ব্যক্তিত্ব

জুতোর ব্যবসা থেকে সিগারেটের দোকান: প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর বহুবর্ণী জীবন

টিম সিলি পয়েন্ট Jan 2, 2022 at 3:36 am ব্যক্তিত্ব

পালানো স্বভাব ছিল তাঁর। সেই বারো বছর বয়স থেকে। প্রথমদিকে খুব দূরে নয়। টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেলে, শরীর মন ক্লান্ত হয়ে পড়লে আবার ঘরের ছেলে ফিরে আসতেন ঘরে। বাবার বকা, বইয়ের পড়া কোনোটাই তাঁকে বাঁধতে পারল না। পনেরো বছর বয়স থেকেই পাড়ি দিতে লাগলেন পশ্চিমে। বাড়ির সঙ্গে সম্পর্কের একটা আলগা সুতো থাকল বটে। তবে স্কুলের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকে বুকে গেল।

অবশ্য পড়াশুনা করেছিলেন তিনি। বিখ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে পণ্ডিত অমূল্য বিদ্যাভূষণের সাহচর্য তাঁর সামনে খুলে দিয়েছিল জ্ঞানের এক আশ্চর্য পৃথিবী। 

শুধু কি পড়াশুনা? যৌবনে সেতার শিখতে শুরু করেন তিনি। রবীন্দ্র সঙ্গীতের অনুরাগী ছিলেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে আসতেন। ছোটোবেলায় তাঁর থেকেই রূপে তোমায় ভোলাব না গানটি শোনেন তিনি। 

তবে, ওই যে বললাম, তাঁর ছিল পালিয়ে যাওয়া স্বভাব। কোনও এক জায়গায় বেশিদিন থাকলেই মন হয়ে উঠত অস্থির। কখনও বিনা টিকিটে কখনও পায়ে হেঁটে, অনাহারে ছিন্ন বস্ত্রে সারা ভারত ঘুরে বেড়িয়েছেন। কারও বাড়িতে রান্নার কাজ করেছেন। কারও বাড়িতে ঝাড়ুদারের কাজ। ভিখারীদের সঙ্গে কাড়াকড়ি করে খাবার খেয়েছেন । মাত্র ছয় পয়সা মজুরিতে সারাদিন মাঠে মাঠে ঘাস কেটেছেন। 

তাঁর নাম প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। মহাস্থবির জাতক-এর লেখক বাঙালির কাছে তিনি অপরিচিত নন মোটেই। কিন্তু অপরিচয়ের কুয়াশায় ঢাকা থাকে তার বিচিত্র জীবন অভিজ্ঞতা। 

কলকাতায় এস্প্ল্যানেডে কার এন্ড মহলানবিশের দোকানে ছয় বছর খেলার সামগ্রী আর বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করেন প্রেমাঙ্কুর। আবার তিনি মেট্রোপলিটন কলেজের ক্রীড়াবিদ অধ্যক্ষ সারদারঞ্জন রায়ের স্পোর্টস গুডস এর দোকান এস রায় ইং কোং এ চাকরি করতেন। কলকাতার শ্রীমানি মার্কেটে চশমার দোকানেও কাজ করেছিলেন তিনি। লখনৌ শহরে গিয়ে চশমার কাজ শিখে আসেন এই সূত্রে। 

বেনেপুকুর অঞ্চলে জুতোর ব্যবসা থেকে শুরু করে দুধ ঘিয়ের ব্যবসাতেও হাত পাকিয়েছিলেন। এমনকি প্রেমাঙ্কুর আতর্থী তদানিন্তন বোম্বাইয়ে সিগারেটের দোকানও দিয়েছিলেন । 

হিন্দুস্থান পত্রিকা থেকে বৈকালী , সাংবাদিকতার কাজ করেছেন বহুদিন। জাহ্নবী, ভারতী, মৌচাক, জাদুঘর, বেতার জগৎ প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। 

পড়ুন : লড়েছিলেন নেতাজির পাশে দাঁড়িয়ে, অঞ্জন দত্তের গানের বাইরে রয়ে গেলেন যে বেলা বোস // তোড়ি সেন

কলকাতা বেতার কেন্দ্রে একদম শুরুর দিনগুলোতে কাজ করেছেন সোম দত্ত ছদ্মনামে। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে যাওয়া , মহালয়া- ভোরের মহিষাসুর-মর্দিনী অনুষ্ঠানের প্রাথমিক পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে শোনা যায়।

চলচিত্র জগতে প্রেমাঙ্কুরকে নিয়ে আসেন বন্ধু শিশির কুমার ভাদুড়ি। অভিনেতা, চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

এই অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য না থাকলে হয়ত একটা মহাস্থবির জাতক লেখা যায় না। আসলে যে কিশোরের ছিল পালিয়ে যাওয়া স্বভাব, সেই সারা জীবন ধরে ঘুরে বেরিয়েছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এক জীবিকা থেকে অন্য জীবিকায়। শুধু কিছু পায়ের ছাপ আলগোছে থেকে গেছে।

............................

কৃতজ্ঞতা: 

প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর জীবন ও সাহিত্য, শম্ভুনাথ কোলে, শোধগঙ্গা 


#প্রেমাঙ্কুর আতর্থী #মহাস্থবির জাতক #সাহিত্যিক #চিত্র পরিচালক #বাঙালি #ব্যক্তিত্ব #সিলি পয়েন্ট #ওয়েবজিন #বাংলা পোর্টাল #web portal

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

69

Unique Visitors

182717