অভিমুখ (পর্ব - পাঁচ)
তেপান্তর নাট্যগ্রাম : রূপকথার জন্মগাথা .............................................................................................
বর্ধমানের পানাগড় থেকে ২০ কিমি অথবা বীরভূমের বোলপুর থেকে মাত্র ২৩ কিমি দূরে এগারো মাইল বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে মাত্র ৩ কিমি গেলে সাতকাহনিয়া গ্ৰাম। সেখানেই একদিকে অজয় নদ, অন্যদিকে নিবিড় জঙ্গলের ঠিক মাঝামাঝি 'এবং আমরা'-নির্মিত তেপান্তর নাট্যগ্ৰাম অবস্থিত। তেপান্তর থেকে জয়দেব-কেন্দুলি মাত্র ১২ কিমি দূরে। এই ছোটো ভৌগোলিক বিবরণের মধ্যে থেকেই আঁচ করা যায় যে এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেছে নানা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনাবলি। এখানেই অবস্থিত ৮০০/৯০০ বছর পুরনো ধর্মমঙ্গল কাব্যের রাজা ইছাই ঘোষের গড়, জঙ্গল, দেউল। এই গড় জঙ্গলের ভিতরেই ইছাই ঘোষের শ্যামরূপার মন্দির, বনকাটির ৩০০ বছরের প্রাচীন বিখ্যাত পিতলের রথ, কালিকাপুর- মৌখিরা গ্ৰামের জনশ্রুতিবহুল জমিদারবাড়ি, টেরাকোটার কাজ সম্বলিত অনেক প্রাচীন মন্দির - যেখানে ইতিহাস এখনও কথা বলে, বসে জিরায়। বাতাসে ঘুরে বেড়ায় ইতিহাসের গন্ধ। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত যে সমস্ত পর্যটক তেপান্তর নাট্যগ্রামে বেড়াতে আসেন বা থিয়েটার করতে ও দেখতে আসেন তাদের সামনে পেশ করা হয় এইসব ইতিহাসের ভাষ্য। 'এবং আমরা'-র নির্দেশক কল্লোল ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এই ইতিহাস সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয় আগত বন্ধুদের। বারকয়েক যাওয়ার ফলে এই প্রতিবেদকের সেই মধুর অভিজ্ঞতা আছে। ফলত খুবই সচেতনভাবে 'এবং আমরা' গোষ্ঠী কল্লোলের নেতৃত্বে থিয়েটার ও ট্যুরিজমকে এক করতে পেরেছেন বা বলা ভালো তারাই এ বাংলায় এই ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগী। এখন তাঁরা সব মিলিয়ে এ বাংলার ব্যস্ততম নাট্যদলের একটি, এ কথাও অনস্বীকার্য।
শুধু এলাকার প্রাকৃতিক বা ঐতিহাসিক সম্পদ দেখানো তো একটি ট্যুরিস্ট কোম্পানির কাজের অঙ্গ। তাতেই আটকে থাকেননি তাঁরা। বিকেল মুছে যেতেই যখন সন্ধে ছড়িয়ে যায় তেপান্তরের আনাচে কানাচে, ঝিঁঝিঁর ডাক ঝুপ করে ঘিরে ধরে এলাকার নৈঃশব্দ্যকে, জ্যোৎস্না অথবা বুনোট অন্ধকারে ছেয়ে যায় চরাচর - তখন প্রাকৃতিক ক্ষেত্রকে ব্যবহার করে, প্রাকৃতিক অনুষঙ্গকে কাজে লাগিয়ে এখানে অন্য ধরনের থিয়েটার বা লোকজ কোনও অনুষ্ঠান দেখানো হয়। চলতে থাকে আদিবাসী আঙ্গিকের বিভিন্নরকম বৈচিত্র্যময় উৎসব। শুধু তাই নয়, কেউ চাইলেই এখান থেকে গাড়ি নিয়ে শান্তিনিকেতন, জয়দেব, ডোকরার গ্ৰাম দারিয়াপুর ঘুরে আসতে পারেন।
