বিবিধ

অভিমুখ (পর্ব: এক)

অভি চক্রবর্তী Sep 1, 2021 at 4:50 am বিবিধ

অমল আলো থেকে বিদ্যাধরী হয়ে ক্যাফে থিয়েটার

ভয়াবহ লকডাউনের বিবিধ নেগেটিভিটির লাভাস্রোতের মধ্যেও সামান্য রোদে ভেজা টিলা দেখতে পাচ্ছিল বাংলার থিয়েটারমহলের অ-প্রচারিত একাংশ। এসব টিলা বা সামান্য উঁচু মালভূমি অঞ্চল আগে ছিল না তা নয়, কিন্তু আশার রৌদ্রকিরণ তার প্রতি তন্নিষ্ঠ হতে পারেনি স্বাভাবিকভাবেই। জগৎ-জোড়া দ্রুততা সেটুকু নিবিড় হবার সময় দেয়নি হয়তো। 

গৌরচন্দ্রিকা খানিক কাব্যময় হল বটে, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে কোনও সদর্থক পরিবর্তনই শেষ বিচারে কাব্য। সৎ যে কোনও কর্মকান্ডেরই চারিত্র্যে বোধহয় কাব্য থাকেই। যে রোদের ঝলকের উল্লেখ দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, এবার তার মুখোমুখি বসা যাক খানিক। মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে সংক্ষেপে বলে দেওয়া যাক, গোটা বাংলা জুড়ে প্রসেনিয়াম মঞ্চের নাট্যের সঙ্গে সঙ্গে নানান স্পেস-কেন্দ্রিক যে নাট্যচর্চা চলছে তারই নির্মাণভাষ্য নিয়ে এ লেখার অবতারণা। শুধু শিল্পগত নয়, সার্বিক কাঠামোগত বিন্যাস বা অর্থনীতির আভাস পাবার লক্ষ্যে নিরপেক্ষ এবং যথাসম্ভব নির্মোহ কিছু কথার বিনিময়ই এ লেখার মূল কাজ। নদীর যেমন বয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না কোথায় যাচ্ছে সে, কোন বাঁকবদলে কতটা বদলে যাচ্ছে তার ডাকনাম – এ ঠিক তেমনই এক লেখা। বা লেখা হয়ে ওঠার প্রস্তুতি। 

নাট্যমুখ নাট্যপত্রের শুরুর দিকে সুমন মুখোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া হয়েছিল। কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের এখানে যেই বললাম প্রসেনিয়াম করব না, সঙ্গে সঙ্গেই কথা উঠল তাহলে কি রাস্তায় করবেন? প্রসেনিয়াম আর রাস্তার মাঝেও যে অনেক নাট্যাভিনয়ের স্পেস থাকতে পারে সে কথা বোঝানো মুশকিল।” দু-দশক আগে এক জিজ্ঞাসু ছাত্রের মনে এই বক্তব্য আমূল গেঁথে গিয়েছিল। তারপর নানা ঘটনাবলী, লেখা, কথোপকথন, পারফরমেন্স, না-পারফরমেন্সের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে নিজের মধ্যেই এ ধারণা দৃঢ় হচ্ছিল যে, প্রসেনিয়াম নাট্যের ভার এই রাজ্য তথা দেশের শুধু মাত্র একটি নাট্যাবলম্বী দলের পক্ষে (যে দল নাট্যের মধ্যে দিয়ে অনুকম্পাহীন আর্থিক স্বাবলম্বন পেতে চায়) বেশ মুশকিলের, খানিকটা ঝামেলারও। প্রসেনিয়াম মঞ্চের চৌকোণা বাক্সের রকমফেরহীন একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি এবং নাগরিক নাট্যের সঙ্গে যুঝে ওঠবার জন্য অর্থ জোগাড়ের চাপ মন ও শরীরকে ক্রমাগত স্যান্ডউইচ করে দিচ্ছিল। ভিতরে ভিতরে পরিবর্তনের মিছিল হাঁটছিল – কিন্তু প্রত্যহের ব্যস্ততা আমাদের নতুন পথের সন্ধানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সেই সুযোগ করে দিল কোভিড। থমকে যাওয়া সময়ে আশার পাখিরা নীড়ে ফিরল। সময় পেল খানিক থিতু হবার। সারা রাজ্য জুড়ে শুরু হল নতুন নতুন পারফরমেন্স স্পেস গড়ে ওঠার উদ্যোগ। বাংলায় লকডাউনের বহু আগেই কল্লোল ভট্টাচার্য ও তাঁর নাট্যদল ‛এবং আমরা’-র স্পেস ‛তেপান্তর’ নাট্যগ্রাম, বীরভূমের ‛নিভৃত পূর্ণিমা নাট্যগ্রাম’, পার্থ গুপ্তের 'ব্লসম থিয়েটার', 'থিয়েটার হাউস', গোবরডাঙা নকসা ও শিল্পায়নের 'স্টুডিও থিয়েটার' এবং অবশ্যই প্রবীর গুহের নাট্যদল ‘এ এল টি’-র আখড়া কাজ শুরু করেছিল। কাজ শুরু হয়েছিল  সদ্য প্রয়াত ঊষা গাঙ্গুলীর রঙ্গকর্মী-র থিয়েটার হলেও। ছিল পদাতিক। এমনকি ‘অন্য থিয়েটার’-এর নাট্যভবনেও কাজ শুরু হয়েছিল লকডাউনের ঠিক আগেই। কিন্তু এই কাজগুলোর অভিধা ছিল ‛বিকল্প’ কিংবা ‛অন্যধারা’। এখানে মনে করিয়ে দিই বাদল সরকারের অঙ্গনমঞ্চ বা মুক্তমঞ্চকেও বহুকৌণিক কারণেই 'বিকল্প','অন্য', 'অপর'  নামে আখ্যায়িত করে দীর্ঘকাল ধরে তৃপ্তি অনুভব করে আসছে বঙ্গজ নাট্যজনেরা। 


