উপন্যাস

সোনার বাড়ি জমি (চতুর্থ পর্ব)

সরোজ দরবার Aug 12, 2021 at 7:06 pm উপন্যাস

ধারাবাহিক উপন্যাস



******************************

আগের কথা: সোনাপুর গাঁয়ের ছেলে বরুণ, তার সঙ্গে সেখানে হাজির তার ভালোবাসার জন, সেমিমা। ভোটের মরশুম এখন সোনাপুরে। হাওয়ার গায়ে লেগেছে পালটা টান। বদলের হাওয়া। কিন্তু সেই বিষবাষ্পের ভেতর শুশ্রূষা হয়ে বসে থাকে কেউ। পিসিমা যেমন। কবেকার মানুষ, অথচ কার ধর্ম, কী ধর্ম, তা নিয়ে মাথাব্যথাই নেই। তেমন জাদুবুড়োও। কিসসার ঝুলিতে মিলেমিশে ঢুকে পড়ে সর্বজন।  

******************************


চতুর্থ পর্ব

.............................


[সাত]

সোনাপুরের একটা গোপন খবর এখানে আপনাদের দিয়ে রাখি। সকলে জানে না। মানে, খেয়াল করেনি। তবে বুড়ো হুজুরেরা সবই জানেন, মুখে কিছু বলেন না। কথাটা হল, বহুদিন হয়ে গেল এখানে আর পাখিরা গান গায় না।

 তা বলে আপনি যে পাখির ডাক শুনতে পাবেন না, তেমনটা নয়। এই যেমন সেমিমা শুনছে অজস্র পাখির ডাকাডাকি আর মনে মনে ভারী খুশি হয়েছে। সেটুকু সকলেই শুনতে পাবে। কিন্তু বুড়ো হুজুরেরা, যাঁদের চামড়া কুঁচকে গেছে, তারা জানে, পাখির ডাক আর গান এক জিনিস নয়। পাখিরও প্রয়োজনের ডাক আছে। প্রয়োজন ফুরোনোর গান আছে। কিন্তু ও দুটোর ফারাক করতে গেলে শোনার কান চাই। আজকাল আর সেই কান নেই। পাখিদেরও গান নেই। 

তবে কিনা ব্যাপারটা এত সহজও নয়। স্রেফ শোনার কান নেই বলেই পাখিরা গান গাইছে না, এরকম জলের মতো সরল জিনিস নয়। আমি বুড়ো হুজুরদের জিজ্ঞেস করেছি, বলি কর্তা, খোলসা করেই বলো দিকিনি। এ তল্লাটে পাখির গান নেই কেন? 

বলামাত্র ওদের চোখমুখ বদলে যায়। কেমন একটা ভয়তরাসে ভাব গোটা মুখ জুড়ে। আমি বলি, হল কী? সামান্য একটা কথায় এত ভয় ভয় করো কেন? বুড়ো হুজুরেরা এ ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। তারপর যে যার গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে। যেন জানলার পাল্লা ভেজিয়ে দিয়েছে। আমি তবু ছাড়ি না। একটু ঝুলোঝুলি করলে পরে ওরা একটা খাঁচা দেখিয়ে দেয়। কাছে গিয়ে দেখি সেখানে কারা যেন অনেকগুলো পাখিকে ঢুকিয়ে রেখে গেছে। পাখিগুলো হয় প্রাণভয়ে, নয় নিয়তি মেনে নিয়ে অল্প অল্প ডাকছে। বিলাপ করছে সম্ভবত। আর বুড়ো হুজুরেরা বলছে, ওইটেই নাকি পাখির গান।

কিন্তু আমি আপনাদের বলছি শুনুন। এই সোনাপুরে নিশ্চিত কোনও শাপ লেগেছে। নইলে পাখি কেবল ডেকে ডেকেই সারা, গান গায় না কেন! 

সবকিছু কতখানি বদলে গেলে, পাখির ব্যর্থ ডাককেই পাখির গান মনে হয়, একবার ভাবুন দিকি!  

সবই এখন বদলাচ্ছে। খুব দ্রুত। দেশও ক্রমাগত চরিত্র বদলাচ্ছে। এমন নয় যে এই প্রথমবার। আগেও বদলেছে। আর বদলাবে যে, সেই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এবারের বদলটা সর্বোতভাবেই মানুষের বিরুদ্ধে। 