এই অঞ্চলের প্রকৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অন্যান্য উপাদান-উপকরণকে 'এবং আমরা' বারেবারে তাদের থিয়েটারে তুলে আনার চেষ্টা করেছে। 'অয়দিপাস' হোক বা 'অন্ধযুগ' - কল্লোলের কাজে এলাকার যাবতীয় অনুষঙ্গ বর্ণাঢ্য আয়োজনে মিলেমিশে গিয়ে এক সামগ্রিক উদযাপনের চেহারা নেয়, এ আমরা থিয়েটারের লোকেরা সব্বাই জানি। কল্লোলের কথাতেও ফিরে ফিরে আসে আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে নিজের থিয়েটারের দেহে অন্তঃসলিলা করে দেবার ইচ্ছে - "আমাদের প্রায় সব নাট্য- প্রযোজনাতেই আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের অঞ্চল, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে কিছুটা হলেও তুলে ধরতে সে ইদিপাস, অন্ধযুগ বা এ মিড সামার নাইটস ড্রিম যে নাট্য প্রযোজনাই হোক না কেন।" কল্লোল আরও জানান,"তেপান্তরে সারাবছর নানান কর্মশালা, ট্রেনিং, অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। শীতের সময় নিজেদের ও অন্যান্য দলের আয়োজনে কয়েকটি নাট্য উৎসব হয়ে থাকে। গত ১২ বছর ধরে দোলের সময় আমরা আয়োজন করি তেপান্তর মেলার। এটা এই অঞ্চলের একটি বড় ইভেন্টও বটে। প্রায় শতাধিক পর্যটক এই সময় তিন দিনের জন্য এখানে থাকেন। থাকাখাওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে যে অর্থ নেওয়া হয় সেই অর্থ দিয়েই মেলার আয়োজন হয়ে যায়। এটি মূলত লোক-আঙ্গিকের অনুষ্ঠান। হস্তশিল্প ও অন্যান্য লোকজ শিল্পকলা মিলিয়ে এক উচ্চমানের গ্রামীণ মেলা। প্রচুর মানুষের জমায়েতে এই সময় তেপান্তর সেজে ওঠে নানা রঙে।'
'এবং আমরা' দলটি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমানে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা জুড়ে আজ যে অফ-প্রসেনিয়াম থিয়েটারের বাড়-বাড়ন্ত সেই উদ্যোগের অন্যতম সেনাপতি, সহজিয়া থিয়েটারের প্রবক্তা শ্রী প্রবীর গুহের একটি কর্মশালা থেকে উৎসাহিত ও অণুপ্রাণিত হয়ে এই দল তৈরি করেন কল্লোল ভট্টাচার্য ও তাঁর সহযোগীরা। তারপর থেকে তাঁরা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে নিজেদের থিয়েটার প্রদর্শন করে গেছেন। জল-ঝড়-শীতে ব্যহত হয়েছে মহলার কাজ। ১৯৯৯ সালে সাতকাহনিয়া গ্রামে ৪ একর জমির উপরে তেপান্তর নাট্যগ্রাম গড়ে ওঠে। ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা এই জমিতে প্রথমে মালিকের অনুমতি নিয়ে কাজ করা শুরু হয়। ২০১১-য় সম্পূর্ণ জমিটি 'এবং আমরা'-র নামে কিনে নেওয়া হয়। পতিত এই জমিটি ছিল জলা-জঙ্গলাকীর্ণ, ব্যবহার-অনুপযোগী। কল্লোল জানান, "দলের সকলে মিলে প্রতিদিন রোদ-পড়া ছায়া ছায়া বিকেলে এবং সপ্তাহে একদিন করে সারাদিন জমিটিকে একটু একটু করে পরিস্কার এবং ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে শুরু করি। পুরো জমিটি পরিষ্কার এবং ব্যাবহারযোগ্য করে তুলতে সময় লাগে ৫ বছর। যতটুকু জমি পরিষ্কার হতে থাকে তাতেই সব্জি চাষ করতে থাকি। