ফিচার

খাঁটি হুইস্কির গন্ধবিচার করবে ইলেকট্রনিক নাক

টিম সিলি পয়েন্ট May 6, 2022 at 3:11 am ফিচার

লুকনো বোমা কিংবা অপরাধীর জামা, বাসি লুচি থেকে ব্যক্তিগত রুচি – সবকিছু বিচার করার জন্য ঘ্রাণশক্তিই আমাদের সর্বোত্তম পন্থা। না, সবক্ষেত্রে অবশ্য মানুষের ছড়ি ঘোরানো চলে না, সেসব জায়গায় মনুষ্যেতর প্রাণীদের বিশেষ ক্ষমতাই আমাদের ভরসা। অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী সেই ক্ষমতাকেই আরো একধাপ উপরে তুলে নিয়ে গেছেন, বৈদ্যুতিন গন্ধবিচারের গবেষণায়। ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির এই বিজ্ঞানীরা তাঁদের বানানো ‘বৈদ্যুতিন নাক’ দিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন, থুড়ি, শুঁকেছেন বিভিন্ন হুইস্কির প্রকারভেদ। তারপর রীতিমতো বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, তাঁদের তৈরি এই যন্ত্র প্রায় নির্ভুল দক্ষতায় বলে দিতে পারে কোন হুইস্কি জাল, আর কোনটি আসল! শুনতে মজার মনে হলেও, এই পরীক্ষানিরীক্ষার প্রভাব আদতে বেশ গভীর।

হুইস্কিই বলুন কিংবা অন্য যে কোনও প্রকারের মদ, এই শিল্পের একটা বড় অংশ জুড়ে রমরমিয়ে চলে জাল পণ্যের কারবার। আপনি হয়ত সারাদিনের খাটুনির শেষে আরামকেদারায় গা এলিয়ে এক পাত্তর সিঙ্গল মল্ট নিয়ে বসেছেন, কিন্তু আপনার পেয়ারের ব্র্যান্ডটি যে গঙ্গার জল দিয়ে এই হলাহল বানিয়েছে, তা আপনি জানতেও পারেন না! ব্যবহৃত জল ও কাঁচামালের মান, সুরা উৎপাদনের ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর উপরে নির্ভর করে সুরার স্বাদ, মান এমনকি ব্র্যান্ডিং পর্যন্ত পালটে যায়। অথচ রাসায়নিক এসেন্স ব্যবহার করে এই সবকিছুই নকল করা হচ্ছে বিগত বেশ কিছু বছর ধরে; স্কটিশ ইউনিভার্সিটিজ এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় দেখা গেছে বিভিন্ন প্রকার মহামূল্যবান সিঙ্গল-মল্ট স্কচ যত সংখ্যায় বাজারে আছে, তার প্রায় ৪০% জাল! উঁচুদরের সুরার জন্য উঁচু নজরদারির বন্দোবস্ত থাকলেও সবার ভাগ্যে সে সুযোগ জোটে না। কারণ, সুরার গুণাগুণ পরীক্ষা করা সময়সাপেক্ষ এবং খরচাপাতিও বেশি। কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পরীক্ষা অথবা সেলিব্রিটি সুরা-বিশেষজ্ঞদের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। এই জায়গায় কম খরচে দ্রুত পরীক্ষার বিকল্পের সন্ধান চলছিল অনেকদিন ধরেই, সিডনির এই নতুন উদ্ভাবন সেই চাহিদা অনেকটাই মেটাতে পারে। 

ঠিক কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি? যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৮টি গ্যাস সেন্সর যাদের কাজই হল, প্রাণীদের নাক যেভাবে গন্ধ অনুভব করে, ঠিক সেইভাবে যেকোনও সুরার থেকে ঘ্রাণ-উদ্দীপক মৌলগুলিকে ছেঁকে নেওয়া। এরপরের ধাপে মৌলগুলির রাসায়নিক বিশ্লেষণ হয় দুরকম পদ্ধতিতে – আল্ট্রা-ফাস্ট গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি এবং টাইম-অফ-ফ্লাইট মাস স্পেকট্রোমেট্রি। এই পদ্ধতিগুলির বৈশিষ্ট্য হল, বাজারচলতি গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি বা মাস স্পেকট্রোমেট্রির তুলনায় এরা অনেক দ্রুত অথচ একই দক্ষতায় নিজেদের কাজ সম্পন্ন করে। শেষ ধাপে এর সঙ্গে জুড়িদার হয়েছে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম, অর্থাৎ আগের ধাপ অবধি যা কিছু তথ্য জানা গেছে তাই দিয়ে ক্রমাগত যন্ত্রকে আরও শিক্ষিত করে তোলা। এতরকম কারিকুরি নিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে NOS.E নামের এই প্রোটোটাইপ। সাম্প্রতিক গবেষণায় জনি ওয়াকার, আর্ডবেগ, শিভাস রিগ্যাল এবং ম্যাকালান ব্র্যান্ডের ৩টি সিঙ্গল-মল্ট এবং ৩টি ব্লেন্ডেড স্কচের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছে NOS.E। ফলাফল? প্রতিটি সুরার উৎপত্তিস্থল, ধরন এবং ব্র্যান্ডের নাম বিচারে যন্ত্রটি যথাক্রমে ১০০%, ৯২.৩১% এবং ৯৬.১৫% সফল আর এই গোটা কাজটা সে করেছে চার মিনিটের কম সময়ে! 

ইলেকট্রনিক নাকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যে এই প্রথম বাজারে এল, তা নয়। অনেক আগেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন কারখানার ওয়েস্ট-ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট পর্যালোচনা করা হয়, ক্যানসার কোশ খুঁজে বের করার গবেষণাতেও এর ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু কম খরচে এবং কম সময়ে এতটা সফল ব্যবহারিক প্রয়োগের নজির খুব বেশি নেই। সুরারসিকরা আশ্বস্ত থাকতে পারেন, তাঁদের পাত্রে খাঁটি মৌতাত বজায় রাখার দায়িত্ব যোগ্য হাতে, থুড়ি, নাকেই রয়েছে।  

#হুইস্কি #NOS.E #গন্ধবিচার #ফিচার #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

25

Unique Visitors

219139