গোরু খোঁজার কবিতা
১ দাদু বলেছিল মিথ্যে বলবে না কখনও তোমার মা কখনও মিথ্যে বলেনি দাদুর আদেশ মানতে মানতে আমার আর কিছুইলেখা হয় নাপরীক্ষার রচনাগবেষণাপত্রকিংবা পরীক্ষার উত্তরকেবল কবিতায় ফিরে আসিআর গড়ে তুলি আমার সত্যগুলিরউপমাবলয়আমার সত্যি না লিখতে পারার অক্ষমতাগুলি লিখে চলিআর ক্লাসে পড়াতে পড়াতে মনে হয়কি নিদারুণ অসত্য বলে চলেছিগবেষণাপত্র লিখতে গিয়ে মনে হয়জীবনের সঙ্গে তার কি সত্য অমিলদাদুর কথা মেনে চলতে গিয়েআমার না লেখা হল গবেষণা না জীবনমায়ের দিকে তাকালে বুঝিকি অসীম মিথ্যে বলার অপরাধবোধেমা-র সমস্ত জীবন কোনও কথাই বলা হয়ে ওঠেনি।
২গরু খুঁজতে খুঁজতে আমি এ কোথায় এসে পড়লাম!এ কোন গহিন অরণ্য মানুষের থেকে দূরে যারা এখানে বাস করেতারা সবাই বিজাতীয় ভাষায় কথা বলেখুঁড়তে খুঁড়তে পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠে পৌঁছে গেছিএকাপৃষ্ঠার এই পাতাটিও সাদা ও রক্তহীনউল্কির মত ছিদ্রালু কালচে সবুজজঙ্গল আর সাদা পাতার মধ্যেকার এই পথআসলে জীবন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছেঅন্য কোন অস্তিত্বহীন বিশ্বেবুঝতে পেরে যারা যারা ভয় পেয়েছিলতারাও সব ভয়কে মুখোশে আটকে রেখেছে কি?তাদের ভয়ও মুখোশ কিনা জানতে চাইলে বুঝিআমার ভাষা বিজাতীয় হয়ে উঠছেআমার ভাষায় আমার প্রশ্ন গুটিয়ে যায়রোল রোল রোলদড়ির মত পাকিয়ে ফেল তাকেগুটিয়ে ঢুকিয়ে রাখোযা তুমি পাবে পরিচিত ভাষায় তা সত্য থেকে দূরেঅথবা সত্যের প্রকাশভাষা তোমার অধরা জেনেলিখে ফেলো সেইসব কথা যা তোমার নয়মাঝে মাঝে লাল অন্ধকারে তুমি পৌঁছে যাবে সেই জঙ্গলেএই নিয়তি থেকে তোমার মুক্তি নেইএইসব কলম কালি আসলে তোমারও মুখোশএইটুকুই শুধু লিখে ফেলা যায়।
৩খোঁজার জন্য কেন তুমি নিজেকে বেছে নিলেএই প্রশ্ন যাকে তাড়া করে ফেরেতার সবকিছু ছারখার হয়ে যায়এর চেয়ে খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা ভালোসমুদ্রের ভেতর থেকে খুঁজে ফেলা ভালো সেই ঝিনুক যার ভেতর মুক্ত জন্মাবেতার বদলে তুমি বেছে নিলে কবিতাতার বদলে তুমি বেছে নিলে মেয়েদেরতুমি জানতে এই দুটি পথই আসলে জঙ্গলের দিকে যায়যে জঙ্গলের ভাষা মেয়েদেরই তৈরিতাদের নিজস্ব, তোমার কাছে খুলে যাবে মধ্যরাতেআর ভোরবেলা সাদা পৃষ্ঠার সামনে বসে তুমি বুঝবেদিদা এসে কানে কানে বলে যাচ্ছেওরে ও কথা বলতে নেই।আর বাধ্য তুমি লাইনের পর লাইন শুধু লিখে যাবেযা কিছু সত্যের অপরপিঠ। তুমি জানতে না যা তুমি বেছে নিয়েছতা আসলে ভেতর দিকে যায় যার থেকে কোনও আলো বাইরে বেরোয় না।খুঁজতে খুঁজতে তুমি ধরে আনছ এ কাদের গরুযে শুধু দুধ দেয় আর বাছুরপাশের বাড়ির দিদার মত পান চিবোয়আর ছোটবেলার গল্প বলেগবেষণাপত্রে তার এক লাইনও কাজে আসবে না।
৪এইখানে এসে চুলের গুছির মত আলাদা করে নেওয়া ভালোসুবিধাজনকযেভাবে ছ-গুছি সুতো থেকে আলাদা করে নাও দুটি সুতোতিনটিও কখনও কখনওযতটা সূক্ষ্ম অথবা স্থূল তুমি করতে চাও কাঁথার ফোঁড় ঠাকুমার মত তোমাকে তো মিলের শাড়ির পাড় থেকেসুতো বার করতে হবে নাতোমার জোগান আছে তবে বারবার মিলিয়ে ফেলছ কেন অ্যাকাডেমিক্স ও জীবনকবিরা অনেক কথাই বানিয়ে লেখে তুমি কেন বিশ্বাস করতে পারো নাকবিতা খুঁড়তে গিয়ে নিজেকে খুঁড়লে তুমি পাবেএকটি জলশূন্য কুয়োআর গলা-জ্বলা তেষ্টামরুভূমির মাঝখান থেকে পালাবার পথ পাবে নাএই মেয়েজীবনে তুমি তো উটের মত কোনও জলভাণ্ড সঞ্চয় করোনিঅথচ তোমাকে একটা গলা উঁচু উটের মতই লাগছেআর তুমি ভাবছ এক বিন্দু জল ছাড়া এই মরুভূমি তুমি পেরোবে কি করে।
[ অলংকরণ – স্বর্ণাক্ষী ধর ]