প্রাতিষ্ঠানিক ডিপ স্ট্রাকচার ও এক ধর্ষণ
মনোরম একটা দিন।আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে নীরবতাআর শান্ত অশ্বত্থ গাছের হাওয়া প্রতিদিন একটা একটা করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছেআমাদের জানালাআমাদের চোখ আমাদের আত্মাবিষাদে । কান্নায়। অন্ধকারে। মনোরম একটা দিন।আকাশে ভাসছে আগের রাতের গোপন ধোঁয়াচিতার মেয়েটিরযে চিতাটা নেইযে মেয়েটা ধর্ষিত হয়নিযে ধোঁয়াটাকে বারণ করে দেওয়া হয়েছে ছড়িয়ে যেতেকেননা উনি বলেছেনমনোরম একটা দিন আজ।
হাথরসের ঘটনায় আবার উঠে এল সমাজের সবচেয়ে বিস্তৃত কিছু কাঠামোর সরলতম রূপরেখা। নারীত্ব, জাতপাত আর ধনী দরিদ্রের বিন্যাস– এই তিন একসঙ্গে হয়ে এল, আর কদর্য কিছু তথ্য এল সামনে। পুলিশের ভূমিকা, রাজ্য সরকারের ভূমিকা। সোজা কথায় রাষ্ট্র বনাম একটি একক মেয়ে, যে দলিত ও দরিদ্র। আর তাই, সহজ টার্গেট। সংখ্যাতত্ত্ব বলছে, আজকের ভারতে দিনে চারটি দলিত মেয়ে উচ্চবর্ণের দ্বারা ধর্ষিত, তার বাইরে আরো মেয়ে আছেন যাঁদের হিসেব পুলিশের খাতায় ওঠে না। মনীষা বাল্মীকির ধর্ষণ আরো ভয়াবহ, কারণ তার বিবরণে রয়ে গেছে আরো কিছু বীভৎসতা। তার হেঁচড়ে টেনে নেওয়া শরীরের ভেঙে যাওয়া হাড়, কামড়ে ক্ষতবিক্ষত কাটা জিভ, সবটাই রূপক হয়ে উঠছে যেখানে। তবু পনেরো দিন ধরে সে হাসপাতালে লড়াই করল। তবু সে কাটা জিভ নিয়েও পুলিশকে বলে গেল ধর্ষকদের নাম। তবু তার মৃতদেহ পরিবারকে দেখতে না দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। তবু তার পরিবারকে বলা হল, ওসব কিছু ঘটেনি। ধর্ষণ-টর্ষণ।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে নির্ভয়া ঘটনায় সারা ভারত কেঁপে উঠল। সেবারে টার্গেট শহরের পথে একা মেয়ে। সাত বছর পরে ২৮ নভেম্বর ২০১৯-এ আবার জনমানসকে স্তম্ভিত করে ফিরে এল ভয়াবহতার চূড়ান্তে অধিষ্ঠান করা আর-এক ধর্ষণকাণ্ড, তেলেঙ্গানায়। হায়দ্রাবাদের উপকণ্ঠের অতিপরিচিত টোল প্লাজায় একাকী ভেটেরিনারি ডাক্তার প্রিয়াংকা রেড্ডির স্কুটি খারাপ হয়ে গেল এবং চারজন অপরিচিত ব্যক্তি স্কুটি সারানোর নাম করে তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল কোনও অজানা জায়গায়। বোনকে প্রিয়াংকা জানিয়েছিলেন লোকগুলোর হাবভাব ভালো ঠেকছে না। ফোন করার কুড়ি মিনিটের মাথায় ফোন সুইচ অফ হয়ে গেল। বোনেরা এ থানা ও থানা ছোটাছুটি করে বেড়ালেন, পুলিশ সঠিক সময়ে মিসিং ডায়েরি নিল না। পরদিন প্রিয়াংকার পুড়ে কালো হওয়া দেহ পাওয়া গেল সাতাশ কিলোমিটার দূরে।
ধর্ষণ আমাদের দেশে প্রতিদিন অসংখ্য ঘটছে, এই সত্যটা অস্বীকার করার কোনও কারণ নেই।
পুলিশের কাছে গেলেও বিচার পায় না যে দেশে মেয়েরা, সেই দেশে পুলিশও আসলে ধর্ষকের ভূমিকা পালন করে, বা অন্যভাবে বললে ধর্ষকের হাত শক্ত করে। নির্ভয়ার পর দেশজোড়া হইচইতে অনেক আইনি পরিবর্তন আনার পরেও, আজও ফাস্ট ট্র্যাকে ধর্ষণ কেস সমাধান করার ধারা তৈরি হল না। যদিও নির্ভয়াকে নিয়ে সিনেমা ডকুমেন্টারি ওয়েব সিরিজ হয়ে গেল বেশ কয়েকটা।
আমাদের সামাজিক প্রতিক্রিয়া অনেক। সামাজিকভাবে পুরুষতন্ত্রের ডিপ স্ট্রাকচার তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া অসংখ্য ছোট ছোট অপমান কেন গিলছি? সবচেয়ে বড় কথা, সমাধান হিসেবে মেয়েদের ওপর ফতোয়া না নামিয়ে এনে, বাড়ির ছোট ছেলেদের মানুষ করার সময়ে সঠিক শিক্ষা দেবার কাজটিতে কেন গুরুত্ব দিচ্ছি না? কেন বলছি "আমার মেয়ের জন্য চিন্তা হয়, ও রাতে বেরোয়", কিন্তু বলছি না, "আমার ছেলের জন্য চিন্তা হয়, ও যদি কারোকে ধর্ষণ করে বসে?"