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় বনকাটি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় আম ও পেয়ারার বাগান তৈরি করা হয়। ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম তৈরি করা হয়। শুরু হয় মাছ চাষ। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দল চালানো এবং সর্বক্ষণের নাট্যশিল্পী তৈরির জন্য উপার্জন করা।" খানিক থামেন কল্লোল। তাকিয়ে থাকেন অনেকটা দূরে। নাট্যগ্রামে তখন বিকেল তার যাবতীয় রংচং নিয়ে নেমে আসছে। বুঝতে পারি, দূরদর্শী মানুষের পরিশ্রম করবার ক্ষমতা থাকলে সে নিজেই আস্ত ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে - প্রচলিত ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেতে অযথা লড়াইয়ে নামতে হয়না তাকে। কল্লোল হয়তো দূরে তাকিয়ে সেই শ্রম আর ঘামে ভেজা পথে হেঁটে এলেন আরেকবার। আবার কথা শুরু করলেন তিনি -"২০০৫ সাল থেকে পরিকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। স্থায়ী ওপেন এয়ার মঞ্চ, থাকার জন্য কটেজ এইসব। এখন তেপান্তর নাট্য গ্রামে রয়েছে একটি ৪০/৩০ ফুট মাপের ওপেন এয়ার মঞ্চ। ১০০০ জন দর্শক বসতে পারবেন। ৪০ ফুট ওপেনিং, ৩০ ফুট ডেপথ, ১৮ ফুট হাইট এবং দুদিকে আরও ২০ ফুট করে, পিছন দিকে আরও ১০ ফুট স্থানসহ আধুনিক মঞ্চ। যাকে অনায়াসে ব্ল্যাকবক্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন সবাই। এর দুদিকে দুটি ৩০ ফুট বাই ১৪ ফুট মাপের টয়লেট-সহ গ্ৰিনরুম এবং ২৫০ দর্শক আসন বিশিষ্ট ব্ল্যাক বক্স থিয়েটার। সঙ্গে একটি ৩৯ ফুট বাই ৩০ ফুট এবং ১৪ ফুট হাইটের ইন্টিমেট স্পেস ও ২-৩ টি প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি অভিনয়যোগ্য ক্ষেত্র। এছাড়া রয়েছে ৫ টি পাকা ডর্মিটরি, ৭ টি কটেজ এবং বাঁশ, দরমা দিয়ে তৈরি আরও ৫ টি ডর্মিটরি। একসাথে ১০০ জন থাকা যায় এখানে। তাছাড়াও রয়েছে একটি বড় খোলা মাঠ, একটি পুকুর, আমবাগান, পোল্ট্রি ফার্ম, দলের কয়েকজন সদস্যের সপরিবারে থাকার জন্য আবাসন ইত্যাদি। কাজের এই ফিরিস্তি দিতে দিতে তার চোখ জ্বলে উঠছিল, শ্রম ও মেধার যুগপৎ জ্যোতি উজ্জ্বল হয়ে আসছিল মুখমন্ডলে। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, নাট্যজগতের যাবতীয় সার্চলাইট যখন নগরকেই ফোকাস করে থাকে, তখন কেন্দ্রকে জাস্ট বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রান্তকেই কেন্দ্র করে ফেলতে পারেন কল্লোলরা। প্রচারের প্রয়োজনীয়তাকে একেবারেই গুরুত্ব না দিয়ে, নাগরিক হ্যাংলামোকে উপেক্ষা করে নিজের হাতে জঙ্গল সাফ করে বানানো নাট্যগ্রামে এসেছেন শহর কলকাতার কমবেশি সমস্ত নাট্যদল। এসেছেন বার্লিনের ফ্ল্যায়িং ফিস থিয়েটার কোম্পানি, মস্কোর রাশিয়ান আকাডেমি ফর থিয়েটার আর্টস, ইটালির ইনস্তানতি ভেজান্তি থিয়েটার এবং বাংলাদেশ ও এদেশের বহু খ্যাতনামা নাট্যদল। ২০১৬ সালে ব্ল্যাকবক্স থিয়েটারের উদ্বোধনকালে রতন