এই সোনাপুর বা এর আশেপাশের ‘অ’পুর, ‘ক’পুর, ‘ঙ’পুর গ্রামগুলোয় যদি আপনারা কখনও যাওয়ার সুযোগ পান তো দেখবেন মানুষ কী চায়। যদি কেউ ভাবে, মানুষ গাড়ি চায়, বাড়ি চায়, মোবাইল চায়, শপিং মল চায় – তার ভাবনা যে ভুল, এমন কথা বলব না। কিন্তু বলব যে, সে আসল কথাটিই জানে না। মানুষের সঙ্গ করলে জানা যায় মানুষ কী চায়। এই আমরা যারা গল্পের খোঁজে খোঁজে গ্রামে দেশে ঘুরি, মানুষকে তো দেখি। দেখতে দেখতে, একটা জিনিস শুধু জানি, মানুষ একটু বেঁচে থাকতে চায়। মানুষের কাছে প্রতিদিন বেঁচে থাকাটাই একটা উৎসব। এই যে দেখুন, হাড়ভাঙা খাটনি হবে জেনেও মানুষ কাজ করতে বেরোয়। এ আসলে তার বেঁচে থাকাটাকে উদযাপনের অঙ্গ। যে মানুষ কাজে বেরিয়েছে, তাকে আপনি পালঙ-তোষক দিয়ে আরাম করতে বলুন, দেখবেন সে ফিরেও তাকাবে না। এই যে মানুষ হাহুতাশ করে, বলে, এত দুঃখ-কষ্ট আর জীবনে সয় না। তা সে মানুষকে যদি গিয়ে কেউ বলে, এই জীবন রেখে তাহলে আর কী হবে? একে ছাড়ান দাও। দেখবেন, কিছুতেই সে রাজি হবে না। এইটেই মজা। মানুষ ঘাঁটলে মানুষ চেনা যায়।  আসলে সে যে বেঁচে আছে, জন্ম আর মৃত্যুর ভিতর এই সময়টাকে সে নানাভাবে অনুভব করতে চায়। ছুঁয়ে থাকতে চায়। তার বাইরে সে কিছু চায় না।

এই সহজ কথাখানা আবার বড় মানুষেরা খুব ভালো করে জানে। তারা নানাভাবে মানুষের এই সহজ বেঁচে থাকাটাকেই বানচাল করে দিতে চায়। আজ এটা, কাল ওটায় তাকে এমন বিভ্রান্ত করে দেয় যে, সে যে বেঁচে আছে, আর বেঁচে থাকাটাই যে তার একটা উৎসব, সেইটেই মানুষ ভুলে যায়। বলতে খারাপ লাগে, কিন্তু যারা এই ঘুলিয়ে দেয়, তারাই আবার দেশ চালায়।  তাই মানুষের এই সহজ বেঁচে থাকার কথাটা যারা বলে, তাদের এইসব দেশ চালানো লোকেরা পছন্দ করে না। এদের মধ্যে পাখিও আছে। পাখি তো শুধু নিজের ভালোলাগার জন্য গান গায় না। মানুষের কাঁধে যখন বেঁচে-থাকা বোঝা হয়ে চেপে বসে, তখন সে গান শুনিয়ে বলে, দেখো পৃথিবীটা কত হালকা আর সুন্দর। তাতে মানুষের ভার লাঘব হয়। সে পরদিন আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নটুকু এই দেশ-চালানো মানুষগুলোর ধর্মে সইবে কেন! তারা তখন খেপে যায় আর পাখিকে বন্দি করে। আমার ধারণা, সোনাপুরে সেরকমই কিছু একটা হয়েছে। এমন দিন তো আগে ছিল না। সবই বদলাচ্ছে। আর শোনা যাচ্ছে, এবারের বদলটা নাকি পুরোপুরি মানুষের বিরুদ্ধে।

এক বুড়ো হুজুর বলে, এত কথায় কাজ কী! বদলকে আজ অব্দি কেউ আটকাতে পেরেছে? শুনে এবার আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে যাই। বলি, কর্তা, তা হয়তো যায় না। তা বলে বদলটা ভালো কি মন্দের দিকে, সেটা খেয়াল করবেন তো! 

সেই হুজুর খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে, আর দেশ? দেশের বদল আছে না নেই? আমি বলি, দেশও তো বদলাচ্ছে। 

হুজুর বলে, সে মানুষের পক্ষে না বিপক্ষে? আমি বলি, সে কোনদিক থেকে দেখা হচ্ছে, তার উপর দাঁড়িয়ে। 

বুড়ো হুজুর বলে, দেশে কি পাখি গান গায়?

আমি চুপ করে যাই। সত্যি বলতে অনেকদিন তো হয়ে গেল, পাখির গান শুনতে পাই না আর। 

বুড়ো হুজুর বলে, পাখি কি দেশে এখন খাঁচায় থাকে?

আবার আমি চুপ। দেখেছি তো থাকে। কী আর আলাদা বলব!

বুড়ো হুজুর এবার খানিক থামে। তারপর বলে, মানুষ কি বেঁচে আছে দেশে? 

