শিকারীদের উপদ্রবে বিপন্ন কোটি বছর পেরোনো 'অ্যালিগেটর গার'
দেখতে কুমিরের মতো হলেও আসলে মাছ। লম্বা দাঁতের সারির সঙ্গে সাতটি পাখনা। নাম অ্যালিগেটর গার। জীববিজ্ঞানীদের মতে, অন্তত ১০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিল এই প্রজাতির। অভিযোজনের নিয়মকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে প্রায় অপরিবর্তিত রূপ নিয়েই টিকে রয়েছে এই অদ্ভুতদর্শন মাছ। আর সেই কারণেই ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বা 'Living Fossil' নামেও ডাকা হয় এদের। এহেন মাছেরা শিকারীদের উপদ্রবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ‘ট্রান্সাকশন অফ আমেরিকান ফিশারিস সোসাইটি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র বলছে, এভাবে নিধন চলতে থাকলে অ্যালিগেটর গার-দের বিলুপ্তি আর মাত্র দু-এক দশকের অপেক্ষা।
একটি পূর্ণবয়স্ক এলিগেটর গার লম্বায় ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, ওজনে হয়ে থাকে কমবেশি ৩০০ পাউন্ড। এমনিতে এখন মিসিসিপি নদী ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও এই প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। ছোটো মাছ থেকে শুরু করে কচ্ছপ, পাখি, উভচর এমনকি জলজ স্তন্যপায়ীরাও তাদের খাদ্য। এই খাদ্যাভ্যাসই মৎস্যজীবীদের শত্রু করে তুলেছে তাদের। মিসিসিপি নদীতে অ্যালিগেটর গারের উপস্থিতিই মৎস্যজীবীদের লাভের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। ১৯৩০ সাল নাগাদ পথের কাঁটা সরাতেই নির্বিচারে অ্যালিগেটর গার হত্যা করা শুরু করেছিল মার্কিন মৎস্যজীবীরা। সরকারি মদতও ছিল।‘টেক্সাস গেম’ এবং ‘ফিস কমিশন’ নামের দুটি মৎস্যজীবী সংস্থা তৈরি করেছিল একধরনের বিশেষ নৌকা, যা ইলেকট্রিক শক ওয়েভের মাধ্যমে অ্যালিগেটর গারদের হত্যা করতে পারে। এই পদ্ধতিতে এই প্রজাতির একটা বড় অংশকে মেরে ফেলা হয়। অবশ্য পরবর্তীকালে মার্কিন বনদপ্তরের টনক নড়লে এই মাছ শিকারকে তাঁরা বেআইনি ঘোষণা করেন। তবে তাতে মানুষের আগ্রাসন থামেনি। তার আরেকটি কারণ, অনেকেই বিশ্বাস করেন অ্যালিগেটর গার মানুষের জন্য বিপজ্জনক। তবে সত্যি কিন্তু এরা মানুষখেকো নয়। ধারালো দাঁত থাকলেও তারা যেকোনো খাদ্যকেই গিলে খায়। এছাড়া নদীতে বাঁধ ও অন্যান্য নির্মাণকাজও এদের বিপদের জন্য দায়ী। প্রাগৈতিহাসিক প্রজাতিটি আজ পুরোপুরি ইতিহাসের পাতায় চলে যাবার মুখে। একমাত্র কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থাই এদের বাঁচাতে পারে। জীববিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
#অ্যালিগেটর গার #লুপ্তপ্রায় প্রাণী #পরিবেশ ও প্রাণচক্র #টিম সিলি পয়েন্ট #ওয়েব পোর্টাল