রূপকথার সাঁঝবাতিরা
বন্ধু কষ্ট পেলে ম্লান হয় আদিগন্ত আলো। ঘনিয়ে আসে ধূপছায়া রং বিকেল। স্কুলবাড়ির হইহল্লায় মিশে থাকে হতভাগা সুর। সেও তো ওই ধূপছায়া রং। যতটা পেলব হলে লোকে তাকে ভালো থাকা বলে তত মসৃণ ছিল না পথ। অন্দর থেকে সদর আর সদর থেকে অন্দর… এই তো বারোমাস্যার পৃথিবী। দিনভর নিভাঁজ কাজ, তারই বিঘতমাত্র শুনশান। সেটুকু হারালে কত আর ক্ষতি বাড়ে, অনাদর?
তবু আসর জমিয়ে বাজানোর মত কোনও গান ধরা দেয় না দোতারার তারে। ব্যথা পায় আঙুলের শিষ। কথা থেমে গেলে যে নিশ্চুপ পড়ে থাকে, নাম তার সাঁঝবাতি। ক্লাসরুম পেলে সুবোধ বালিকা। অথচ হাওয়ায় তার শিখা নেভে। চারদেওয়ালের মসনদে বন্দিনী পাখিটিও শিকল পেরিয়ে ছন্নছাড়া।
কাকে সে ডেকেছিল একা থাকার রাত্রে? এই ভেবে শুকতারা নত হয়। রাতজাগা ঠোঁট দেখতে পায় একটেরে তিল। তাহলে কি চেয়েছিল হৃদয়পুরের বড় রাজধানী! ভেবে হাসি পায় তার।
তারপর আলো ফোটে। বিন্দু দেখলেই সে রচনা করতে পারে সিন্ধুসারস। আর লোনা হাওয়া। মানুষ কখনও প্রকৃত নিকটে আসে না তার। কে যেন সূর্যের দিকে তাকিয়ে দিঘল টানে আঁকছে গায়ত্রীর স্বন। সমস্ত প্রার্থনার সুর এখন ঊর্ধ্বগামী। যদিও বুড়ো গাছে ঢেউ লাগে না আর। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, এখন এসব মানায় না। সে মনে মনে বলে। তক্ষুনি নীলচে চাঁদোয়া জুড়ে আলোছায়ার জাফরি। উঠোনে আছড়ে পড়ে বসন্তের বেইমান বাতাস। নির্লজ্জ। বেহায়া।
আরও একবার বেঁচে থাকতে সাধ হয়।
#মুক্তগদ্য #আলেখ্য মিত্র