আমি আর কথা বাড়াই না।     

বলতে গেলে যা সব বলতে হয়, সে কি আর বলার মতো কথা! দেশ এখন তার শিল্পী, সাহিত্যিক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের জেলবন্দি করে চলেছে। যতরকম সমালোচনার স্বর থাকে, সব বন্ধ করে দিচ্ছে। একরকমের নিরঙ্কুশ আধিপত্য চেপে বসছে জনজীবনের উপর। যেখানে সমন্বয় নেই। সহনশীলতা নেই। যেন আছে শুধু অজস্র ফাটল। ধান উঠে যাওয়া ফুটিফাটা জমির মতো পড়ে আছে মানুষের জীবন। সেইসব ফাটল দিয়ে ক্রমশ বিষ ঢুকছে আর ঢুকছে। যেন তার শেষ নেই। জমিতেও যা, জীবনেও তা।

 অথচ যে সব ফাটলের উপর ভিত্তি করে এই ক্ষমতার রাজার এমন করে চেপে বসা, সেসব যে আগে ছিল না, তা নয়। আগে সেই ফাটলগুলির দিকে যত কম সম্ভব তাকিয়ে জীবন নিজের মতো করে চলতে চাইত। এখন সে-ই বিচ্যুতিগুলিই আকর্ষণের মূল কেন্দ্র হয়ে গিয়েছে। 

একবার এক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। তিনি শুধুই মানুষ। তাঁর পরিচয় পরে দেবখন। তা এইসব নিয়েই সাতকথা পাঁচকথা হচ্ছিল। মানুষটা কথা বলতে বলতে বললেন, ইতিহাস পড়েছেন?  আমি বললুম, কেন পড়ব না? মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ, পলাশীর যুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম – কী না কী পড়েছি! মানুষ তখন বললেন, বাংলার ইতিহাস পড়েছেন? আর, বাঙালির ইতিহাস?  আমি কিঞ্চিৎ মাথা চুলকোচ্ছি দেখে, তিনি অভয় দিয়ে বললেন, অপ্রতিভ হবেন না। আপনার দোষ নেই। আমরা কেউই প্রায় পড়িনি। সেই কারণেই তো এমন নড়বড় করতে করতে এগোচ্ছি। 

আমি এতে আনন্দিত না দুঃখিত হব, ভেবে পেলাম না। তিনি আবার বললেন, আপনাকে প্রশ্ন করছি বলে আবার আমাকে গুরুমশাই ঠাউরে বসবেন না যেন! গুরুগিরি ভারী আজব নেশা। তবু মনে যখন হল, উঠলই যখন কথাটা, তাহলে দুটো কথা বলি।

আমি আগ্রহভরে তাঁর মুখের দিকে তাকালুম। তিনি তখন বললেন, এখনকার দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলে মনে হয়, পাল রাজাদের রাজপাট আর সেন বংশের গোঁড়া রাজত্বের ভিতর যে ফারাক ছিল, সাম্প্রতিক অতীতের সঙ্গে আমাদের বর্তমানের ঠিক সেরকমটাই তফাৎ এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চতুবর্ণ ভাগ হওয়া সমাজ থেকে ব্রাহ্মণ্য সংস্কার - কী না ছিল পাল রাজাদের আমলে। আবার বৌদ্ধ সংস্কৃতি, আর্যেতর দেবতা তাদের সংস্কৃতি- সেসবও ছিল। সব মিলিয়ে-মিশিয়ে সাঙ্গীকরণের মাধ্যমে বাঙালি একটা স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, জাতীয়তার স্বাদও পেয়েছিল। সেন আমলে সেটুকু আর রইল না। সমন্বয় গেল ঘুচে। বর্ণ, শ্রেণি, আচার, ব্রাহ্মণ্যের ক্ষমতা এমন জোরদার হল, রাষ্ট্রীয় প্রয়াসেই হল যে, একটা মিলেমিশে থাকা সমাজ থাকে থাকে ভাগ হয়ে গেল। জনজীবন তাই মেনে নিতে বাধ্য হল বটে।

আমি যেন সব বুঝেছির মতো করে মাথা নাড়লাম। তিনি বললেন, মাথা নাড়লেন কেন?

আমি বলি, হ্যাঁ, মানে কই না তো!

