পরাধীন ভারতে বাঙালির মালিকানায় ব্রিটিশ থিয়েটার : দ্বারকানাথ ও চৌরঙ্গি থিয়েটার
পরাধীন ভারতে এ-এক অভাবনীয় ঘটনাই বটে। ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। ব্রিটিশ কলকাতার বিখ্যাত চৌরঙ্গি থিয়েটারের শেয়ারহোল্ডার ছিলেন তিনি। পরে পূর্ণ মালিকানাও পেয়েছিলেন।
আগে যে রাস্তার নাম ছিল থিয়েটার রোড, এখন নাম হয়েছে শেক্সপিয়র সরণি। ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে শেক্সপীয়ারের জন্মের চারশো বছর উপলক্ষ্যে, কলকাতা পৌরসংস্থা থিয়েটার রোডের নাম বদলে শেক্সপীয়ার সরণি রাখে। এক সময় সেখানেই অবস্থিত ছিল কিংবদন্তী চৌরঙ্গী থিয়েটার।
১৮১৩ সালে অ্যামেচার ড্রামাটিক সোসাইটি নামক সংস্থার উদ্যোগে গড়ে ওঠে এই থিয়েটার। কলকাতার বিখ্যাত কৃতী মানুষেরাই এর খরচ বহন করেছিল। এই থিয়েটারের শেয়ার বিক্রি করা হয়েছিল। জানা যায়, ১০০ টাকা করে এক-একটি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছিল। অনেকের সঙ্গে দ্বারকানাথও শেয়ার কেনেন। চৌরঙ্গী থিয়েটার ছিল ওই সময়ের কলকাতার সর্ববৃহৎ প্রেক্ষাগৃহ। বসার জন্যে প্রায় ৩০০ দর্শকাসন ছিল। মিসেস এসথার লিচ, মিসেস ড্রুরিডেনের মতো সে যুগের বিখ্যাত কিছু ইংরেজ কলাকুশলী এই রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শেক্সপীয়ারের হেনরি দি ফোর্থ, রিচার্ড দা থার্ড এবং দি মেরি ওয়াইভস অফ উইন্ডসের মতো একাধিক নাটক অভিনীত হয়েছিল এখানে। তাছাড়া শেরিডান, গোল্ডস্মিথ, কোলম্যান প্রমুখ বিখ্যাত নাটককারদের নাটকও অভিনীত হত। তা সত্ত্বেও প্রথমদিকে এই থিয়েটার তেমন ভাবে লাভের মুখ দেখেনি।
বারো বছর চলার পরে, ১৮৩৫ সালে এই থিয়েটার হল নিলাম হয়ে যায়। তখন দ্বারকানাথ ঠাকুর কিনে নেন এই থিয়েটার। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বহু টাকা লগ্নি করে প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকীকরণও করিয়েছিলেন তিনি। নতুন করে পথ চলা শুরু হয়েছিল চৌরঙ্গি থিয়েটারের। বছর চারেক ভালোই চলছিল থিয়েটার। কিন্তু ১৮৩৯ সালের ৩১ শে মে তারিখে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় থিয়েটারবাড়িটি। আগুনের হাত থেকে বাঁচানো যায়নি চৌরঙ্গি থিয়েটারকে।
কলকাতার সাহেবি থিয়েটারগুলির মধ্যে চৌরঙ্গি থিয়েটার ছিল শ্রেষ্ঠতম। তবে আজ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায় উইলিয়াম উডের আঁকা একটি ছবিতে এবং পুরনো কিছু বইয়ের পাতায়।
..................