বেতারের আদিযুগ ও জগদীশচন্দ্র (পঞ্চম পর্ব)
পর্ব ৫। মাইকেল ফ্যারাডে-র কথা
...........................
অদৃশ্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নিয়ে স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের যুগান্তকারী কাজের ভিত্তি কিন্তু বিখ্যাত এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭)-র কাজের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল। তাঁর ব্যাপারে কিছু কথা না বললেই নয়।
উনিশ শতকের ব্রিটিশ রসায়নবিদ হামফ্রে ডেভির এই একনিষ্ঠ ছাত্রটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে একাই একটি অধ্যায় নির্মাণ করেছেন। সাধারণ এক দরিদ্র মুচির ছেলে হয়ে যেভাবে তিনি প্রথাগত শিক্ষা প্রায় না পেয়েও একান্ত নিজস্ব মেধা আর পরিশ্রমের জোরে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন হয়ে উঠতে পেরেছিলেন, সে বিবরণ কল্পনাকেও হার মানায়।
চোদ্দ বছর বয়স থেকেই ফ্যারাডে কাজ করতেন এক বই বাঁধাই করবার দোকানে, ততদিনে তিনি স্কুলে যাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন। তবে এই কাজ তাঁর কাছে শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ হয়েই দাঁড়িয়েছিল, কারণ এখানে বই বাঁধাই করবার মধ্যেই সুযোগ জুটে যেত নানা ধরনের বহু বিষয়ের বইপত্র ফ্রি-তে পড়ে ফেলবার। মাথার মধ্যে হরেক রকমের বিদ্যে জমাতে-জমাতেই হয়তো তাঁর জীবন কেটে যেত; যদি না তাঁর যখন কুড়ি বছর বয়স, তখন একদিন ওই দোকানে এসে এক খরিদ্দার তাঁকে এক বক্তৃতা শুনতে যাওয়ার টিকিট দিয়ে যেতেন।
উনিশ শতকের সূচনার বছরখানেক আগে স্থাপিত হওয়া বিলেতের রয়্যাল ইনস্টিটিউশন নামের সেই বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠানে (আমাদের কলকাতায় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা এই প্রতিষ্ঠানের ধাঁচেই একটি গবেষণা-প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অভ সায়েন্স’ তৈরি করেছিলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার) সেই বক্তৃতা শুনতে গেলেন ফ্যারাডে, আর ওটাই তাঁর জীবনের গতিপথ বদলে দিল। তড়িতের বিভিন্ন আশ্চর্য বিষয় নিয়ে যন্ত্রপাতি-সহযোগে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন চৌত্রিশ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী, তাঁর নাম হামফ্রে ডেভি। তিনি ততদিনে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন সোডিয়াম, পটাসিয়াম-এর মতো ধাতু আবিষ্কার করে এবং খনি-শ্রমিকদের উপযোগী নিরাপত্তা বাতি উদ্ভাবন করে। তাঁর সেদিনের বক্তৃতা শুনে ফ্যারাডের মনে হল, এইবার যেন তিনি আস্তে-আস্তে খুঁজে পাচ্ছেন জীবনে কিছু করবার তাগিদ। কিন্তু কীভাবে?