তিনি বলেন, নাড়লেন যে! স্পষ্ট দেখলুম।

আমি বলি, ও এমনিই নেড়েছি। কিছু মনে করবেন না।

মানুষ বললেন, না না আমি মনে করব কেন? তবে, এবার যেটা বলছি সেটা আপনি মনে রাখবেন। 

আমি ফের আগ্রহে ওঁর মুখের দিকে তাকালুম। উনি বললেন, কী জানেন তো মানুষের ইতিহাসের একটা নিজস্ব বিচার থাকে। সেখানে সব লেখা থাকে। যার যা হিসেব কিছুই বাধ পড়ে না। যে পাল রাজাদের বাঙালি মন থেকে ভালোবেসেছিল, যে-রাজাদের সময় বাঙালি নিজের স্বাজাত্যবোধ খুঁজে পেয়েছিল, সেই রাজাদের কথা তাঁদের লোককথায় অন্তর্ভুক্তও করে নিয়েছিল। কিন্তু সেন রাজাদের সে ঠাঁই জোটেনি। তাঁদের যা কীর্তি সবই সভাকবিদের বন্দনায়। মানুষ যা মনে রাখতে চায়, তাই-ই মনে রাখে। কিন্তু যা রাখতে চায় না, তাও তো তাকেই সহ্য করতে হয়। 

আমি এবার কিছু বলি না। চোখ নামাই। তিনি বলেন, কই মাথা নাড়লেন না যে বড়! বলেই হেসে ফেললেন। তারপর আপনমনে বলতে থাকলেন, যে-শাসক এখন পঁচাত্তর বছরের স্বাধীন দেশটার সমন্বয় ধুলোয় মিশিয়ে ফের থাকবন্দি করছে, তাকে মানুষ মনে রাখবে কি-না সে তো পরের কথা। আপাতত এই আগুনের কুণ্ড অতিক্রম তো করতে হবে।

এইসবের ভিতর আসছে গণতন্ত্রের সবথেকে বড়ো উৎসব। লোকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে সেই গণতন্ত্রকে, যে গণতন্ত্রের ভিতর বসে অনায়াসে আইনের শাসনবলে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করে তার আধিপত্য। এ এক আশ্চর্য মিথ্যের জাল। তবু এই-ই তো চলছে।  সেই করতে করতে যে বল্লালি যুগ ফিরে এল, তাতে এক শ্রেণির মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। রোজ ভয় দেখানো হচ্ছে, এই বুঝি দেশ ছাড়তে হবে। এই বুঝি সামান্য কথা বললেই বন্দি হতে হবে। রসিকতাকেও ছাড় নেই। এ এক দমবন্ধ অবস্থা। অথচ যেন তা খুবই স্বাভাবিক, যেন তা হওয়ারই ছিল, এবং যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে, ভালোর জন্যই হচ্ছে; এমনভাবেই, এতখানি স্বাভাবিকতাতেই দেশের বেশিরভাগ মানুষ তা মেনেও নিয়েছে। এই জন্যেই ভয় হয়। 

এখন তো এমনকি মানুষের প্রেমটুকুও শাসকের অঙ্গুলিহেলনে চলবে। কে কার সঙ্গে প্রেম করতে পারে আর পারে না, তারও আইন আসছে। ভয় হয়। যে সব জায়গায় এসবের চল ছিল না, সেখানেও আজকাল এসবের বাড়াবাড়ি। জাদুবুড়ো বলে, বিষের তো ছড়িয়ে যাওয়াই ধর্ম। ঢালবে গলায়, সে সারা শরীর ঘুরে গিয়ে উঠবে মাথায়। চালাক লোকেরা তাই নাকি বিশেষ কিছু করে না। শুধু ওই গলার নলির মুখে একটুখানি বিষ ঢেলে দিয়েই গা-ঢাকা দেয়।  

 সেমিমা জাদুবুড়োর কথা শুনে মাথা নাড়ে। বলে, ঠিক কথা। এরকমই হচ্ছে বটে। তার মনে পড়ে, এককালে উত্তর ভারতে যে সব ঘটনার কথা শোনা যেত, এখন সারা ভারতেই সে সবের কথা শোনা যাচ্ছে। এই তো সেদিন, খবরে দেখল, বীরভূমের নলহাটিতে, ভিনধর্মে বিয়ে করার জন্য দম্পতিকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে। ছেলেটা হিন্দু, মেয়েটা মুসলমান। খবরে লিখেছে, যে সব ঘটনা আগে এখানে হলে মানুষ আঁতকে উঠত, খাপছাড়া বলে ধরা হত যে সব ঘটনাকে, আজকাল সেসবই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ভয় হয়। সেমিমার ভারী ভয় হয়।

তার এক বন্ধু পূর্ণেন্দু, আইন নিয়ে তার কারবার; ভয়তরাসে সেমিমাকে দেখলেই বলে, তুই চিন্তা করবি না, সেমিমা। আমাদের দেশে কি সংবিধান নেই! ১৯ আর ২০ ধারায় প্রত্যেককে সঙ্গী নির্বাচনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে। 


