নিবন্ধ

যে মেয়েটির নাম কেউ-না

প্রতিভা সরকার Oct 17, 2020 at 7:10 am নিবন্ধ

এ দেশে প্রত্যেকটা ধর্ষণের পর দিস্তে দিস্তে তত্ত্বকথার চাষ হয়, বিষয়টা কিছুদিন আলোচনায় থাকে, খুব নৃশংসভাবে রেপ এবং হত্যা না হলে কাগজেই খবরটা থেকে যায়। এই চক্করে বারবার নির্যাতিত মেয়েগুলি, মৃত অথবা জীবন্মৃত, একেবারে নেই হয়ে যায়। সমাজ সংসার তাদের ভুলে যায়, পরিবারকেও ভেতরের রক্তক্ষরণ চাপা দিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক দেখাবার চেষ্টা করতে হয়। বিশেষ করে সেই মেয়ে যদি হয় দলিত, মুসলমান বা আদিবাসী, তাহলে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদতে তাকে নেই করে দেওয়া হয়, যেন তার ওপরে অত্যাচার নিয়ে আলোচনাও মানা, মাঠে ময়দানে প্রতিবাদ তো দূরের কথা। কারণ কাগজে কলমে এদেশে বর্ণবিভাজন, নীচুজাত উঁচুজাত এসব মোটেই নেই। থাকার মধ্যে আছে উল্টো আইন, প্রিভেনশন অব এট্রোসিটিজ এগেনস্ট শিডিউলড কাস্ট এবং শিডিউলড ট্রাইবস অ্যাক্ট।  কিছুদিন আগেও যেসব জাতভিত্তিক অন্যায়কে স্বাভাবিক মনে করা হত, যেমন তথাকথিত ছোটজাতের ছায়া না মাড়ানো, থুথু ফেললে সেই থুথু চাটানোর ব্যবস্থা করা, বিয়ের সময় ঘোড়ায় চড়তে না দেওয়া, জুতো পায়ে দিতে না দেওয়া, নীচু জাত আখ্যা দিয়ে মাহারদের এবং তাদের মতো আরো অনেককে গ্রামের বাইরে মৃত পশু ভক্ষণ করে বেঁচে থাকতে বাধ্য করা, অপমান, বৈষম্য, যৌন হিংস্রতা, সামাজিক বয়কট, সম্পত্তি আত্মসাৎ, এরকম আরো অনেক কিছুকে এই আইনের আওতায় এনে সেগুলোকে অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে অব্দিও সমাজপতিদের প্রশ্রয়ে যেসব অন্যায় রমরমিয়ে চলেছে, তাদের অপরাধ ঘোষণা করে দেবার পরও বাস্তবের জটিলতা কমেনি। এখনো যে এইসব বহাল তবিয়তেই আছে সেটা সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক স্তরে অস্বীকার করতে না পারার অস্বস্তি  এবং "উচ্চ"বর্ণের আইনকে পরোয়া না করা আধিপত্যকামিতার প্রেক্ষিত থেকেই "নীচু" জাতের মেয়ের ওপর অত্যাচার এবং তাকে নেই করে দেবার পদ্ধতিকে বিচার করতে হবে। সেখানেই লুকিয়ে আছে উত্তর, কেন অঘোষিত এই হিন্দু রাষ্ট্রে জাতভিত্তিক অপরাধ, বিশেষত যৌন অপরাধ হলেই তাকে হাপিস করে দেবার মরিয়া চেষ্টা করা হয়। সেই পদ্ধতি এত কৌশলী যে, যার ওপর অত্যাচার করা হল অনেক সময় তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার সময় তার নিজের জাতকেই হাতিয়ার করা হয়।  


