ব্যক্তিত্ব

ফরাসি আকাদেমির সদস্যপদ দেওয়া হয়নি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীকেও

অর্পণ পাল Nov 7, 2020 at 6:47 am ব্যক্তিত্ব

১৯১১ সাল। ফ্রেঞ্চ আকাদেমি অব সায়েন্স-এ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন জানালেন মারি কুরি। ততদিনে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন, সকলেই তাঁকে এক ডাকে চেনে। কিন্তু এ হেন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আকাদেমির কর্তাব্যক্তিরা তাঁর সে আবেদন অগ্রাহ্য করলেন। কিন্তু কেন?

বিজ্ঞানচর্চা যে দেশকালের সীমানা টপকে হয়ে উঠতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক, এই ধরনের কিছু ঘটনা সেই স্বপ্নউড়ালকে বাধা দিয়েছে বারবার। যার উদাহরণ, পোলোনিয়াম আর রেডিয়াম নামে দুটো তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কার করার জন্য স্বামী পিয়ের কুরি আর হেনরি বেকারেল-এর সঙ্গে মিলিতভাবে নোবেল জিতে নেওয়া মারিকে আকাদেমির সদস্য পদে নিযুক্ত না করা। 

তিনটে কারণে তাঁকে নেওয়া হল না। প্রথমত, ফরাসিদের দেশপ্রেম। মারি কুরি বিদেশি। তিনি ফরাসি নন, পোল্যান্ডের। দ্বিতীয়ত, মারি কুরিকে দেগে দেওয়া হল ইহুদি হিসেবে, যেটা আসলে মোটেই সত্যি নয়। তাঁর স্কুলমাস্টার বাবা ছিলেন নাস্তিক, মা ক্যাথলিক। 

আর তৃতীয়ত, মারি মহিলা। সে তিনি যতই ডক্টরেট বা নোবেল পান, একজন মহিলা কখনও পুরুষদের সঙ্গে সমান মর্যাদা নিয়ে এক আসনে বসতে পারে? কী করে তা সম্ভব? 

ভুললে চলবে না, এই সময় মারি স্বামীকে হারিয়ে সরবোনে ফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে প্রধান হিসেবে কর্মরত। ফ্রান্সের বুকে প্রথম মহিলা হিসেবে ডক্টরেট অর্জন করবার খ্যাতিও তাঁর দখলে। তবু এর গুণী একজন বিজ্ঞানীকে আকাদেমির পদ দেওয়া হল না ইহুদি, মহিলা আর অ-ফরাসি হওয়ার জন্যে। এতটাই তাঁরা নাকউঁচু যে ওই আকাদেমির এক সদস্য পদার্থবিদ এমিল অ্যামাগাট তো বলেই ফেলেছিলেন, ‘Women cannot be part of the Institute of France’। 

আরও পড়ুন : যিনি চিনিয়েছিলেন আইনস্টাইনকে / অর্পণ পাল

সুতরাং তাঁর বদলে ওই পদে নেওয়া হল ৬৬ বছর বয়সী পদার্থবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ব্র্যানলি-কে। যিনি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে উন্নতি ঘটাবার কাজ করার জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নোবেল পাননি, সেটা হস্তগত হয় মার্কনির। ফরাসিরা ব্র‍্যানলিকে আকাদেমির সদস্যপদ দিয়ে হয়ত সেই দুঃখ ভুলতে চেয়েছিলেন। আর ব্র্যানলিকে নিয়োগপত্র দেওয়ার আরও একটি কারণ, তিনি ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক। তাঁর ওপর সমর্থনের হাত ছিল স্বয়ং পোপের। 

কুরি-ব্র‍্যানলির এই টানাপোড়েন সে দেশের সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। ব্র্যানলির সমর্থনে যেমন এক দিকে নেমে পড়ল বেশ কিছু সংবাদপত্র, মারির সমর্থন পেতেও সেরকম খুব একটা অসুবিধা হল না। মুক্তমনা, ফ্রি-থিঙ্কিং গণমাধ্যমগুলি মারির পাশেই রইল। 

কিন্তু মারি নিজে? তাঁকে স্পর্শ করেনি এই বিতর্ক, বা উত্তাল পরিস্থিতি। তবে নিঃশব্দে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এই আকাদেমির সংস্পর্শ থেকে, নিজের কোনও লেখা এরপরে বহুবছর এখানে ছাপার জন্য দেননি আর। তিনি তখন ডুবে আছেন তাঁর গবেষণাগারে, একাগ্রতার সঙ্গে পরীক্ষা চালাচ্ছেন ওই তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়েই। আর ফল? সেই বছরেই শেষের দিকে মারি কুরির নাম আবার ঘোষিত হল রসায়নের নোবেলপ্রাপক হিসেবে, ইতিহাসে সেই প্রথমবার শুধু মহিলা কেন, কোনও একজন ব্যক্তি দু’দুবার নোবেল পেলেন। ফ্রেঞ্চ আকাদেমির এই ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া কী? জানা যায়না। 

আরও পড়ুন : বারবারা ম্যাক্লিনটক ও সমকালীন পুরুষতান্ত্রিক বিজ্ঞানচর্চা / শুভেচ্ছা বৈদ্য

তবে তারা যে খুব একটা বিমোহিত হয়ে পড়েছিল, সেটা মনে হয় না, কারণ এরপরেও বহু বছর এই আকাদেমির দরজা বন্ধ ছিল মহিলাদের জন্যে। অবশেষে ১৯৬২ সালে মার্গারিট পেরি নামে একজন ফরাসি পদার্থবিদ এই আকাদেমির অধ্যাপক পদ পান। 

ফ্রান্সিয়াম নামে মৌলটির আবিষ্কারক মার্গারেট ছিলেন সেই মারি কুরিরই ছাত্রী! 



#Marie Curie #Maria Salomea Skłodowska #radioactivity #Nobel Prize #radium #polonium #Pierre Curie #জন্মদিন #স্মরণ #শ্রদ্ধা #অর্পণ পাল #সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

18

Unique Visitors

219123