সেমিমা চুপটি করে শোনে সে কথা। তার বুক কাঁপে তবু আমলকি বনের মতোই। পূর্ণেন্দু তখন ফরফর করে বলে, দেশে কি আইনকানুন নেই! সুপ্রিম কোর্ট কী বলে জানিস! বলে, ‘প্রাইভেসি অ্যাটাচেস টু দ্য পার্সন সিন্স ইট ইজ অ্যান এসেনশিয়াল ফেসেট অফ দ্য ডিগনিটি অফ দ্য হিউম্যান বিয়িং।’

সেমিমা বন্ধুকে কিছু বলে না। মনে মনে বলে,  লাভ জেহাদ, হাদিয়ার ঘটনা, এই নলহাটিতে ঘরছাড়া করা – এই সবকিছু নিয়েই তো আমার দেশ। আইন, সংবিধানের এই সবও আমার দেশ। কোন দেশটা যে সত্যি!

তারপর মনে হয় তার, দুটোই সত্যি। শুধু দুটো দেশের ভিতর দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। সংবিধান থেকে, আইন থেকে, বিচার থেকে ক্রমে দূরে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ। একটা অতিকায় খাপ পঞ্চায়েত যেন জাঁকিয়ে বসে আস্ত একটা দেশ হয়ে উঠছে।    

সেমিমার ভয় হয় খুব। সকালের হালকা হাওয়া তাঁকে ছুয়ে গেলেও সে চমকে চমকে ওঠে। 

**

বরুণের গ্রাম দেখে এমনিতে আহ্লাদই হয়েছে সেমিমার। এরকমই কোনও একটা গ্রামে তো তারও শিকড় ছিল। দাদু চলে যাওয়ার পর, বাবা ঠিক করে, গ্রামে নয়; শহরে চলে আসতে হবে। খানিকটা কাজের তাগিদে। খানিকটা বাবার নিজের চিন্তাভাবনারও ফল। সেমিমার বাবা চাইছিল, গ্রাম থেকে শহরে বেরিয়ে এলে সবদিক থেকেই মঙ্গল।

সেই ভিটে থেকেই এখন সেমিমার পরিজনরা ফোন করে, 

- দিদি, কাগজ নিয়ে খুব টানাটানি চলছে। বলছে, কাগজ না দেখাতে পারলে নাকি ভাগিয়ে দেবে। 

ওদের কথায় গ্রামের কথ্যরীতির টান। ওদের সঙ্গে যখনই কথা হয়, সেমিমার মনে হয়, একটা অন্যরকম জীবনের সঙ্গে তার যোগ আছেও বটে, আবার নেইও বটে।  সে তাড়াতাড়ি জবাব দেয়,

- কে বলছে?

- পাড়ার সবাই বলছে। বলছে, এককাট্টা হতে হবে।

- সে হওয়া ভালো। তবে অত ভয় পাওয়ার কিছু হয়নি। দেশের সব মানুষজন আছে তো, নাকি?

- ওরা কি আমাদের আর দেখবে?

সেমিমা আবার টের পায়, কী একটা তফাত থেকে যাচ্ছে, থেকেই যাচ্ছে। সে জিজ্ঞেস করে, ওরা কারা? ওদিক থেকে উত্তর আসে না। সেমিমা জানে, ও মনে মনে উত্তরে বলছে- হিন্দুরা;  সেমিমা বকা দেবে বলে ওর ভাই মুখ ফুটে সে কথা বলে না। 

সত্যি বলতে, এই একই ভয় কি সেমিমা নিজেও এখন পায় না? সব কি গ্রামের লোকের আতঙ্ক! এই আতঙ্ক তো খুব সফলভাবেই চারিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংখ্যালঘুদের মনে। বহুদিনকার বিদ্বেষ যা ঘাঁটি গেড়ে বসে ছিল মানুষের মনে, সেইসব খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে। যে দেশ দেশভাগের মতো বিপর্যয় কাটিয়ে এসেছে, কাটিয়ে বলা ভুল, সহ্য করে এসেছে, সে যে একই বিষ কেন পান করতে যায়, কে জানে! জেনেশুনে বিষ কেন পান করে? এতই কি বিভেদ! এতই কি ফারাক! আসলে তো সকলেই মানুষ নাকি!

সেমিমার মনে পড়ে, সে একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল, 

- বাপি, সবাই আব্বা বলে, আমি বলি না কেন?

- তোমার বন্ধুরা কী বলে?

- বাপি বলে... আব্বাও বলে।

- তাহলে তুমি আব্বাই বলতে চাইছ কেন?