আমাদের দেশে নির্যাতিত দলিত মেয়ের আর-একটি নাম যে স্বচ্ছন্দে হতে পারে 'কেউ-না', তার বড় প্রমাণ উত্তরপ্রদেশের হাথরাস। ওখানে গিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, এখানে কোনও মেয়ে কি ধর্ষিত হয়েছে, খুন হয়েছে? সমস্বরে  জবাব আসবে, কেউ না। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এমনকি গ্রামের বেশির ভাগ সাবর্ণ হিন্দুই বলবে, কেউ না কেউ না। কারণ দলিত হবার সুবাদে কর্মঠ এক তরুণীকে ধর্ষণ করে, পুড়িয়ে মেরেও শান্তি হয়নি, এবার ঢালাও অস্বীকৃতির ছাঁচে ফেলে তাকে এই কেউ-না করে দেবার খেলায় নেমেছে জনগণ ও রাষ্ট্র। এত জাতিঘৃণা আমাদের মজ্জায় মজ্জায় ! এমনকি অনেকের বড় ভরসার সিবিআইও এই নেই করে দেবার ম্যাজিক প্র‍্যাকটিসে পিছিয়ে নেই। সেই কথাটাই আগে বলি। 

 আরও পড়ুন : হাথরস যে নতুন ও পুরোনো প্রশ্নগুলি আবার তুলল / শতাব্দী দাশ 

তদন্তভার হাতে নেবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজের ওয়েবসাইটে এফআইআর এবং প্রেস স্টেটমেন্টের একটি কপি পোস্ট করেও আবার সেটি উড়িয়ে দিল এই তদন্ত সংস্থা। উড়িয়ে দেওয়া পোস্টটিতে পরিষ্কার উল্লিখিত ছিল এই কথা যে, হাথরাস কেসের অভিযোগগুলি হল, ধর্ষণ, হত্যার চেষ্টা, গণধর্ষণ ও হত্যা। এই পোস্ট উড়িয়ে দেবার পর বিস্তর হইচই হয়। তার কয়েক ঘণ্টা পর নতুন পোস্ট দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু নতুন রিলিজে দেখা গেল যে আগের মারাত্মক  অভিযোগগুলিকে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সিবিআই মামলা দর্জ করছে যে অভিযোগের ভিত্তিতে তা এইরকম– অভিযোগকারীর বোনকে বাজরা খেতে অভিযুক্ত ( অভিযুক্তরা নয়, কারণ তাতে গণধর্ষণের ছোঁয়া লেগে যেতে পারে) শ্বাস রোধ করার (হত্যার চেষ্টা বা হত্যা নয়) চেষ্টা করে। এইজন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার ও ভারত সরকারের অনুরোধে এই মামলা হাতে নেওয়া হল। 

তাহলে দেখা যাচ্ছে এখন হাথরাসের যে মামলার যে তদন্ত সিবিআই করছে তাতে কোনও খুন বা ধর্ষণকাণ্ড জড়িয়ে নেই, শুধু বাজরা খেতে একটি মেয়েকে শ্বাসরোধের চেষ্টা আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সিবিআই এটা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ধর্ষণ বা হত্যার বিচার হবে কী করে! 

একেই তো বলে নেই করে দেওয়া। যা ঘটেছে, প্রথমেই তার সব চিহ্ন মুছে ফেলে তদন্তে নামা। যাতে শাস্তি হবার কোনও সম্ভাবনাই না থাকে। স্বয়ং সিবিআইয়ের এই ডিগবাজির পরেও কি মনে হয় হাথরাসের মেয়েটি সুবিচার পাবে? 


ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, সবই হয়। দিনে ৯০টা করে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে এই মহান দেশে। কিন্তু এই নেই করে দেবার খেলাটা সবচেয়ে বেশি হয় ভিক্টিম দলিত, মুসলমান বা আদিবাসী হলে। রাহুল গান্ধী এতদিনে একটি কথার মতো কথা বলেছেন যে অনেক ভারতীয় নাগরিকের কাছেই দলিত, মুসলিম এবং ট্রাইবালরা মানুষই নয়। অবমানবের আবার বেঁচে থাকা, না-থাকা!  উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং তার পুলিশ যে বারবারই বলে যাচ্ছে কারো রেপ হয়নি, তার কারণ তাদের জন্য এবং আরো অনেক ভারতীয়ের জন্য হাথরাসের মেয়েটি ছিল কেউ-না। 


শুধু তো এই মেয়েটি নয়। সাবর্ণ হিন্দুরা বারবার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, বারবারই কোনো-না-কোনোভাবে জাতিগত দিকটিকে অস্বীকার করেছে। আবার সেই অস্বীকারে ব্যবহার করা হয়েছে জাতিভেদ প্রথাকেই। যেন মাছের তেলে মাছ ভাজা। ১৯৯৫-এ রাজস্থানে ভাঁয়োরি দেবী গণধর্ষণ মামলার রায় এ ব্যাপারটি স্পষ্ট করে। রাজস্থান হাইকোর্ট বলেছিল উচ্চবর্গের কোনও পুরুষ নীচু জাতের মহিলাকে ধর্ষণে অপারগ, কারণ নীচু জাতকে স্পর্শ করামাত্র সে জাতিচ্যুত হবে।  ফলে ভয়ে সংস্কারে কোনও সাবর্ণ পুরুষ 'নীচু' জাতের মেয়েকে এক আঙুলেও ছোঁবে না, ধর্ষণ তো অনেক দূরের কথা। পরিষ্কার বোঝা যায় জাত এখানে একটি বাহানা মাত্র। সাবর্ণ পুরুষটিকে অভিযোগমুক্ত করতে হবে সেটাই আসল উদ্দেশ্য। সেটা করতে গিয়ে কত সুকৌশলে দলিত মহিলা ভাঁয়োরি দেবীর জাতকে হাতিয়ার করা হল!   

 আরও পড়ুন : প্রাতিষ্ঠানিক ডিপ স্ট্রাকচার ও এক ধর্ষণ / যশোধরা রায়চৌধুরী 

২০০৬ সালের এক সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্রের খইরলাঞ্জিতে প্রকাশ্যে ধর্ষিত হয়ে খুন হতে হয়েছিল দলিত মা ও মেয়েকে। তাদের দোষ ছিল গ্রামের বর্ণহিন্দুদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে মানুষের মতো বাঁচার চেষ্টা। পরে খালের জলে দুই কিশোর পুত্রের মৃতদেহ পাওয়া যায়। অসহায় পিতা লুকিয়ে বেঁচে যায় ও অন্য গ্রামে বসতি করে। এইভাবে পুরো পরিবারটিই নেই হয়ে যায়।  মহারাষ্ট্রের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী গোটা পরিবারটির ওপর  মাওবাদী তকমা সেঁটে দিয়েছিল। তবুও সে মামলার নিষ্পত্তি আজও হয়নি। ২০১৬ থেকে ২০১৯ অব্দি ৪,০০০০০ মহিলা লাঞ্ছিত হয়েছে, যাদের এক-চতুর্থাংশই দলিত। 


এই জাতিগত উপাদানকে হাপিস করার ক্ষেত্রে খুবই এগিয়ে আছে হরিয়ানা দিল্লি বেল্টের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জাঠেরা, দলিত মহিলাদের ওপর ঘটা বেশিরভাগ লাঞ্ছনায় যারা জড়িত। তাদের প্যাটার্নটি খুবই সহজ ও একরোখা। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ধর্ষণকে সহমতের ভিত্তিতে ঘটা সহবাস বলে দেখাতে চায় এবং প্রত্যেক খুনকে আত্মহত্যা বলে তুলে ধরে। ঘটনার জাতিগত কোনও ভাষ্য আছে বলে স্বীকারই করে না। সে বেলায় তারা মহা সাম্যবাদী বনে যায়, নিজেদের ঘরের নারী আর দলিত নারীতে কোনও ফারাকই যেন তারা কখনো করেনি। 