যে কাজটা ফ্যারাডে ভালো পারতেন, সেটাই করলেন। বক্তৃতা চলাকালীন তাঁর সংক্ষেপে লিখে নেওয়া নেওয়া নোটসগুলোকে পরে বাসায় ফিরে তিনি লিখে ফেললেন গুছিয়ে, আর সেই সঙ্গে নিজের হাতে আঁকা কিছু ছবি (ডায়াগ্রাম) সাজিয়ে একটা খাতা বানিয়ে সেটাকে সুন্দর করে বাঁধাই করে তিনি পাঠিয়ে দিলেন সেই হামফ্রে ডেভির কাছেই। সঙ্গে একটি চিঠি, তাতে মূল বক্তব্য যে তিনি ডেভি সাহেবের কাছে কাজ করতে ইচ্ছুক।
সেই খাতা দেখে ডেভি তো দারুণ খুশি এবং বিস্মিত, তিনি ডেকে পাঠালেন ফ্যারাডেকে। এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝলেন এই ছেলের মধ্যে আছে বড় হয়ে ওঠবার খিদে আর প্রতিভা। তিনি ফ্যারাডেকে দিলেন তাঁর রসায়নাগারে সহকারীর চাকরি।
ডেভির সঙ্গে থেকে থেকে ফ্যারাডে অনেক কিছু শিখছিলেন বটে, তবে এইসময় তাঁর জীবন আরও একটা বাঁকের সামনে এল। ‘অ্যানালস অফ ফিলোজফি’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক রিচার্ড ফিলিপস একদিন তাঁর ওপর দায়িত্ব দিলেন, সদ্য আবিষ্কার হতে থাকা এই তড়িৎ আর চুম্বক সংক্রান্ত ঘটনাগুলো নিয়ে গুছিয়ে একটা লেখা তৈরি করে দিতে। বলতে গেলে ওই লেখাটার প্রস্তুতি নিতে গিয়েই ফ্যারাডে আগ্রহী হয়ে পড়েন এই বিষয়টার প্রতি। কিন্তু তাঁর গাণিতিক দক্ষতা তো যথেষ্ট কম; তাই তিনি করলেন কি, নিজে-নিজেই ব্যবস্থা করতে লাগলেন, যাতে ওরস্টেড বা অ্যামপিয়ারের পরীক্ষাগুলো তিনি নিজের হাতেই যাচাই করে দেখতে পারেন।
এসে গেল সেপ্টেম্বরের তিন তারিখ, ১৯২১ সাল। ওরস্টেডের সেই পরীক্ষার বছর দেড়েক পরের কথা। ফ্যারাডে দেখালেন সত্যি-সত্যিই একটা তড়িৎবাহী তার চুম্বকের চারপাশে পাক খাচ্ছে। খাতায় লিখলেন, ‘very satisfactory’! সেই দিন থেকেই যেন লেখা হতে শুরু করল মানব জাতির ভবিষ্যৎ। ইলেকট্রিক মোটর, যা কি না আধুনিক সভ্যতার একটা মূল উপাদান, তার হাতেখড়ি হল সেদিন।
ফ্যারাডে পরে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ‘চৌম্বক বলরেখা’ বা ‘ম্যাগনেটিক লাইনস অফ ফোর্স’ কথাটার মাধ্যমে। এই ব্যাপারটা নিয়ে এখানে কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার।
বলরেখার ধারণা স্পষ্টভাবে জানানো ফ্যারাডেরই কৃতিত্ব। যে কোনও চুম্বকের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর দিকে কাল্পনিক এই বলরেখাগুলো অঙ্কন করে দেখানো হয়। কোনও জায়গায় একটা চুম্বক রাখা হলে তার কাছাকাছি এলাকায় অজস্র এরকম বলরেখা এঁকে নেওয়া যায়। বাস্তবে চার্জ বা আধান এককভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেলেও চুম্বকের বিচ্ছিন্ন উত্তর বা দক্ষিণ মেরু আলাদা করে পাওয়া যায় না, তবু মনে করা হয় যে কোনও চুম্বকের কাছাকাছি এলাকায় একটি বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরুর (সেটা কাল্পনিক অবশ্যই) গতিপথকেই বলরেখার অভিমুখ বলে ধরা যায়। আমরা নীচে একটি দণ্ড চুম্বকের জন্য চৌম্বক বলরেখাগুলি দেখতে কেমন হতে পারে সেটা দেখিয়েছি। এই রেখাগুলির যে কোনো একটির ওপরে যদি কোনো বিন্দুতে স্পর্শক অঙ্কন করা যায়, একটি বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরুকে ওই রেখা ওপরে রাখলে সে ওই স্পর্শকের দিক বরাবর গতিশীল হবে।
তড়িৎবাহী তারের চারপাশে তৈরি হওয়া অদৃশ্য এই বলরেখাকেই ফ্যারাডে চৌম্বক ক্ষেত্র বা ‘ম্যাগনেটিক ফিল্ড’ নামে চিহ্নিত করেছিলেন।
এরপর ফ্যারাডে সাহেব একদিন ভাবলেন, তারে প্রবাহিত তড়িৎ যদি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে, তবে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রও পারবে ব্যাটারি ছাড়াই তারের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহিত করতে। অর্থাৎ আগের বলা ঘটনার বিপরীতটাও ঘটা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখানো যাবে?
