ফিচার

দুয়ারে দুর্গা

অধীর পাঠক Oct 5, 2021 at 7:09 am ফিচার


“গতকল্য দুয়ারে ঠাকুর পড়িয়াছিল। রাত্রি দ্বিপ্রহরে কাহারা এ কার্য করিয়াছে তাহা নিশ্চিত করিয়া বলিতে পারি না। পল্লীর ফচকে ছোঁড়াগুলিকে সন্দেহ হয়। কৃপণ বলিয়া তাহারা আমার পিছনে লাগিবার কোনো সুযোগই ছাড়িতে চাহে না। সঞ্চয়ী মানুষদিগের এমন দুর্নাম অবশ্য বাজারে আকছার কুড়াইতে পাওয়া যায়। তজ্জন্য কোনোদিনই তাহাদের কথা ধর্ত্তব্য করি নাই। সেই মুহূর্তে কী করি কিছুই মাথায় আসিতেছিল না। দরজা সম্মুখে মৃন্ময়ী সপরিবারে বিরাজমান। তাঁহাকে ঘরে তুলিব না বাহিরেই রাখিব! কী বিপদ। পূজা না করিলে পরজন্মে এই পাপের ফলশ্রুতিতে শাস্তিভোগের ভয়ও উড়াইয়া দিতে পারিতেছিলাম না। অগত্যা পূজাকার্যে গোটা পঞ্চাশ টাকা গুণাগার দিতে হইল।”



এই আত্মকথন না হয় কাল্পনিক, কিন্তু ঘটনাক্রম ? নির্জলা সত্যি। সেকালে কলকাতায় কাউকে জব্দ করার অন্যতম হাতিয়ার ছিল ‘দুয়ারে দুর্গা’র পরিকল্পনা। রাতের অন্ধকারে কুমোরটুলি থেকে একখানা প্রতিমা নিয়ে সোজা প্রতিপক্ষের বাড়ি। তারপর পুজোর সুবাদে খানিক খরচা করিয়ে দেওয়া। এখনকার ‘কার্তিক ফেলা’-র মতো নিছক আমোদবশেই এই কাণ্ড করা হত। তবে সব সময় তা মজার হয়ে উঠত না। দরিদ্র গৃহস্থের বাড়িতে পুজোর খরচ জোগাড় করতে বাঁধা পড়ত গয়না। সমকালে ‘সমাচার দর্পণ’ এই বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। আরেক সংবাদপত্র ‘সমাচারচন্দ্রিকা’-র মত অবশ্য অন্য। তাদের মতে দেবীর পূজা করে কেউ কখনও সর্বস্বান্ত হয়নি, কল্যাণীর আশীর্বাদে গৃহস্থের মঙ্গলই হয়েছে। পূজার খরচই বা কতটুকু!  অনাড়ম্বর আয়োজনে আন্তরিক ভক্তিটুকুই তো আসল উপচার। তবুও সবসময় সাদরে সপরিবারে গৃহস্থের কাছে দেবী গৃহীত হতেন না। কখনও বাড়ির বাইরে অপাংক্তেয় হয়েই কেটে যেত পাঁচদিন। কখনও বা লক্ষ্মী-সরস্বতীর মূর্তিটুকু আলাদা করে নিতেন অনেকে। সামনে তাঁদের পুজো আসছে, এই সুবাদে হোক না খানিক সাশ্রয়। অবশ্য একটা-দুটো মূর্তি আলাদা করার ঝামেলায় যাননি বেলঘরিয়ার অঞ্চলের জনৈক বাসিন্দা। দোরের গোড়ায় মূর্তি দেখে ভীষণ চটে আবাহনের আগেই বাড়ির লাগোয়া পুকুরে পত্রপাঠ বিসর্জন দিয়েছিলেন। পরদিন প্রতিমা গায়েব দেখে ছেলেরা অবাক। বারোয়ারি পুজো মণ্ডপের মূর্তিটিকে তারাই ইচ্ছে করে রেখে গিয়েছিল। গৃহকর্তার নাস্তানাবুদ দশা খানিক উপভোগ করে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেত। কিন্তু কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম। 

ফুর্তির প্ল্যান মাটিং চকার। 

ব্যস, কাজিয়া শুরু। 


তথ্য ঋণ: স্মৃতির পুজো/ শ্রীপান্থ


কভার ছবির শিল্পী: ঐন্দ্রিলা চন্দ্র


কভার পোস্টার : অর্পণ দাস


'পুজোর রোয়াক' - এর পোস্টার: সৌপ্তিক


#বাংলা # ফিচার #পুজোর রোয়াক #উনিশ শতক # দুর্গাপুজো # অধীর পাঠক

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

21

Unique Visitors

219136