এই অব্দি হাথরাসের দলিত তরুণীর রেপ ও খুন আর সব ঘটনার মতোই। কিন্তু প্রবাহের বাঁকের মতোই এতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বাঁক, যার সঙ্গে আগে ঘটে যাওয়া সমগোত্রীয় ঘটনার বিস্তর ফারাক। 

প্রথমেই মনে আসবে পুলিশের ভূমিকা। একই ধরনের কেসে পুলিশের অনুকম্পা এবং অপ্রত্যক্ষ সমর্থন অভিযুক্তদের দিকে থাকলেও, হাথরাসে মুখোশ খুলে সে অবতীর্ণ হয়েছে এক দানবের ভূমিকায়, যে সাহস সে আগে কখনো দেখায়নি। তারা মৃতার বাড়ি ঘিরে রেখেছে, বাচ্চার দুধ আনতে যাবার অনুমতিও দেয়নি। মেয়েটির জ্যাঠা কী করেছিল জানা নেই, কিন্তু তার বুকে সবুট এমন লাথি মেরেছে যে সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। মিডিয়া, সাংবাদিক কেউই গ্রামে ঢুকতে পারেনি এই পুলিশি প্রতাপে, অথচ ১৪৪ ধারা অমান্য করে সাবর্ণদের সভায় নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছিল যখন, এই পুলিশই তখন ঠুঁটো জগন্নাথ। আবার পুলিশ পরিবেষ্টিত ডি এম সাহেবের বয়ান পাল্টানোর হুমকিও এই বলপ্রয়োগের  গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে সবচেয়ে অবাক করেছে উত্তরপ্রদেশের মহামান্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া। জাতিগত বিদ্বেষের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে যোগী অভিযোগ এনেছে যে হাথরাস কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা দেশদ্রোহ। জাতিদাঙ্গা ঘটাবার অভিপ্রায়ে বিদেশি ফান্ডের মদতে  প্রতিবাদ প্রতিরোধের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক কাপ্পানকে তার সঙ্গীসহ দেশদ্রোহের ধারায় গ্রেপ্তার করা হল। এমনকি তার উবেরের অচেনা ড্রাইভারও ছাড় পেল না। বিদেশি ফান্ড, জেহাদি দৃষ্টিকোণ, সাংবাদিকদের ধর্ম, সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এ এক বহুমাত্রিক কর্মসূচি। আবার সেই জাতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে জাতনির্ভর নিপীড়নের অস্বীকৃতি। মাছের তেলে মাছ ভাজা। 

 

মনে পড়ে না আর কোনও সমগোত্রীয় কেসে রাষ্ট্রের এত লজ্জাহীন আচরণ। মধ্যমগ্রাম নির্যাতিতার মৃতদেহ পুলিশি প্রেশারে তাড়াহুড়ো করে পোড়ানো, কাঠুয়াতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ধর্ষণবাদীদের মিছিল, সবই যেন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনের এই সর্বাত্মক চাপের কাছে ফিকে হয়ে যায়। যে কৌশলে সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধাচরণকে দাবিয়ে রাখবার চেষ্টা হচ্ছিল, সেই একই কৌশল দিল্লি দাঙ্গার পর প্রয়োগ করা হয়েছে হাথরাসে। 


