৮৭- তে পা : এ বছরই নতুন আন্তর্জাতিক সম্মান পেলেন অমর্ত্য সেন
৮৬ পেরিয়ে ৮৭ বছরে পা রাখলেন বাঙালির গর্ব অমর্ত্য সেন। আর আবির্ভাব দিবসের মাত্র কিছুদিন আগেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মুকুটে যুক্ত হল আরও একটি অসাধারণ পালক।
১৯৫০ সাল থেকেই জার্মান বুক ট্রেড একটি বিশেষ শান্তি সম্মান পুরস্কার প্রদান করে আসছে। এই বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মানে ভূষিত হলেন অমর্ত্য সেন। ফ্রাঙ্কফুর্টের জার্মান বুক ট্রেডের স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করল এই পুরস্কার। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর, জার্মান প্রকাশনা-সংস্থাগুলির অ্যাসোসিয়েশন ‘বরসেনভেরেইন’-এর প্রধান এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি করিন স্কিমিচ ফ্রিডরিচ এই পুরস্কার ঘোষণা করেন।
৮৬ বছরের বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্ব-ন্যায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার বৈষম্যের বিরুদ্ধে বরাবরই নানাভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। সেই কারণে বর্তমান শাসকের রোষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুঁড়িই তাঁকে নিজের স্বাধীন মতপ্রকাশের রাস্তা থেকে সরাতে পারেনি। ১৯৮১ সালে অমর্ত্য সেনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বই 'Poverty and Famines; An Essay on Entitlement and Deprivation’ প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন দুর্ভিক্ষের একমাত্র কারণ কেবলমাত্র খাদ্যের অভাব নয়, খাদ্য বন্টনে অসাম্য থেকেও দুর্ভিক্ষ চরম রূপ নেয়। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের কারণ নির্ধারণ করতে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন সেই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ ছিল কিন্তু খাদ্য বণ্টনের বৈষম্য থাকায় দরিদ্র ব্যক্তিদের পক্ষে খাদ্য কেনার সামর্থ্য ছিল না। ফলে মৃত্যু হয় লাখ লাখ গরিব মানুষের। তিনি বলেন "কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অনাহারের কারণ যথেষ্ট খাবার না পাওয়া যথেষ্ট খাবার না থাকা এর কারণ নয়"। উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণমূলক অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পথ-প্রদর্শনের কারণে ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেনকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০০৯ সালে তাঁর 'The Idea of Justice' বইটি প্রকাশিত হয়। সমাজ ও মানুষের ন্যায়ভাবনার একটি মেলবন্ধনের কথা বলে এই বইটি। তিনি বলেন "আমি বিশ্বাস করি যে বিশ্বজগতের সমস্ত সমস্যা এক বা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য থেকে আসে।" দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কাজ যাচ্ছেন এই বৈষম্যতার বিরুদ্ধে। তাই তাঁর এই কাজকে শ্রদ্ধা জানিয়েই অর্থাৎ তার কোশ্চেন অফ গ্লোবাল জাস্টিস বা বিশ্বজুড়ে ন্যায় বিচারের পক্ষে তার কাজকে সম্মান জানিয়েই জার্মান পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স অ্যাসোসিয়েশন এই বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নাম প্রস্তাব করেন এবং জার্মান বুক ট্রেড কর্তৃপক্ষ তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়।
বরসেনভেরেইন এই বিশেষ পুরস্কারের জন্য অমর্ত্য সেনের সম্মানার্থে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে জানানো হচ্ছে যে "অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই প্রবীণ মানুষটিকে পুরস্কৃত করার, সামাজিক ন্যায়-এর পক্ষে যার অবদান অনস্বীকার্য এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে যার রচনা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।” এই বছরেই সেইন্ট পল চার্চের ফ্রাংকফুট বইমেলায় এই শান্তি পুরস্কার অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।