দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়েছিলেন পাশ্চাত্য ধারা : শান্তিনিকেতনের এক বিস্মৃত শিল্পী রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে এক ঝাঁক অসামান্য শিল্পীর আবির্ভাব ঘটে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। অথচ সমসময়ের অনেকের তুলনায় তিনি প্রচারের আলো খানিকটা কমই পেয়েছেন। সংসদের চরিতাভিধানে তাঁর উল্লেখ নেই। এমনকি তাঁর নিজের ফটোগ্রাফও খুব সুলভ নয়।
রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯০২ সালে ত্রিপুরায়। ১৯১৭ সালে প্রবেশিকা পাশ করে ১৯১৯ সালে কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। তার দু-বছর পর, ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতন যান। শিক্ষক হিসেবে পান নন্দলাল বসুকে। রামকিঙ্কর বেইজ, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে তিনি সহপাঠী হিসাবে পেয়েছিলেন। উডকাট, লিনোকাট, ড্রাইপয়েন্ট, লিথোগ্রাফি ইত্যাদিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯২৯ সালে কলকাতার আর্ট স্কুলের 'হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার' পদে নিযুক্ত হন। লন্ডনের বিখ্যাত শ্লেড স্কুল অব আর্টে পাশ্চাত্য রীতির শিল্পে শিক্ষা গ্রহণ করেন। আস্তে আস্তে ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পাশাচত্য শিল্পরীতির মিশেল ঘটতে থাকে তাঁর কাজে। সে-সময় লন্ডনে তাঁর একক চিত্র- প্রদর্শনী হয়েছিল। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ - এই তিন বছর কলকাতা আর্ট স্কুলের অস্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন। পরে ১৯৪৯ সালে স্থায়ী অধ্যক্ষ হন। সে-সময় যামিনী রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, অসিতকুমার হালদাররা ভারতীয় রীতিতে ছবি আঁকছিলেন। অন্যদিকে হেমেন মজুমদার, দেবিপ্রসাদ রায়চৌধুরী, রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, গোপাল ঘোষ প্রমুখ শিল্পীদের কাজে পাশ্চাত্য রীতি প্রাধান্য পাচ্ছিল। সব মিলিয়ে
বাংলার শিল্পে সে যেন এক নবজাগরণের যুগ।
তাঁর আঁকা রবীন্দ্রনাথের তৈলচিত্র চিনের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে জায়গা পায়। এছাড়াও মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, যামিনী রায় প্রমুখদের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন তিনি। এছাড়া অন্যান্য ছবির মধ্যে গ্রীষ্মাবকাশ (শান্তিনিকেতন), পিয়ার্সন সাহেবের ক্লাস, আম্রকুঞ্জ, তালধ্বজ (শান্তিনিকেতন) ইত্যাদি বিখ্যাত। তাঁর কাঠখোদাই-কাজের মধ্যে কোপাই, সাঁওতাল কুটির ইত্যাদি আজও শিল্পরসিকদের মুগ্ধ করে। ১৯৫৫ সালে রমেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: এক ‘প্রবাসী’ বাঙালি সম্পাদক ও জগদীশচন্দ্র
ঋণ : সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, আমাদের শান্তিনিকেতন
#রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী #শান্তিনিকেতন # বিশ্বভারতী #ফিচার #ব্যাক্তিত্ব #টিম সিলি পয়েন্ট