সহবাস ও আত্মহত্যার জায়গায় হাথরাসে এবার নতুন আমদানি অনার কিলিংয়ের থিয়োরি। পুলিশ ফোনকলের লিস্ট ইত্যাদির সাহায্যে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে দলিত পরিবারটির বিরুদ্ধে এই কথা বলে যে, এক অভিযুক্তের সঙ্গে মেয়েটির ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং সেটা সহ্য করতে না পেরেই পরিবার মেয়েটিকে খুন করে, এবং দায়ভার চাপিয়ে দেয় বর্ণহিন্দুদের ওপর যাদের সঙ্গে দলিত পরিবারটির আগে থেকেই শত্রুতা ছিল। এক অভিযুক্ত জেল থেকে ঠিক এই কথা চিঠি লিখে জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের। আসল ঘটনা যা জানা গেছে তা হল এইরকম– অভিযুক্তদের একজনের এবং মৃতার ছোট ভাইয়ের একই নাম। সন্দীপ। ভাইকে করা তার ফোনগুলো এখন অভিযুক্ত সন্দীপকে করা হয়েছিল এই মিথ্যাকে প্রশাসনের তরফ থেকে সত্যের রূপ দেবার প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। ছক এখানেও এক। বর্ণহিন্দুদের জাতপাতের বিচার নেই দেখানো হল, না হলে কি আর কেউ দলিত মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে! আবার দলিত পরিবারটির জাতিজ্ঞান এতই টনটনে দেখানো হল যে তারা উঁচুজাতের সঙ্গে সম্পর্ক করার অভিযোগে নিজের ঘরের মেয়েকেই গলা টিপে শেষ করে দিল!  তাহলে জাতপাতভিত্তিক কোনও অত্যাচার ঘটেছে এইরকম বলাটা কি ঠিক হবে?এইভাবে উদোর  পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেবার খেলাটি জমে উঠলেই জাতিবৈষম্য যে এ দেশের কোথাও নেই এটা বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই উল্টো পুরাণের খেলায় হাথরাসের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী আর নেই।  


শাসকের তৈরি একটা বিশাল গোল নিরেট রিঙের মধ্যে ঘুরে মরা যেন, যেখানে শুরু করছি, সেখানেই শেষ ও আবার শুরু।  জাতি-ধর্ষণকে ঘটেনি বলে নস্যাৎ করে দেওয়া হল আর তার বিরুদ্ধে যত প্রতিবাদ সবটুকুকে জাতিদাঙ্গা লাগাবার অভিপ্রায়ে করা বলে ঘোষণা করা হল। তবে কালো মেঘে কিছু রুপোলি রেখাও আছে। রোহিত ভেমুলার আত্মহনন এবং নক্ষত্রচূর্ণের সঙ্গে লীন হবার আশা ব্যক্ত করা আত্মহননের স্বীকারোক্তি সেই সময় জনচিত্তকে যেমন নাড়া দিয়েছিল, দলিত-কারণের সঙ্গে যে একাত্মতা ভারত দেখেছিল, হাথরাসের অবর্ণনীয় অত্যাচারের শিকার মেয়েটির সঙ্গে সমব্যথায় সেই একাত্মতা আবার অনুভব করল অনেক মানুষ। রোহিতের পর এই প্রথম। এই প্রতিবাদে প্রথম সারিতে মেয়েরা, বিশেষত দলিত মেয়েদের অংশগ্রহণ দেখার মতো।  অ্যান্টিসিটিজেনশিপ মুভমেন্ট ও এনআরসি মুভমেন্টের পর অতিমারিকে হাতিয়ার করে সবধরনের আন্দোলনের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা নামিয়ে এনেছিল শাসক, তার অবসান ঘটাল হাথরাস আন্দোলন। প্রায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, এমনকি সরকারের বশংবদ মিডিয়া হাউজগুলির, সাংবাদিকদের এবং সাধারণ মানুষের এই প্রতিরোধ আশা জাগায়, হয়তো নেই করে দেবার এই খেলা আর বেশিদিনের নয়।                                                                

[পোস্টার : অর্পণ দাস] 
#ধর্ষণ-কাণ্ড #Rape Case #Stop Rape #Stop Gender Violence #Gender Inequality #নারী #নারীপক্ষ #দ্বিতীয় লিঙ্গ #লিঙ্গ-রাজনীতি #লিঙ্গ-বৈষম্য #Power Politics #Power Structure #Rape Culture #Dalit #Hathras #Protest #Casteism #হাথরস #হত্যা #উত্তরপ্রদেশ #প্রতিভা সরকার #সিলি পয়েন্ট #Silly পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

7

Unique Visitors

219110