থিয়ামের কোরাস রেপার্টারি থিয়েটার এখানে 'ম্যাকবেথ' প্রযোজনা করেন। বি. জয়শ্রীও নাট্য নির্মাণ করেছেন এখানে। বাহারুল ইসলাম, শুক্রাচার্য রাভা, সুবোধ পট্টনায়েকের মতো থিয়েটার ব্যক্তিত্বদের দল এসে এখানে থিয়েটার করে গেছে। কে এন পানিক্কর, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দদশন, এস রামানুজম, সত্যব্রত রাউত, সদানন্দ মেনন, বি জয়শ্রী, রাজীব নায়েক, প্রয়াগ শুক্লা, রতন থিয়াম, ধীরা মল্লিক, জন টেরি কনভার্স, অ্যানা হেলিনা ম্যাকলিন সহ আরো বিখ্যাত সব নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিশেষজ্ঞরা এসেছেন। অ্যালবামের পাতা যেন শেষ হতে চায় না তেপান্তরের। এ যেন এক অনন্ত রূপকথার অ্যালবাম তৈরি করেছেন কল্লোল। করেই চলেছেন। কী অতুলনীয় নিঃশব্দ বিরাজ করে চারদিকে, অথচ কাজ হয়ে চলেছে নিরন্তর। সত্যি আমাদের নাট্যচর্চায় এ এক দৃষ্টান্ত, যার সামনে দাঁড়িয়ে তাজ্জব হয়ে যেতেই হয়।
কল্লোলকে বলি, "দেশের নানা প্রান্তের ফিসফাস চলে, মহানগরের থিয়েটারমহলে কান পাতলে শোনা যায়, তোমার সমস্ত কিছুই নাকি নানা গ্রান্টের টাকায় চলে। নানা জায়গা থেকে টাকা পাও তুমি। এ বিষয়ে কী বলবে?"
ঠোঁটের কোণে নিরুপায় হাসি এনে কল্লোল জানান, "এই পরিকাঠামো চালাতে গেলে তো টাকা লাগবেই। ২০১৫ সালে ব্ল্যাক বক্স থিয়েটার গড়ার জন্য অর্থ দিয়েছেন কর্ণাটকের বিশিষ্ট থিয়েটারব্যক্তিত্ব বি. জয়শ্রী। উনি রাজ্যসভার নমিনেটেড এম পি ছিলেন। অর্থ দিয়েছেন ভারত সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রক। ২০১৮ সালে ৪ টি পাকা ডর্মিটরি তৈরি হয়েছে এম.পি. মমতাজ সংঘমিত্রার তহবিল থেকে। ২০১০ সালে ইন্টিমেট স্পেসটি তৈরি হয়েছিল কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সহযোগিতায়। বাকি সবকিছুই তৈরি হয়েছে নিজেদের উপার্জিত অর্থে। পরিশ্রমের টাকায়।"
কল্লোলের এই সপাট উত্তর এই কথাই ভাবায় যে আলস্যপ্রিয়,কর্মহীন মানুষের কাজই হল সফল সহকর্মীর ছ্যাঁদা খুঁজে বার করা। আর সেখানে ড্রিল ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে সেই ছ্যাঁদাকে গর্তে পরিণত করে সহকর্মীকে হত্যা করার রাস্তা বের করা। কল্লোলদের নাট্যগ্রাম সেই পরিশ্রমবিমুখ ফেসবুকপ্রিয় নব্য নাট্যসম্প্রদায়ের মুখে সজোরে থাপ্পড়। আসলে এমনই হয় বোধহয়। যারা কর্মে অবিচল, লক্ষে সচল এ সমাজ তাদের মূলত ধান্দাবাজ অথবা অসৎ, উচ্চাকাঙ্খী হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করে। আর তা-ও দাবিয়ে রাখতে না পারলে আজকাল সহজ উপায়, তাঁকে উদ্যোগী সংগঠক বলে দেগে দেওয়া - শিল্পকর্মে তার দক্ষতা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকা। কল্লোলের সঙ্গে তথা সাতকাহনিয়ার সঙ্গে ভারতীয় নাট্যের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব রতন থিয়ামের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। প্রশ্ন