সমাজের দায়িত্ব যদি হয় পুরুষ নারী নির্বিশেষে একেবারে ছোট বয়স থেকে এই মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তো আরো আগে রাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিপ পুরুষতান্ত্রিক অশিক্ষাকে উপড়ে ফেলা। নিজ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংবেদনের ন্যূনতম শিক্ষাটা দেওয়া। আর এক্ষেত্রে তো ওপর থেকে নিচে গোটাটাই সবরকমের নিয়মকানুনের লাঞ্ছনার ওপরে দাঁড়ানো। কদিন আগেই এক খবরে দেখলাম রাষ্ট্রসংঘ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছে ভারতে জাতপাতের ভিত্তিতে ধর্ষণ হচ্ছে খুব। আর অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এফআইআর করছেন, বিদেশি যোগসাজশে সরকারকে আক্রমণ করার এটা নাকি নয়া ধান্ধা। কত রঙ্গ আরো দেখব আমরা কে জানে।
২
ইতস্তত পুড়ে খাক ট্রাক। তার আশপাশে মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নীল উড়নি, লাল ঘাগরা, সবুজ শাড়ি।
কিছু দূরে পুড়ে যাওয়া এক স্তূপ কাপড়। সেও রঙিন। লাল হলুদ বেগুনি।
আগে কখনো ছড়ানো ছিটোনো রঙিন কাপড়চোপড় দেখলে আমার বুকের ভেতরটা এরকম ধড়ফড় করে উঠত না । আজকাল করে। ২০১৬-র হরিয়ানার মুরথলের এই দৃশ্যটা দেখলে আমার মনে পড়ে যায় ২০০৭-এ পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামের একটি মেটে দাওয়ার ঘরের ভেতর দেখা ছেঁড়াখোঁড়া কাপড়চোপড়ের স্তূপ। এমনি রঙিন ছিল সেদিন।
রাজা আসে যায়, পতাকার রং বদলায়। শুধু, পাবলিকের লাশ হওয়া, আর মেয়েদের ধর্ষিত হওয়া, বদলায় না। করুণ রঙিন পথ বেয়ে কামদুনি পার্ক স্ট্রিট দিল্লি ধূপগুড়ি বেঙ্গালুরু মুম্বই... মেয়েরা ধর্ষিত হতেই থাকে। দিন বদলায় না।
কেন বদলায় না? কেন বদলায় না?
