যা এই বীরাঙ্গনার অভিজ্ঞতার ঝুলি ছিল অসামান্য মূল্যবান সব ঘটনায় পূর্ণ।
১৯২৮ সালে জাপানের কোবে প্রদেশে আশার জন্ম। দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের ভয়াবহতাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি। তাঁর কৈশোর জুড়ে বোমা-বারুদ, ব্ল্যাক আউট আর ট্রেঞ্চের স্মৃতি। চিনা প্রবাদে কথিত 'আকর্ষণীয়' সময়ে বাঁচার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। ছোট্ট মেয়েটি নিয়মিত লিখে রাখছিল তার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে লিখিত সেই দিনলিপিই এবার ইংরেজি অনুবাদে সাধারণ পাঠকের কাছে এনে দিয়েছেন তন্বী শ্রীবাস্তব, যিনি সম্পর্কে আশার নাতবউ। সম্প্রতি ‘The War Diary of Asha-san: From Tokyo to Netaji’s Indian National Army’ নামে এই বইটি প্রকাশ করেছেন হার্পার কলিন্স।
আশার বাবা আনন্দমোহন সহায় (১৮৯৮-১৯৯১) জাপানে গিয়ে কোবে-তে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শাখা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে তিনি নেতাজির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন। রাসবিহারী বসুর সঙ্গেও কাজ করেছিলেন। আইএনএ-র মিলিটারি সেক্রেটারি হিসেবে নেতাজি তাঁকেই বেছে নেন। আশার মা সতী সেন সহায় ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ভাইঝি। অসহযোগ আন্দোলনে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছিলেন। ফলে আশার রক্তেই ছিল জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের আশার স্কুলস্তরের পড়াশোনা কোবে-তেই। তারপর তিনি ভর্তি হন টোকিওর বিখ্যাত শোওইয়া কোজা কলেজে (বর্তমানে শোওইয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়)।
১৯৪৩ সালে নেতাজি জার্মানি থেকে জাপানে এসে তৎকালীন জাপানের দখলে থাকা সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ বাহিনি তৈরি করেন। বাবা আনন্দমোহন সহায় ও কাকা সত্যদেব সহায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আশা আজাদ হিন্দ বাহিনিতে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। টোকিওয় তিনি এই বাহিনিতে যোগ দেন। তারপরের তিন বছরের সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, নেতাজির সাহচর্য ও অনুপ্রেরণার কথা বিস্তারিত রয়েছে তাঁর এই দিনিলিপিতে।
১৯৪৬ সালে ভারতে ফিরে আসার পর আশা লেখাটিকে হিন্দিতে অনুবাদের চেষ্টা করেন। 'ধর্মযুগ' নামে একটি হিন্দি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লেখাটির হিন্দি অনুবাদ বেরোতেও শুরু করেছিল। পরে বই আকারেও বেরোয়। কিন্তু দুর্বল অনুবাদ ও ছাপার ভুলে ভরা সেই বইটি পাঠকের আনুকুল্য পায়নি। আজ এত বছর পর সেই দিনলিপি নতুনভাবে ফিরতে চলেছে ইংরেজি অনুবাদে। এই দিনলিপির মাধ্যমে দেশের মানুষ কি নতুন করে চিনবেন এক বিস্মৃতপ্রায় স্বাধীনতা সংগ্রামীকে?
..........................
ঋণ : scroll.in, yourstory.com