লকডাউনকালে বাংলায় প্রথম যে ব্যক্তিগত থিয়েটার স্পেসের সূচনা হয় তার নাম ‘অমল আলো’। এই প্রতিবেদক-নাট্যকর্মীর নিজস্ব নাট্যদল অশোকনগর নাট্যমুখের উদ্যোগে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে গত পয়লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে এই স্পেসের সূচনা হয়। কলকাতা থেকে ৪২ কিমি দূরে অবস্থিত এই নাট্যক্ষেত্রে প্রতি শনি-রবিবার অভিনয় করে চলেছেন রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রচুর নাট্যদল। উদ্বাস্তু-অধ্যুষিত, ছিদ্রান্বেষী, অন্তর্কলহে লিপ্ত, তোষামোদপ্রিয় এবং গ্ল্যামারসর্বস্ব বঙ্গীয় শিল্পচর্চায় এ তো রীতিমতো এক ঘটনাই বটে। ‘বিপ্লব’ আখ্যা দেবার সময় হয়তো এখনও আসেনি। সব বহমান ঘটনাই বিপ্লবের দিকে যাবে এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বপ্নের থেকে দূরে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। বরং স্বপ্নগুলোকে নিজস্ব সামর্থ্যে ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত করে তোলাই এখন আমাদের একমাত্র অভীষ্ট। কোনও কিছু ত্যাগ করে অন্য কিছুকে আঁকড়ে ধরা নয়, বরং ধীরে ধীরে এক বদলে যাওয়া নাট্যভাষাকে রপ্ত করতে চাইছি আমরা। আমরা ‘অশোকনগর নাট্যমুখ’। ‘অমল আলো’ স্পেস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা থেকে বিভিন্ন নাট্যদল এখানে এসে কাজ করবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। নাট্যমুখও স্ব-উদ্যোগে আয়োজন করে নানা সেমিনার ও কর্মশালার। এই কেন্দ্রকে ঘিরে নির্মাণ করে তাদের নতুন নাট্য 'কুহকিনী বীররাত্রি'। এই বাংলায় অন্যধারার নাট্যে যাঁর নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য সেই প্রবীর গুহ, মণীশ মিত্র থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের গুণী নাট্যজনেরা ‘অমল আলো’-য় আসছেন, অভিনয় করছেন। আলোকিত হচ্ছেন এলাকার মানুষ। ব্রাত্য বসু এসেছেন আমাদের ক্যান্টিন ‘বিদ্যাধরী’-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে। এসেছেন স্বনামধন্য নাটককার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বা শেখর সমাদ্দারের মতো বহু গুণীজন। ফুডকা অর্থাৎ ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ি এসেছেন। চেখে দেখেছেন রান্নাঘরের বিশেষ আইটেম নিরামিষ খাসির মাংস। ওয়ার্কশপ ও বক্তৃতায় উপস্থিত হয়েছেন দেব সাহিত্য কুটিরের ডিরেক্টর রূপা মজুমদার। যাদবপুর মন্থন, বালার্ক নিমতা এখানে নাট্যোৎসব করেছেন। সুদূর বালুরঘাট বা সিউড়ি থেকেও দল আসছেন। তাঁদের থাকা খাওয়া নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমরা ‘বিদ্যাধরী : মেঘেদের রান্নঘর’ নামের উদ্যোগটি নিয়ে ফেলেছিলাম। ‘অমল আলো’-র ক্যাম্পাসেই। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এই ঘরে রসনাতৃপ্তির জন্য থাকছে অভিনব আয়োজন আর নাট্যদলগুলোর জন্য রয়েছে ক্যান্টিন ফেসিলিটি। শুধু তাই নয়, গত বছর চতুর্থী থেকেই, শুধুমাত্র নাট্যদলের মধ্যে বিষয়টি সীমিত না রেখে এলাকায় এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছিল এই রান্নাঘরের খাবার। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যাতে এখানে এসে কেউ জন্মদিন পালন করতে পারেন, বিবিধ সামাজিক আয়োজন করতে পারেন। কারণ একটি নাট্যদলের নির্মিত খাবারের জায়গায় শুধু রসনার তৃপ্তি হলে তো হবে না, হতে হবে চিত্তবিনোদন - মস্তিস্কের মধ্যে সঞ্চালন করে দিতে হবে অন্যরকম হাওয়া। এটাই তো আমাদের আসল কাজ। 

