কবিতা

গোরু খোঁজার কবিতা

দেবহূতি সরকার Sep 12, 2020 at 4:16 am কবিতা



দাদু বলেছিল মিথ্যে বলবে না কখনও
তোমার মা কখনও মিথ্যে বলেনি

দাদুর আদেশ মানতে মানতে আমার আর কিছুই
লেখা হয় না
পরীক্ষার রচনা
গবেষণাপত্র
কিংবা পরীক্ষার উত্তর

কেবল কবিতায় ফিরে আসি
আর গড়ে তুলি আমার সত্যগুলির
উপমাবলয়
আমার সত্যি না লিখতে পারার অক্ষমতাগুলি লিখে চলি

আর ক্লাসে পড়াতে পড়াতে মনে হয়
কি নিদারুণ অসত্য বলে চলেছি
গবেষণাপত্র লিখতে গিয়ে মনে হয়
জীবনের সঙ্গে তার কি সত্য অমিল

দাদুর কথা মেনে চলতে গিয়ে
আমার না লেখা হল গবেষণা না জীবন

মায়ের দিকে তাকালে বুঝি
কি অসীম মিথ্যে বলার অপরাধবোধে
মা-র সমস্ত জীবন কোনও কথাই বলা হয়ে ওঠেনি।



গরু খুঁজতে খুঁজতে আমি এ কোথায় এসে পড়লাম!
এ কোন গহিন অরণ্য
মানুষের থেকে দূরে যারা এখানে বাস করে
তারা সবাই বিজাতীয় ভাষায় কথা বলে

খুঁড়তে খুঁড়তে পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠে পৌঁছে গেছি
একা
পৃষ্ঠার এই পাতাটিও সাদা ও রক্তহীন
উল্কির মত ছিদ্রালু কালচে সবুজ

জঙ্গল আর সাদা পাতার মধ্যেকার এই পথ
আসলে জীবন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে
অন্য কোন অস্তিত্বহীন বিশ্বে
বুঝতে পেরে যারা যারা ভয় পেয়েছিল
তারাও সব ভয়কে মুখোশে আটকে রেখেছে কি?
তাদের ভয়ও মুখোশ কিনা জানতে চাইলে বুঝি
আমার ভাষা বিজাতীয় হয়ে উঠছে

আমার ভাষায় আমার প্রশ্ন গুটিয়ে যায়
রোল রোল রোল
দড়ির মত পাকিয়ে ফেল তাকে
গুটিয়ে ঢুকিয়ে রাখো

যা তুমি পাবে পরিচিত ভাষায় তা সত্য থেকে দূরে
অথবা সত্যের প্রকাশভাষা তোমার অধরা জেনে

লিখে ফেলো সেইসব কথা যা তোমার নয়

মাঝে মাঝে লাল অন্ধকারে তুমি পৌঁছে যাবে সেই জঙ্গলে
এই নিয়তি থেকে তোমার মুক্তি নেই

এইসব কলম কালি আসলে তোমারও মুখোশ
এইটুকুই শুধু লিখে ফেলা যায়।



খোঁজার জন্য কেন তুমি নিজেকে বেছে নিলে
এই প্রশ্ন যাকে তাড়া করে ফেরে
তার সবকিছু ছারখার হয়ে যায়
এর চেয়ে খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা ভালো
সমুদ্রের ভেতর থেকে খুঁজে ফেলা ভালো
সেই ঝিনুক যার ভেতর মুক্ত জন্মাবে
তার বদলে তুমি বেছে নিলে কবিতা
তার বদলে তুমি বেছে নিলে মেয়েদের
তুমি জানতে এই দুটি পথই আসলে
জঙ্গলের দিকে যায়
যে জঙ্গলের ভাষা মেয়েদেরই তৈরি
তাদের নিজস্ব, তোমার কাছে খুলে যাবে মধ্যরাতে
আর ভোরবেলা সাদা পৃষ্ঠার সামনে বসে তুমি বুঝবে
দিদা এসে কানে কানে বলে যাচ্ছে
ওরে ও কথা বলতে নেই।
আর বাধ্য তুমি লাইনের পর লাইন শুধু লিখে যাবে
যা কিছু সত্যের অপরপিঠ।

তুমি জানতে না যা তুমি বেছে নিয়েছ
তা আসলে ভেতর দিকে যায় যার থেকে
কোনও আলো বাইরে বেরোয় না।

খুঁজতে খুঁজতে তুমি ধরে আনছ এ কাদের গরু
যে শুধু দুধ দেয় আর বাছুর
পাশের বাড়ির দিদার মত পান চিবোয়
আর ছোটবেলার গল্প বলে
গবেষণাপত্রে তার এক লাইনও কাজে আসবে না।



এইখানে এসে চুলের গুছির মত আলাদা করে নেওয়া ভালো
সুবিধাজনক
যেভাবে ছ-গুছি সুতো থেকে আলাদা করে নাও দুটি সুতো
তিনটিও কখনও কখনও
যতটা সূক্ষ্ম অথবা স্থূল তুমি করতে চাও
কাঁথার ফোঁড়
ঠাকুমার মত তোমাকে তো মিলের শাড়ির পাড় থেকে
সুতো বার করতে হবে না
তোমার জোগান আছে
তবে বারবার মিলিয়ে ফেলছ কেন
অ্যাকাডেমিক্স ও জীবন
কবিরা অনেক কথাই বানিয়ে লেখে
তুমি কেন বিশ্বাস করতে পারো না
কবিতা খুঁড়তে গিয়ে নিজেকে খুঁড়লে তুমি পাবে
একটি জলশূন্য কুয়ো
আর গলা-জ্বলা তেষ্টা
মরুভূমির মাঝখান থেকে পালাবার পথ পাবে না
এই মেয়েজীবনে তুমি তো উটের মত কোনও
জলভাণ্ড সঞ্চয় করোনি
অথচ তোমাকে একটা গলা উঁচু উটের মতই লাগছে
আর তুমি ভাবছ এক বিন্দু জল ছাড়া এই মরুভূমি তুমি পেরোবে কি করে।


[ অলংকরণ – স্বর্ণাক্ষী ধর ]   

#Poem #কবিতা #দেবহূতি সরকার #স্বর্ণাক্ষী ধর

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

29

Unique Visitors

219143