ব্যক্তিত্ব

ভারতের সংবিধান ‘লিখেছিলেন’ প্রেমবিহারী নারায়ণ রাইজাদা

বিদিশা বিশ্বাস July 14, 2021 at 7:40 am ব্যক্তিত্ব

ভারতের সংবিধান লিখেছিলেন প্রেমবিহারী নারায়ণ রাইজাদা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। এ তথ্য নির্ভুল। পাঠক ভুল বুঝবেন না। ভারতীয় সংবিধানের জনক ডক্টর বি.আর.আম্বেদকরের কৃতিত্ব কেড়ে নিয়ে প্রেমবিহারীকে দেবার কথা হচ্ছে না। প্রেমবিহারী রাইজাদা ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের প্রথম খসড়ার লিপিকর। খসড়াটি ছিল হাতে লেখা। সেই হস্তাক্ষরের মালিক ছিলেন প্রেমবিহারী। ভারতীয় সংবিধান যখন ছাপার জন্য প্রস্তুত,তখন জহরলাল নেহরু প্রস্তাব করেন সংবিধানের প্রথম কপিটি ছাপার অক্ষরে না রেখে ইটালিক ফন্টে ক্যালিগ্রাফি করে হাতে লেখা হোক। আর এই প্রস্তাবটিকেই বাস্তব রূপ দেন সেকালের প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফি রাইটার প্রেম বিহারী নারায়ণ রায়জাদা।

১৯০১ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিল্লির এক বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি-পরিবারেই জন্ম প্রেমবিহারীর। অল্প বয়সে বাবা মায়ের মৃত্যুতে, দাদু রামপ্রসাদ সাক্সেনা ও কাকা চতুরবিহারী নারায়ণ সাক্সেনা তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন তিনি। তাঁর দাদু রামপ্রসাদও ছিলেন একজন ক্যালিগ্রাফার। প্রেম বিহারী দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ক্যালিগ্রাফি আর্ট নিয়ে চর্চা শুরু করেন। সহজাত প্রতিভা অচিরেই তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়।

নেহরুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে,কনস্টিটিউশন হলের একটি ঘরে বসে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে প্রেমবিহারী তাঁর কাজ চালিয়ে যান। সংবিধানটি লিখতে ২৫১ পাতা পার্চমেন্ট কাগজ ব্যবহৃত হয়েছিল। লেখার জন্য ব্যবহৃত নিবগুলি নিয়ে আসা হয় ইংল্যান্ড ও চেকোস্লাভিয়া থেকে। কাজ শেষ হওয়ার পর পান্ডুলিপিটির ওজন হয় ৩ কিলো ৭৫০ গ্রাম। ভাবতে ভালো লাগে, সংবিধানের এই প্রথম পাণ্ডুলিপিতে এক বাঙালির হাতের ছোঁয়াও রয়েছে। নন্দলাল বসু ও তাঁর শান্তিনিকেতনের কিছু ছাত্রছাত্রী এই হাতে লেখা সংবিধানের কপিটির অলংকরণ করেন। নেহরুর নির্দেশে তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে প্রেমবিহারী শান্তিনিকেতন আসেন। কাজের গতি প্রকৃতি কেমন হবে,পাতার কতটা অংশ জুড়ে লেখাও কতটা অংশে অলংকরণ থাকবে - এই সমস্ত বিষয় নিয়ে নন্দলাল বসুর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন : বিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা দৈনিক সংবাদপত্র : ‘দ্য মুসলমান’ / টিম সিলি পয়েন্ট 

১৯৪৯ এর ২৬ নভেম্বর প্রেমবিহারী তাঁর কাজটি শেষ করেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, তিনি স্বেচ্ছায়, সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করেছিলেন। কেবল নেহরুকে তিনি অনুরোধ করেন সংবিধানের প্রতি পাতায় তিনি তাঁর স্বাক্ষর করবেন এবং সংবিধানের শেষ পাতায় তিনি নিজের এবং তাঁর দাদুর নাম উল্লেখ করবেন। নেহরু তাঁর এই অনুরোধ মেনে নিয়েছিলেন।

১৯৬৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রেমবিহারীর মৃত্যু হয়। আনন্দের বিষয় এটুকুই যে শিল্পী প্রেমবিহারী নারায়ণ রাইজাদার লিখন “ধূলায় ধূলি” হয়নি। তাঁর লেখা ভারতীয় সংবিধানের মূল বইটি দিল্লির সংসদ ভবনের গ্রন্থাগারে সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে আজও। তবে বৃহত্তর ভারতবাসী আজও সেভাবে তাঁর নাম জানেন না। 

.........................


#সিলি পয়েন্ট #ওয়েবজিন #web portal #Prem Behari Narain Raizada #B. R. Ambedkar #Constitution of India #বিদিশা বিশ্বাস

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

67

Unique Visitors

215966