এই উদ্যোগের মধ্যেই নতুনতর এক ভাবনা মাথা চাড়া দিচ্ছিল। ডুয়ার্সে ঘুরতে গেলে আজকাল অনেকে আদিবাসী নাচ দেখেন। জঙ্গলের ফাঁক থেকে যখন উঁকি দেয় ঘোলাটে চাঁদ, ছেঁড়া জ্যোৎস্নায় যখন সবুজ জেগে ওঠে অন্যতর রূপে - ঠিক সেই সময় মাদলের আওয়াজ, নাচের বোল আর পোড়া মাংসের স্বাদ আমাদের পরিচিত। পরিচিত শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ি হাটে বাউলদের গানবাজনা। সেইসব পরিচিত বিনোদনকে আমাদের অঞ্চলের সামর্থ্য এবং বিস্তারের মধ্যে আঁটিয়ে নেবার ভাবনা থেকেই ‘বিদ্যাধরী’-তে সরাসরি থিয়েটার করবার কথা মাথায় এল আমাদের। সংগীত নয়, কথকতা নয়, কবিতা-আলেখ্য নয়, নৃত্য নয় - সরাসরি থিয়েটার। মণীশ মিত্র ‘দ্য ওয়াল’ ওয়েব পত্রিকায় এ নিয়ে লিখেছিলেন - "অভি চক্রবর্তী তাঁর মহড়াকক্ষটিকে একটি অভিনয়ক্ষেত্র হিসাবে প্রস্তুত করে ফেললেন। ছোট আকারের, মানে গঠনের দিক থেকে ছোট, ভাবনা বা বিষয়ের তাৎপর্যে নয়, এমন সব অভিনয় করার জন্য অভি চক্রবর্তীর এই স্পেস 'অমল আলো' এক অনন্যসাধারণ নির্মাণ বলে আমি মনে করি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই 'অমল আলো'-কে ঘিরে যে চর্চার সূচনা হয়েছে। একটা নাটকের দল কতটা দূরদর্শী হলে তাদের অভিনয়ের জায়গার সংলগ্ন 'মেঘেদের রান্নাঘর' নামে একটি খাবার জায়গাও তৈরি করতে পারে! প্রায় সকল থিয়েটারের গায়ে একটি ক্যাফে এবং একটি বইয়ের দোকান থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। হ্যাঁ, রান্নাঘরের পাশে বইয়ের দোকান ও আছে। আমি  এই ভাবনাকে কেন এত স্বাগত জানাচ্ছি? তার কারণ হল, আমার ধারণা, এই রান্নাঘর 'অমল আলো'-র নাট্যচর্চাকে এই অঞ্চলের মানুষজনের সঙ্গে অন্য একটা স্তরে জীবনের অংশ হিসাবে মিশিয়ে দিতে পারবে। অভি আমাকে বলেছিলেন, যদি কেউ জন্মদিনের উৎসবে বা উপণয়নের মতো ছোট অনুষ্ঠানে খাবারের অর্ডার করেন আমরা তাদের বলছি, সঙ্গে একটি ছোট নাটক বা পাপেট শো বা চলচ্চিত্র দেখানোর আয়োজন রাখুন। কেবল খাবার সরবরাহ করব না। বোঝা যায় উদ্দেশ্য কতটা স্পষ্ট এবং থিয়েটারকে পুষ্ট করার ব্যাপারে কতটা সঙ্গত। নিজের কমিউনিটিকে দীর্ঘদিন উপেক্ষা করে, কলকাতার থিয়েটার থিয়েটারের ক্ষতি করেছে। এখন তো থিয়েটারের বৌদ্ধিক চর্চার পর্যায়েও নেই এই বিষয়টা! কেবল গ্ল্যামারের চর্চা। আর তাই এর সমান্তরালে যখন থিয়েটারের শিল্পীদের দেখি, তাঁরা তাঁদের থিয়েটারকে আটপৌরে করে পাশের বাড়ির দালানেও পৌঁছে দিচ্ছেন, তখন অন্য একটা তৃপ্তি হয় বই কী। 'অমল আলো'-য় এখন নিয়মিত নাটকের অভিনয় হচ্ছে। বেশ ভিড় করেই লোক দেখতে আসছেন।" 