কামসূত্রে গাঁথা নয় গল্পটা। গল্পটা বলা হয়েছে ক্ষমতাসূত্রে। ক্ষমতা মানে পাওয়ার। দেওয়ার নয়, নেওয়ার সূত্রে। অধিকারের সূত্রে।
পরিবার থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে রাজনীতি, দেশ, বৃহত্তর গোষ্ঠী, ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী। সব দ্বন্দ্ব। সব দেশ। সর্বত্র। কোথায় নয়। সিরিয়া থেকে নাইজিরিয়া, বোকো হারাম-এর হারেমে কিশোরীরা। আইসিসের গারদে মেয়েরা। আজ। এখন। ধর্ষিত।
গোটা পৃথিবীর সব প্রান্তে সব যুগে সব সময়ে মেয়েদের শরীরের ভেতর দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে যুদ্ধ। সব যুদ্ধ লড়া হয়েছে মেয়েদের যোনির ক্ষেত্রটাতেও... অন্য সব যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি।
যুদ্ধে বাড়ির পুরুষদের লড়তে পাঠিয়েছে মেয়েরা, শাঁখে ফুঁ দিয়ে, উলু দিয়ে, গল্পকথারা বলত আমাকে, বোঝাত, সেই কবে ছোট্টবেলায়। আমরা বিশ্বাস করতে শিখেছিলাম, মেয়েরা যুদ্ধে যাবে না। মেয়েরা যুদ্ধ করে না। এমনকি ছোট্টবেলায় যুদ্ধু যুদ্ধু খেলাটাও আমরা ছেলেদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
কিন্তু নাঃ। আমাদের তো তখন কেউ বলেনি, ছেলেদের যুদ্ধে পাঠিয়ে মেয়েরা যে ঘরে থাকত, সেই ঘরে এসে হানা দিত বিদেশি আক্রমণকারী, ক্ষমতাবান আক্রমণকারী, শত্রুপক্ষ। কেশেষু আকৃষ্টা, সপ্তমীর বিভক্তিচিহ্ন লাগাতে শিখিয়েছিল পাণিনির ব্যাকরণ। শেখায়নি, মেয়েদেরই কেশপাশ ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, ভোগ করা হয় বারবার। এভাবেই যুদ্ধগুলো জেতা হয়। কোন যুদ্ধ কত ভালোভাবে জেতা হল, তা প্রমাণ হয় সে যুদ্ধে কতগুলি মেয়েকে শারীরিকভাবে দখল করা গেল সেই সংখ্যা দিয়ে। কতগুলো পুরুষ বন্দিকে হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে আনা হল, সে সংখ্যাতত্ত্বের পাশাপাশিই। এই ধরে আনা মেয়েগুলো তারপর শুধু একজন না, দলে দলে সৈনিকের খেলার পুতুল হয়ে, যৌনদাসী হয়ে রয়ে গেল। অধিকৃত যে!
দেশে দেশে কালে কালে লক্ষ লক্ষ মেয়ে এভাবেই যুদ্ধ জয়ের পাশা হয়ে থেকে যায়। একটা দুটো গল্পের নায়িকা হয়ে যায় শুধু, দ্রৌপদীর মতো। বাকিরা তো অনুল্লেখের পাহাড়ের নিচেই থাকে।
বসনিয়া,সার্বিয়া,জাপান,কোরিয়া,ভিয়েতনাম,বাংলাদেশ। কোথায় কখন কোন আন্তর্যুদ্ধে অথবা বাইরের শত্রুর আক্রমণে মেয়েদের শরীর এফোঁড় ওফোঁড় হবে কে জানে। সেদিনই ৪০ দশকের হিটলারি অভিযানের এক সাদা কালো স্থিরচিত্র, ইউরোপের এক শহরের, দেখে বুক কেঁপে উঠেছে। ছবিটা এখন নেটে ঘুরছে ফিরছে। দূরে দেখা যাচ্ছে, রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে এক দল নাৎসি যুবক। আর তাদের পেছনে, মানে ছবির ফোরগ্রাউন্ডে, দু তিনটে মৃত মানুষ, আর, পাথরের বেঞ্চিতে শোয়া একটি ধর্ষিত মৃত মেয়ে। অবশ্যই ইহুদি তারা।
ধর্ষিত মৃত মেয়ের মাথার তলায় গুঁজে দেওয়া খড়। মৃত্যুর আগে, ধর্ষণের আগে ওকে খড়ের বালিশ করে দিয়েছিল ধর্ষক। খোলা আকাশের নীচে। আপাতত যে ধর্ষকের দল নিরুত্তাপ দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষায়।