করেছিলাম এ বিষয়ে। কল্লোল জবাব দিলেন,"জানি এ নিয়েও বাইরে কথাবার্তা হয়। আমার থিয়াম স্যারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ২০০৫ সাল থেকে। তখন থেকেই ওঁর কাছে আমাদের যাতায়াত চলতে থাকে। আমাদের প্রায় সকলেই বহুবার ওঁর দলে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। উনি নিয়মিত তেপান্তরে আসতে থাকেন ২০০৮ সাল থেকে। আমাদের প্রায় প্রতিটি প্রযোজনা উনি তেপান্তরে বসে দেখেছেন। মতামত দিয়েছেন। সবসময় নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। কত কী আজও জেনে চলেছি ওঁর কাছ থেকে। উনি আমার প্রেরণা। সরাসরি কোনও প্রভাব কাজের মধ্যে প্রতিফলিত না হলেও আমাদের নাট্যপ্রযোজনাগুলো আর সামগ্রিকভাবে তেপান্তর নাট্য গ্ৰাম গড়ে তুলতে ওনার দ্বারা নানাভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি আমি।"
সত্যিই এরপরে আর অযথা খোঁচা দিতে ইচ্ছে করছিল না কল্লোলকে। রাতের নাট্যগ্রামের রূপ তখন মুগ্ধ হয়ে দেখছি দু চোখ ভরে। ওদিকে খাবার ডাক পড়ে গেছে। ভাত, ডাল, চিকেন। সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন অতিথিরা। আপ্যায়নে ব্যস্ত 'এবং আমরা'-র সদস্যরা। সেদিকে এগোতে এগোতে কল্লোলকে বলি, "আর কি কিছু বলতে চাও?"
স্বভাব-লাজুক, মিতভাষী কল্লোল রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। যেন নিরন্তর জ্বলে থাকার জেদ ছেনে নিতে চাইলেন তারাদের থেকে। তারপর আস্তে আস্তে চোখ নামালেন। বললেন, "তেপান্তর নাট্যগ্ৰামকে একটি আদর্শ নাট্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পড়াশোনা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা- নিরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে চাই। লাইব্রেরী, আর্কাইভ, এক্সিবিশন সহ আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর একটা ভালো সংগ্ৰহশালা বা মিউজিয়াম তৈরি করতে চাই। সারাবছর নানা উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে হয়। পোল্ট্রি, ফিসারি, ট্যুরিজম, বিভিন্ন সংস্থাকে স্পেস ভাড়া দেওয়া, নানা ট্রেনিং, ওয়ার্কশপের আয়োজন করে এবং তার পাশাপাশি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের রেপার্টরি গ্ৰান্ট দিয়ে তেপান্তর নাট্যগ্রাম এবং দল চলে। আমি সহ দলের ২০ জন সদস্য সর্বক্ষণের জন্য দল ও তেপান্তরের কাজে নিয়োজিত। এঁরা আর অন্য কোনও কাজের সাথে যুক্ত নন। দলের উপার্জিত অর্থে এঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। এই প্রবাহ যাতে বজায় থাকে, তার জন্য যা যা করতে হবে তাই তাই করতে চাই।"
................................
অভিমুখ (পর্ব : চার)
[লেখক 'অশোকনগর নাট্যমুখ' দলের পরিচালক ও কর্ণধার]
….………………………………………..
[পোস্টার : অর্পণ দাস]
[পোস্টারের মূল ছবি ও অন্যান্য ছবিগুলি লেখকের সূত্রে প্রাপ্ত]