সেমিমা তখন তার আত্মীয়দের উদাহরণ দিয়ে বলছিল, তার কাকা, পিসির ছেলেরা কেমন করে আব্বা, ফুফু, খালা, পানি, গোসল বলে। অথচ সে এসবের কিছুই বলে না। কেন? তার বাবা শুধু বলেছিল, 

- এতে তোমার কিছু অসুবিধে হচ্ছে কি?

ছোটোবেলায় এই কথাটা সে ভালো বোঝেনি। অসুবিধে আবার হবে কি! জল বললেও যা, পানি বললেও তা। কিন্তু পানি যে সে কেন বলছে না, তার সদুত্তর মেলেনি। সে তাই বাবার কথার উত্তরও দেয়নি। বড়ো হয়ে বরং বুঝেছে, অসুবিধা তো দূরের কথা। এতে বরং তার খানিক সুবিধা হয়েছে। স্কুলটুকু পেরিয়ে কলেজ চত্বরে পা রাখতেই সেমিমা টের পেয়েছিল, মুসলিম বাড়ির ছেলেমেয়েদের যেন দুখানা করে জীবন একই সঙ্গে বইতে হয়। নিজেদের পরিচিতির মধ্যে তাদের একরকমের কথাবার্তা, সেখানে একরকমের ভাষা। আর বাইরে বেরোলে, স্কুল কলেজ অফিস কাছারিতে আর এক রকম। সেখানে সকলে সচেতনই থাকে। চেষ্টা করে, জলকে পানি না বলতে। বললে যে খুব কিছু ক্ষতি হয়ে যায় তা নয়। তাও বলে না। সেমিমাকে সেই চেষ্টাটাই করতে হয়নি। এই জন্য সে তার বাবাকে মাঝেমধ্যে ধন্যবাদ দেয় মনে মনে।  

কিন্তু বড়ো হয়ে আর একরকমের সংকট পেয়ে বসল। তার কেবল মনে হতে থাকল, বাবা কি তবে হিন্দুর চোখে যাকে বলে গুড মুসলমান, তাই-ই হয়ে ওঠার চেষ্টা করে গেছে আজীবন! এ তো তাহলে নিজের সত্তা বিসর্জন দেওয়া! কেন পানি বলা হবে না? সে কি বাংলা ভাষা নয়! ‘আল্লা ম্যাঘ দে পানি দে’ কি বাংলা ভাষার গান নয়! রফিক, জব্বাররা যদি বাংলা ভাষার জন্য এই পৃথিবীতে প্রাণ দেয়, তবে তাদের মুখের ভাষাটা কেন বাংলা হবে না! সেমিমা এবার উলটো কাজটা করতে শুরু করে। সারা ছোটোবেলায় সে যা যা কাজ করেনি, সেগুলোই বড়ো হয়ে বন্ধুবান্ধবের মধ্যে করত। বলত, পানির বোতলটা দে তো। আর তাতে, কেউ কেউ বেশ চমকাত। দেখে অবাক হত, মজাও পেত সেমিমা। 

অথচ বাবাকে তার বেশ হেঁয়ালিই মনে হত। বাবা তাকে তো সবসময় বলেছে, ধর্ম পরিচয় একরকম থাকে। কিন্তু তা বাদ দিয়েও মানুষের একটা বড় পরিচয় আছে। বাবাই তাকে চিনিয়ে দিয়েছিল কাজী আবদুল ওদুদকে। সেমিমা বাজিয়ে দেখেছে, তার অনেক মুসলমান বন্ধুও ওদুদের লেখা পড়েনি। অথচ সে তো বাবার দৌলতেই পড়ে ফেলেছিল, বিশ্বভারতীতে দেওয়া ওদুদের সেই বিখ্যাত তিন বক্তৃতা। ‘মুসলমানের পরিচয়’ ‘দেশের জাগরণ’ আর ‘ব্যর্থতার প্রতিকার’। এই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে, যখন ইতিহাসের অনেক উতরাই-চড়াই পেরনো হয়ে গেছে, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতার একরকম উত্থান আগ্রাসন যখন মানুষকে সবলে আঁকড়ে ধরেছে, বিশ্বায়নের নামে বাণিজ্যনির্ভর সংস্কৃতি যখন যাপন বদলে দিয়ে মানুষের সঙ্গে একটা উপরচালাকি করেই চলেছে, তখন একজন মুসলমানের আধুনিক জীবন কেমন হতে পারে? সম্ভবত বাবার ভাবনায় এসব ঘোরে, ঘোরাফেরা করে, অনুমান করে সেমিমা। কিন্তু বাবা তাকে সরাসরি এ বিষয়ে কোনোদিন কিছু বলেনি।  কী যে তিনি বলতে চান, তা এই বইপত্র হাতে তুলে দেওয়া থেকেই খানিক খানিক করে বুঝতে পেরেছিল সেমিমা। নইলে সেও তার অনেক বন্ধুদের মতো জানত না, স্যার সৈয়দ আহ্‌মদ খানের কথা। সিপাহী বিদ্রোহের পর পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য ব্রতী ছিলেন তিনি।  ধর্ম পরিচয়ের বাইরেও মানুষে মানুষে যে আর্থিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে একটা গভীর যোগাযোগ আছে, সে-কথা তিনি অনুভব করেছিলেন এবং খুব জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন। এমনকি একটা বক্তৃতায় তো নিজেকে হিন্দুস্থানের অধিবাসী হিসেবে হিন্দু বলেও পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আর জাতি হিসেবে বাঙালিজাতির প্রতি তার ছিল গভীর শ্রদ্ধা। সৈয়দ আমির আলি চেষ্টা করেছিলেন মুসলিম সমাজকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে এগিয়ে দিতে। ওদুদকেও তো কেউ একজন বলেছিলেন যে, তিনি জাতিগতভাবে ভারতীয়, ধর্মানুসারিতার দিক থেকে মুসলমান। বাবার ভাবনার দিকটা এবার খানিক খানিক ধরতে পারে সেমিমা। মানুষটা আজীবন চাইছেন, এইরকমই একটা মুসলমান সমাজ। যেখানে রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া, কাজী আব্দুল ওদুদ সবাই একসঙ্গেই থাকবেন তাঁদের আলোকবর্তী চিন্তাভাবনা নিয়ে। 

