চল্লিশ ফুট গাছকে ঘিরে তিনতলা ইমারত : আজমিরের আশ্চর্য গাছ-বাড়ির গল্প
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে হঠাৎ কিছু খেতে ইচ্ছে হলো, আর আপনি বিছানা থেকেই হাত বাড়িয়ে গাছ থেকে একটা পাকা আম পেড়ে খেলেন। অথবা, প্রতিদিন ভোরবেলায় একটা পাখি আপনার বিছানার পাশে বসে মিষ্টি ডাকে আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে যায়। না, এর জন্য আপনাকে স্বপ্ন দেখতে হবে না, রাজস্থানের একটা বাড়ির খবর জানলেই চলবে।
আজমিরের ব্যবসায়ী কুলপ্রদীপ সিং এমনটাই বাস্তবে ঘটিয়েছেন। তাঁর বসতবাড়িটি তিনি তৈরি করেছেন একটি চল্লিশ ফুট উঁচু আমগাছকে কেন্দ্র করে এবং পুরো তিনতলা বাড়িটি নির্মিত হয়েছে গাছটির ন্যূনতম ক্ষতি না করে। ঘটনাটি আপাত-অবাস্তব শোনালেও কুলপ্রদীপ এই কাজটি করেছেন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। ১৯৯৯ সালে কুলপ্রদীপ সিং বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর নির্বাচিত জমিতে একটি কুড়ি ফুট লম্বা আমগাছ এমন অবস্থানে ছিল যে গাছটি না কেটে কোনোরকম নির্মাণকাজ সম্ভব ছিলো না। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ওই জমিতেই তিনি বাড়ি বানাবেন, তাও গাছটির কোনো ক্ষতি না করে। প্রথমদিকে এই কাজ করতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। কোনও মিস্ত্রিই এইভাবে বাড়ি বানাতে রাজি ছিলো না। কিছুদিন পর একজন ইঞ্জিনিয়ারের সাহায্যে আমগাছটি কেন্দ্রে রেখে দোতলা বাড়ির একটি নকশা করান কুলপ্রদীপ, তারপর সেই নকশা অনুসারে বাড়ি তৈরি হয়। গাছটির বেশ কিছু ডালপালা বাড়ির ভিতরে চলে আসে, কিন্তু তাও সেইসব ডাল, নিদেনপক্ষে একটা পাতাও নষ্ট করেননি কুলপ্রদীপ। গাছের সঙ্গে সঙ্গে গাছের অন্য বাসিন্দা পাখিরাও কুলপ্রদীপদের বাড়ির সহ-বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন - চাঁদের মাটিতে গাছ : নাসা-র বিজ্ঞানীদের নতুন কীর্তি // টিম সিলি পয়েন্ট
এরপর কুড়ি ফুট গাছ চল্লিশ ফুট হয়েছে, দোতলা বাড়িও তিনতলা হয়েছে, কিন্তু গাছটির কোনো ক্ষতি আজ পর্যন্ত কুলপ্রদীপরা হতে দেননি। কুলপ্রদীপ, তাঁর স্ত্রী এবং এক ছেলে, বাড়িতিতে বসবাসকারী তিনজনেই আমগাছ আর বিভিন্ন পাখিদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই দেখেন। তাঁরা মনে করেন, তাঁরা যে গাছটির ক্ষতিসাধন করেননি এবং দেখভাল করেন, তার প্রতিদান হিসেবে প্রত্যেক বছর গাছটি তাঁদের প্রচুর সুস্বাদু আম দেয়। কুলপ্রদীপের এই বাড়ি এখন স্থানীয়দের কাছে বেশ দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। এই বাড়িটি লিমকা বুক অফ রেকর্ডস-এও জায়গা করে নিয়েছে।
***************