এই ভিড়কে কাজে লাগিয়েই আমাদের যাত্রা। অর্থাৎ নাট্য ও খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে একটা ঘটনা। শিল্প যেখানে অপশনাল নয় আর, খাবারের মতোই অপরিহার্য হয়ে উঠছে। প্রত্যহের সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-কে মাথায় রেখে ছেলেবেলার পাঠ্যে পড়া ও’ হেনরির বিখ্যাত গল্প ‘গিফট অফ দ্য ম্যাজাই’ থেকে তৈরি হল নাট্য ‘টু সোলস’। লিখলেন দলেরই সদস্য তরুণ কবি ঋভু চক্রবর্তী। অভিনয় করলেন ঋভু ও তিয়াসা। প্রেম যে মেটেরিয়ালিস্টিক নয়, বস্তুগত আদানপ্রদান যে প্রেমের ক্ষেত্রে কত অপ্রয়োজনীয় - তা নিয়েই নাট্যকাহিনি। নাট্যনির্মাণে নানা অ্যাঙ্গেলে আয়না ব্যবহার করেছিলাম। যেহেতু স্পেসের ওরিয়েন্টাশেন বহুমুখী, বা দর্শকও বসেছেন নানা জায়গায়, তাই আয়না রাখা। আয়নায় ফলিত সূর্যালোক চরিত্রকে আলোকিত করছিল। চরিত্রদের একেবারে সামনে থেকে রক্তমাংসে দেখতে পেয়েছেন দর্শক - শুনেছেন তাদের হৃৎস্পন্দন, দেখেছেন তাদের বুকের ওঠাপড়া, চোখের কোণের চিকচিকে জল। এভাবেই পঁচিশ মিনিটের নাট্য তৈরি করেছি। অভিনয় হয়েছে দুপুরে - রোদের আলোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মুড বদলে বদলে। শীতের শহরের গল্প বলেই আমরা এই নাট্য বেছে নিয়েছিলাম, কারণ বিদ্যাধরী আপাদমস্তক কাঠের বাড়ি। পাহাড়ের মতো। ফলত এই ক্যাফেতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে এমন গল্প নির্বাচন করা হল যেখানে কাঠের বাড়ির টেক্সচারই হয়ে উঠল সেট। রিয়েলিটির ফাঁকেও ছোটো ছোটো নন রিয়েলিটি ইঞ্জেক্ট করেছিলাম নানান মুভমেন্টের অনুষঙ্গে। আমাদের অন্যান্য প্রোডাকশনের মতো এখানেও শাশ্বতী দাস মুভমেন্ট ও কোরিওগ্রাফি সামলেছেন। ঋভু আর তিয়াসার অভিনয়কে জোরদার করতে লাগাতার পরিশ্রম করেছেন সংগীতা চক্রবর্তী। অভিনয়ই এখানে মূল অস্ত্র এবং এটাই তিয়াসার প্রথম সিরিয়াস ফিল্ডে অভিনয়। তাই সংগীতাকে খাটতে হয়েছে। মোমেন্টাম তৈরিতে এবং তার প্রবহমানতা বজায় রাখতে নজর রাখতে হয়েছে শিকারি বাজের মতো। ফলত প্রথম দুটি অভিনয়েই (মাত্র পঁচিশজন করে বসা সম্ভব) দর্শকদের নজর কেড়েছে এই নাট্য। অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সহ একত্রে টিকিটের মূল্য নির্ধারিত থাকছে এই নাট্যের। একেবারেই ক্যাফের মেজাজে, আন্তরিক অন্তরঙ্গতায় অভিনয় হয়েছে। ভবিষ্যতেও তাই হবে। ঋভু এ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন তাঁর অনুভূতির কথা - "এ নাটক পাহাড়ে বসেই লেখা। পাঠক বুঝতে পারবেন কীভাবে পাহাড় মেঘ কুয়াশা একাকার হয়ে গেছে এই লেখায়। তাই আমার মনে হয় বিদ্যধরীর কাঠের দেওয়াল ঘেরা পাহাড়ি কটেজ এই নাটককে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে। ক্যাফে থিয়েটারে অভিনয় করতে গিয়ে অভিনয়ের নিজস্ব একটা ভাষা খোঁজার চেষ্টা করেছি আমরা, কতদূর পারছি জানিনা কারণ কাজটা খুব কঠিন। অডিয়েন্স এখানে কোনো ক্রাউড বা ভিড় নয়, এ অভিনয় কোলাহলের সম্মুখীন হয়না কখনো, বরং এক শান্তিপূর্ণ স্পেস যেখানে প্রত্যেক অডিয়েন্স কে আলাদা করে চেনা যায়, তাদের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলে থিয়েটার। এখানে দর্শক অসচেতন হলে তার প্রভাব পড়ে অভিনয়ে। তবে এমন চ্যালেঞ্জিং কাজের আলাদা একটা নেশা আছে, সফল হলাম না বিফল জানিনা, এই নেশাতেই কাজ এগিয়ে চলবে আশা রাখি।" আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে একজন আর্টিস্টের মধ্যে ব্যর্থতা লালনের শক্তি থাকতে হয়; আবার তথাকথিত সফলতার বাজারি খোঁজের বিপক্ষে চলবার মতো তাগিদ ও তাগদ থাকতে হয়। আমি ভাগ্যবান, আমাদের নাট্যদলের ক্রিয়েটিভ টিমে সেই বোধ বা জোর আছে। 