এখন তিনি তো ছাপোষা লোক। গ্রাম থেকে শহরে এসে সামান্য একটা আপিসে কাজ জুটিয়েছিলেন। ক্রমে ক্রমে খানিক পদোন্নতি হয়েছে। তাঁর তো ক্ষমতা নেই একটা আন্দোলন করে এই গোটা সমাজকে পালটানো। সে তাঁর সাধ্যাতীত। এমনকি তাঁর পরিবারের সকলকেও তো তিনি বদলাতে পারেননি। পারবেনও না। যত দিন যায় তিনি দেখেন তাঁর গ্রাম, তাঁর পাড়া, প্রতিবেশী একটা ধর্মীয় সত্তাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছে। তাদের দোষ নেই। দেশের মাথা যখন এক ধর্মের সত্তাকেই প্রতিষ্ঠা করতে কোমর বেঁধে নামে, তখন বাকি সমস্ত ধর্মীয় সত্তাই নিজের মতো করে এককাট্টা হতে চাইবে। হচ্ছেও। সেই পুরনো দ্বন্দ্ব। যেন এর শেষ নেই। শেষ হতে পারে না। 

সেমিমার বাবা সমাজকে বদলাতে যাননি। নিজেই বরং খানিকটা সরে এসেছিলেন, উঠে এসেছিলেন শহরে। আর তার মেয়েটাকে বড়ো করে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর এই ভাবনার মতো করে। যদিও চাপিয়ে কিছুই দেননি।

সেমিমা আশ্চর্য হয় ভেবে যে, ওই গাঁ-গঞ্জে বসে সেই পুরনো দিনকালে তার সামান্য চাকুরে বাবা কী করে এমন একটা খোলা জানলার মতো মন তৈরি করতে পেরেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সেমিমার বাবাকে তাদের ধর্মের গোঁড়া লোক তো দূর, এমনকি পরিচিতরাও খুব বেশি পছন্দ করত না। বলত, শহরের হাওয়া লেগে আউলাবাউলা হয়ে গেছে। এইসব হল, হিন্দুর চোখে ভালো সেজে থাকার কল। অথচ এখন চারিদিকটা যেরকম বিস্ময় হয়ে গিয়েছে, এখন তো সেমিমার মনে হয়, তার বাবাই অনেকটা দূর থেকে দেখতে পেয়েছিলেন সবকিছু। মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন, দেওয়াল ভাঙে না। একটা-না-একটা বৃত্তে গিয়ে ঠিক আটকে পড়ে। সেমিমার বাবা সে-কথা ভালোই বুঝেছিল। গ্রাম-গঞ্জের ক্ষেত্রে সেই বৃত্ত কেটে বেরোনোর সুযোগ কম। নানা কারণেই এই ছোটো ছোটো থাকগুলো থেকে গিয়েছিল জোরালোভাবেই। খানিকটা রাজনৈতিক কারণে তো বটেই। যতই ধর্ম সরিয়ে মানুষের রাজনীতি জনপরিসরে জায়গা করে নিক না কেন, রাজনীতি যে সুচারুভাবে ধর্মকে খানিকটা ব্যবহারও করতে শুরু করেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেমিমার বাবার। মানুষটা বোধহয় বুঝতেই পারছিলেন, এভাবে চলতে চলতে আগামীতে এই গ্রাম-গঞ্জে জাতিগত পরিচয় এবং সেই ভিত্তিতে লকলকে হয়ে ওঠা ভাগাভাগির রাজনীতি কীভাবে মানুষকেই গ্রাস করে ফেলবে। তার সন্তানও সেই চোরাবালিতে হারিয়ে যাক, এটা তিনি কিছুতেই চাইছিলেন না। তাই বোধহয় ছিটকে যেতে চাইছিলেন শহরে। চাইছিলেন এমন এক পরিবেশ, যেখানে মেধা, শিক্ষা, উপার্জনের ভিত্তিতে পরিচয়-বৃত্ত গড়ে ওঠার সুযোগ আছে। ধর্ম, জাতি যে মিলিয়ে যাবে, তা নয়। তা হতেও পারে না। তাহলে তো দেশটাই অন্যরকম হত। তবে ভাগাভাগির মোটা দাগগুলো খানিকটা তো আবছা হবেই। 