হাড় হিম হয়ে আসা ছবি। কিন্তু এই হিম হয়ে আসাটুকু বড় সাময়িক আমাদের। কারণ দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধে কিচ্ছু শেষ হয়ে যায়নি । ক্রমাগত ঘটেই চলেছে, যা যা ঘটে থাকে।
ধর্ষণ-সংস্কৃতি নামে একটি তাজা উদ্দীপ্ত সংস্কৃতির ভেতরে আমরা বাস করি। এ ক্ষেত্রে যেটা করণীয় সেটা এই সংস্কৃতির খোল নলচে চিনতে হবে আগে আমাদের। এই বিতর্কে কার পক্ষ নেব আমরা তাও বুঝে নিতে হবে। সত্যিই সব বয়সের সব শ্রেণির মেয়েদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা। তবু যেখানে জাতপাত, লিঙ্গ ও অর্থনীতির শ্রেণি তিনটে একসঙ্গে এসে এক মেয়েকে সবচেয়ে বেশি করে আক্রান্ত করে তুলছে, সেখানে লড়াইটা লড়তে হবে সেই জায়গা থেকেই।
নজরে থাকুক
পারিবারিক হিংসা : আইন কী বলছে জেনে নিন
৩
আসি ডিপ স্ট্রাকচার বা বিতত কাঠামোর কথায়। আমাদের শিক্ষিত বৈঠকখানার আড্ডায় আগে ধর্ষণ শব্দটির প্রবেশাধিকার ছিল না। এখন ধর্ষণ নিয়ে আলোচনা অবাধে হয়। রেপ শব্দটা আর নিষিদ্ধ শব্দ নেই। সেরকম এক আড্ডায় আমেরিকা ফেরত কোনও পুরুষ বন্ধু হাসতে হাসতে সেদিন বলেছিলেন, আমেরিকাতে পুলিশ জেরবার। পার্টিতে মদ্যপান করে তারপর যত্র তত্র বিহার করবে ছেলেমেয়েরা, তারপর সেক্স হলেই, পরদিন ছাত্রী এসে বলবে আমাকে রেপ করেছে অমুক ছাত্র। পুলিশ কী করবে বলুন তো? চোর ডাকাত খুনি ধরবে, না এইসব ছুটকো ছাটকা ধর্ষণ কেসে মূল্যবান ম্যান-ডে নষ্ট করবে? লক্ষ করুন, কথাটা বলছেন এক পুরুষ, এবং হাসতে হাসতে।
আসল সমস্যাটা এখানেই, যেমন এখনো আম পুরুষের কাছে ধর্ষণ হাসাহাসির বিষয়, লঘু চোখে দেখার বিষয় (যতক্ষণ না একটি নির্ভয়া বা একটি প্রিয়াংকা ঘটনায় তাঁরা "লজ্জিত" বোধ করেন!) , তেমনই পুলিশ সিস্টেমের কাছে ধর্ষণ/ যৌন নির্যাতন লো প্রায়রিটি, তার গুরুত্ব কম। আইনি ব্যবস্থাকে যদি একটি সার্ভিস ভাবি, আর বাদী পক্ষকে ভাবি তার ক্লায়েন্ট, বা সুবিধাভোগী? তাহলে, সব বাদী/নালিশকারীর মধ্যে ওপরে আসবে গোষ্ঠী, সংস্থা, জাত, ধর্ম, ধনী। সবচেয়ে নীচের প্রায়রিটি মেয়েরা। ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন "সফট ক্রাইম"। আগে তো ডাকাত ধরবে পুলিশ, উগ্রপন্থী ধরবে? খুনি ধরবে? তা আবার সেসব ক্ষেত্রে বাদীপক্ষ হয় রাষ্ট্র নিজেই বা কোনও বড়সড় সংস্থা। সেখানে একটি মেয়ের "পারচেজিং পাওয়ার" কতটা? তাকে কেন গুরুত্ব দেবে পুলিশ। কেন ম্যান ডে নষ্ট করবে।
এখন তাই মেয়েদের প্রশ্ন তোলা উচিত এই জায়গাটাতে। আজকের সমাজে প্রতিটি মেয়েও ট্যাক্স দিচ্ছেন। প্রতিটি মেয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। তাহলে মেয়েদের সুরক্ষার দাবি কেন এত লো প্রায়রিটি থাকবে?
নির্ভয়া ফান্ড-ই গঠন হোক আর সাময়িকভাবে তাৎক্ষণিক সমাধান, রাস্তায় চারটে আলো বেশি বসানো বা ১০০ নম্বরে ফোন করার বিধান দেওয়া, এগুলো কোনও কাজ করবে না।
আর হ্যাঁ, মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরুতে না দেওয়া বা রাতে একা চলাফেরা না করতে বলা কোনও সভ্য দেশের সমাধান না। যে আক্রান্ত তাকে পায়ে বেড়ি পরানোর সমাধান একমাত্র আমাদের মতো সমাজেই চলে।
অলংকরণ : অভীক
পোস্টার ভাবনা ও রূপায়ণ : অর্পণ দাস