বাবু থেকে বারোয়ারি
পুজো! সে হয় বাবুদের বাড়িতে। এলাহি নৈবেদ্য, আলোর রোশনাই, বাইজিনাচের বহর, ভাসানের সমারোহ শহরের চেহারা বদলে দেয়। মানুষগুলোর মনে নেশা লাগে। হঠাৎ করেই দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র্য, অবসাদ সকল উধাও। বাবুদের সিংহদুয়ারে ভিড় জমিয়ে দূর থেকেই দর্শন সারে সাধারণ মানুষ। একের পর এক জুড়িগাড়ি থামছে গেটে। নামছে সায়েব-মেম। কোম্পানি বাহাদুরের প্রতিনিধির আপ্যায়নে বিগলিত গৃহকর্তা। অবশ্য বেশিদিন কোম্পানির বড়কর্তারা এই মেলামেশা সুবিধের চোখে দেখলেন না। বন্ধ হলো সায়েবদের আনাগোনা। পুজোর জৌলুস কমতে শুরু করল।
ব্যবসায় মন্দার প্রভাব তো ছিলই, ইচ্ছাকৃতভাবেও অনেকে আয়োজনে রাশ টানলেন। প্রজার এত বাড়বাড়ন্ত যদি রাজার চোখে ভালো না ঠেকে? তার চেয়ে ঘরের লোকই ভালো। ধীরে ধীরে সাধারণের অংশগ্রহণ বাড়ল। দরজা পেরিয়ে বাবুদের বাড়ির চৌহদ্দিতে পা রাখল তারা। সেসময়ে এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় সমালোচনার ঝড়ও উঠেছিল বিস্তর। তবু সাধারণের জন্যে আগল খুলে গিয়েছিল।
ভাগ্যিস!
বাবুয়ানির দেনা শুধে পুজোর ঘটাপটা সামাল দিতে পারছিলেন না অনেকেই। বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল একাধিক বনেদি বাড়ির পুজো। তখন এগিয়ে এলেন এই মানুষগুলোই। চালু হলো বারোয়ারি পুজো। গুপ্তিপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক বনেদি বাড়ির পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে এলাকার মানুষেরাই এগিয়ে এলেন। বারোজন ব্রাহ্মণকে সামনে রেখে পুজোর আয়োজন শুরু হল। চাঁদার বই হাতে স্বেচ্ছাসেবকরা পাড়ি দিলেন অর্থ সংগ্রহে। কেউ ফিরলেন সাহায্য নিয়ে। কেউ আবার ফেরার পথও মাড়ালেন না! মায়ের কৃপায় চাঁদা উঠল সাত হাজার টাকা। পুজোর পাঁচদিনের খরচ দিব্যি চলে গিয়েও যা বেঁচে রইল তাতে গান-বাজনা, বাইজি নাচের ব্যবস্থাও করা গেল।
ঠাকুরদালান থেকে পুজো মণ্ডপে এলেন ঘরের মেয়ে। একের পুজো হলো সবার পুজো। সেই শুরু …
************************
তথ্য ঋণ: স্মৃতির পুজো/ শ্রীপান্থ
************************