এইসব ভেবেই বুঝি সেমিমার বাবা একদিন চলে এসেছিল কলকাতায়। সেমিমা তাই শহরের মেয়ে হয়েই বড়ো হল। গ্রামের সঙ্গে তার আর তেমন যোগ রইল না।

এই সেদিনের কথা, যখন দিল্লিতে ভোটের পর দাঙ্গা হচ্ছে, সেমিমা খুব ক্লান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, 

- বাপি এই দ্বন্দ্ব কি মিটবে না গো?

- এর উত্তর তো তুমি জানোই।

- জানি, তবু মানতে ইচ্ছে করে না।

- হিন্দুত্ব আর মুসলমানত্ব দিয়ে মনে হয় এ জিনিস মেটার নয়। 

সেমিমা কথা বলেনি। তার সত্তর ছুঁই ছুঁই সামনে ঈষৎ ঝুঁকে পড়া বাবা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলেন, সে চেষ্টা তো কমদিন হল না। লাভ কী হল! সৃষ্টি-ধর্মের কাছেই ফিরতে হবে মানুষকে। 

সেমিমা জানে, তাঁর বাবা ওদুদ সাহেবের অনুসারী। রবীন্দ্রনাথ যে বিকাশ-ধর্মী মানুষের কথা বলেন, ওদুদ তাঁদের কথা ভেবেই বলেন, সৃষ্টি-ধর্মী নব নেতা। ধর্মসম্প্রদায়গত রাষ্ট্রজীবন যাঁদের কাম্য হবে না। কাম্য হবে, জনজীবনের উন্নতি। ওদুদ গান্ধীবাদী, নেহেরুর অনুসারী ছিলেন। তাই হয়তো শেষমেশ এই বিশ্বাসে থিতু হয়েছিলেন। সেমিমার বাবাও শেষ জীবন পর্যন্ত এই নতুন মানুষেরই কল্পনাতে মন রেখেছেন। 

তবু খটকা যায় না সেমিমার। নেহেরুকে অতিক্রম করে আসা সময় যখন তাঁকে প্রায় নস্যাৎ করে নতুন বিষের কৌটো খোলে, তখন তা অতিক্রমণের উপায় কী! কিন্তু এই প্রশ্ন করে সে আর তার বাবাকে বিব্রত করে না। সায়াহ্নে যে-মানুষ যে-বিশ্বাসে থিতু থাকতে চান, সেখানেই থাকুন। রবীন্দ্রনাথও তো অতকিছুর পর মানুষের উপর বিশ্বাসই রাখতে চেয়েছিলেন।  

সেমিমা দেখে, মানুষের উপর বিশ্বাস রেখে আর নতুন মানুষের পথ চেয়েই তার বাবা, একজন আলোর খোঁজ করা মানুষ, নমাজ পড়তে বসছেন। তিনি সাধনা করছেন সেই অপ্রাকৃত আলোটির, ‘এক লাজওয়াব নূর’। তুলনাহীন জ্যোতি। ইসলাম চিরউজ্জ্বল। সেই আলোরই সাধনা করেন সেমিমার বাবা।

[চলবে]


আগের পর্বগুলি পড়ুন:  সোনার বাড়ি জমি - প্রথম পর্ব 

                                সোনার বাড়ি জমি - দ্বিতীয় পর্ব

                                সোনার বাড়ি জমি- তৃতীয় পর্ব

.........................................................................

অলংকরণ : ঐন্দ্রিলা চন্দ্র

সজ্জা : বিবস্বান দত্ত 


#সরোজ দরবার #সিলি পয়েন্ট #ওয়েবজিন #ধারাবাহিক উপন্যাস #সোনার বাড়ি জমি

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

103

Unique Visitors

177766