ভিনসেন্ট ভ্যান ঘখ, তুলস লোত্রেক, পল গগ্যাঁ, সেজোয়ানের মতো শিল্পীরা একসময় একত্র হয়ে প্যারিসের ছোট ছোট ক্যাফেতে ছবি টাঙিয়ে রাখতেন বিক্রির আশায়। তাদের সাহায্য করতেন রং-বিক্রেতা পিয়ারি ট্যাঙ্গি। এভাবেই দানা বেঁধেছিল বিখ্যাত ইমপ্রেশানিস্ট মুভমেন্ট। আমরা এত বড় কোনো আর্ট মুভমেন্টের অংশীদার হতে পারব কিনা জানি না, কিন্তু এই বাংলা জুড়ে স্পেস থিয়েটার নিয়ে যে চমকপ্রদ কাজকর্ম শুরু হয়েছে অশোকনগর নাট্যমুখ তাতে দৈনন্দিন জুড়ে থাকতে পারছে - এটাই আমাদের গর্ব। ‘বিদ্যাধরী’-তে নাট্যাভিনয় সেই গর্বে যোগ করল নতুন মাইলফলক।


[লেখক 'অশোকনগর নাট্যমুখ' দলের পরিচালক ও কর্ণধার]

….……………………………………….. 


[পোস্টার : অর্পণ দাস] 

[পোস্টারের মূল ছবি ও অন্যান্য ছবিগুলি লেখকের সূত্রে প্রাপ্ত] 






#অভি চক্রবর্তী #অভিমুখ #ইন্টিমেট থিয়েটার #ফ্লেক্সিবল থিয়েটার স্পেস #অর্পন দাস #সুমন মুখোপাধ্যায় #অমল আলো #বিদ্যাধরী #ক্যাফে থিয়েটার #বাংলা পোর্টাল #ওয়েবজিন

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

59

Unique Visitors

215844