ফিল্ম/ওয়েব সিরিজ রিভিউ

ফেলুদা কি ফিরল

সৌপ্তিক Dec 30, 2020 at 10:57 am ফিল্ম/ওয়েব সিরিজ রিভিউ

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ফেলুদার দ্বিতীয় আত্মপ্রকাশ ‘ফেলুদা ফেরত’। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রথম সিজনে ছয়টি এপিসোডে ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ গল্পটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে ১৯৭৮ সালকে প্রতিষ্ঠা করা বেশ সংকটের। সেই সংকট মোচন হয়েছে অনেকটাই, কিন্তু ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে এসেছে বিহারের অত্যাধুনিক রাস্তা, কিংবা টাইম পিরিয়ড বজায় রাখতে গিয়ে ছোট হয়ে যাওয়া ছিন্নমস্তার মূর্তি।

সংকট শুধু এটাই ছিল না। গল্পে বাঘ আছে। এর আগে রয়্যাল বেঙ্গল রহস্যতেও আমরা ভিএফএক্সের বাঘ দেখেছি। কিন্তু এইবারের শার্দূল বাবাজি অনেক বেশি বাস্তবানুগ। ফেলুদার সিগনেচার মিউজিকের আদলে শ্রীজাতের কথায় জয় সরকারের গানটিও দিব্যি মানিয়ে গেছে। যেমনটা মানিয়ে গেছে অনির্বাণ চক্রবর্তীকে জটায়ু চরিত্রে। খালি পরিচালক জটায়ুকে অশিক্ষিত ভাঁড় প্রতিপন্ন না করে কমিক রিলিফ আদায় করলে ভালো হয়। ‘বাঙালির সার্কাস’ বইটি জটায়ু পড়তে পড়তে আসছিলেন হাজারিবাগে। এমনকি তোপসে স্বীকার করে জটায়ুর দৌলতেই সার্কাস সম্বন্ধে অনেক তথ্য জেনেছিল তারা। কিন্তু এখানে তাঁকে বই বুকে নিয়ে ঘুমোতে দেখি আমরা। তোপসে চরিত্রে কল্পন দত্ত শাশ্বত-পরবর্তী সেরা তোপসে, এমনটা বলাই যেত, যদি তার বাচিক অভিনয় আরও স্বাভাবিকতা পেত। বাচিক অভিনয়ে ফেলু মিত্তিরও ফেল। সুকুমার রায়ের ছড়া জানা বাঙালি ফেলুদা স্পষ্ট বাংলা কথা বলে না এটাও কেমন অবিশ্বাস্য। আর ফেলু মিত্তিরের মগজে ধোঁয়া দেওয়া যদি আবশ্যিক হয় তবে অভিনেতাকেও তাঁর সিগারেটের সঙ্গে সখ্য গড়তে হবে। অভিনয়ে সবচেয়ে যিনি নজর কেড়েছেন, তিনি শঙ্করলাল মিশ্র ওরফে কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি। শঙ্করলাল মিশ্রের সহজ ভঙ্গিটি অভিনেতার সরল হাসিমুখের মধ্যে সর্বক্ষণ ধরা পড়েছে। একই ভাবে কারান্ডিকারের ভূমিকায় ঋষি কৌশিক, অরুণেন্দ্র চৌধুরীর ভূমিকায় অরিন্দম গাঙ্গুলি এবং মহেশ চৌধুরীর ভূমিকায় ধৃতিমান চ্যাটার্জি যা দেখিয়েছেন তা দেখতে গিয়ে কোথাও খটকা লাগেনি। নীলিমা দেবীর ভূমিকায় পৌলমী দাসের অভিনয় দেখে খটকা লাগে চরিত্রের ২৫-২৬ বছর বয়স নিয়ে। কিন্তু…

খটকা ১

‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ গল্পে সিনেমার উপযুক্ত গল্প লিখতে গেলে কী করতে হবে এ প্রসঙ্গে ফেলু মিত্তির জটায়ুকে জানান, ‘একটি দামি মোটরগাড়ি পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়।’ সিরিজের শুরুতেই ফেলু মিত্তিরের উপদেশ পালন করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ফেলুদার নতুন সিরিজে একটা দামি গাড়ি পাহাড় গড়িয়ে ফেলে। 

খটকা ২

এখানেই শেষ নয়, অনাবশ্যক ভাবে ফ্ল্যাশব্যাকের পর ফ্ল্যাশব্যাকে মহেশবাবুর পূর্বজীবনের রাগের প্রদর্শনী চলতে থাকে। থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের মাঝে চলে আসে একটি স্ক্রিনের ভিস্যুয়াল এফেক্ট। যেখানে চরিত্রদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করা হয়। নীল খাতায় হিসেব লেখা অব্যাহতি পায়।

খটকা ৩

যে মহেশবাবু চল্লিশটি খণ্ডের ডায়রিতে গোপনে হালকা পেনসিলে প্রায় সান্ধ্য ভাষায় নিজের জীবনের ঘটনা লিখেছেন, তিনি লালমোহনের সাথে প্রথম আলাপেই বলেন, ‘সঙ্গে যখন গোয়েন্দা তখন গান-গুলিটাই থাক না কি?’! মহেশ চৌধুরির মহিমা বোধহয় ওখানেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে যায়।

খটকা ৪ 

খটকার আরও বড় বিষয় লুকিয়ে রয়েছে অন্যত্র। আজকালকার বাচ্চাদের অধিকাংশ ফেলুদা পড়েনি। তাদের কাছে তাই, যা দেখানো হবে সেটাই ফেলুদা। এটা তাদের ফেলুদার সত্য থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে। সৃজিত মুখুজ্জের মতো পপুলার ডিরেক্টরের হাতে পড়ে ফেলুদা কথার মাঝে মাঝে অনাবশ্যক Pun ঢুকিয়ে দেন। চোর পালালে বলেন, ‘হনুমানটা কে অনুমান করতে পারছি’ কিংবা বাঘ প্রসঙ্গে বলেন ‘হাজারিবাগের বাজারিবাঘ’। এর ফলে ফেলুদার স্থান হয়তো টিশার্টে আরও বাড়বে, কিন্তু আগামীর মনে থাকবে কি?



[ কভার ছবি: অন্তর্জাল ]
#বাংলা #ওয়েব সিরিজ রিভিউ #ফেলুদা ফেরত #addatimes

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

16

Unique Visitors

214978