হ্যাঁ, টানা দশ বছর ধরে চেষ্টা করে যাওয়ার পর সে কাজটাও তিনি করতে পেরেছিলেন। সেটা ১৮৩১ সালের কথা। সে বছর নভেম্বরের চব্বিশ তারিখে রয়্যাল ইনস্টিটিউশনের বক্তৃতায় ফ্যারাডে ব্যাখ্যা করলেন তাঁর এই সদ্য আবিষ্কৃত বিষয়টি। দুটো লোহার রিঙের গায়ে ভালো করে তার জড়িয়ে সে দুটোর একটার মধ্যে দিয়ে তড়িৎ পাঠিয়ে তিনি দেখালেন অন্য রিঙের মধ্যেও অস্থায়ীভাবে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সেটা একটানা নয়, যখন প্রথম রিঙে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করা হচ্ছে বা চালু করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়টুকুতেই। এর অর্থ, প্রথম তারের মধ্যে যতক্ষণ তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তন ঘটছে, ততক্ষণ দ্বিতীয় তারের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তড়িৎ। এই তড়িতের নাম দেওয়া হল আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ, এবং ঘটনার নাম তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ, বা’ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন’। এর থেকেই জন্ম নিয়েছে ডায়নামো, যাতে যান্ত্রিক শক্তি থেকে পাওয়া যায় তড়িৎশক্তি। ইলেকট্রিক মোটর (এর কাজ ডায়নামোর ঠিক উলটো, এতে তড়িৎশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাওয়া যায় যান্ত্রিক শক্তি) আর ডায়নামো— এই দুটো জিনিসেরই আবিষ্কর্তা হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে আছে মাইকেল ফ্যারাডের নাম।
বছর কয়েক বাদে ফ্যারাডে আরও একটি কাজ করেছিলেন, যার ফলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে আলোর যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে সেটা প্রমাণিত হয়েছিল। যেটা পরে ‘ফ্যারাডে এফেক্ট’ নামে খ্যাত হয়।
সেটা ১৮৪৫ সাল। তড়িৎ আর চুম্বকের মধ্যে মেলবন্ধনের বিষয়টি ততদিনে ফ্যারাডের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলেও তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে ভাবতে শুরু করেন, তাহলে কি আলোকীয় ব্যাপারস্যাপারের সঙ্গেও চুম্বকের কোনো সম্বন্ধে রয়েছে? এরই সন্ধানে নেমে ফ্যারাডে দেখতে পেলেন যে কোনও স্থানে থাকা চুম্বকের প্রভাবে তার চারপাশে সৃষ্ট হওয়া ক্ষেত্রের মধ্যে আলোর কিছু ধর্মের পরিবর্তন সত্যিই ঘটে। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি দেখলেন রৈখিকভাবে সমবর্তিত আলোর যে সমবর্তন তল, সেটা শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে পড়লে ঘুরে যায়। বছর কয়েক পরে আলো যে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে, সেদিনই যেন সেই অনাগত বিষয়টির উদ্বোধন ঘটে গেল।
পরের বছর এপ্রিল মাসে রয়্যাল ইনস্টিটিউশনের ‘ফ্রাইডে ইভনিং ডিসকোর্স’ নামের বক্তৃতা দেওয়ার সময় (১৮২৬ সালে এই বক্তৃতার সূচনা করেন তিনিই। অনেক পরে, ১৮৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে এখানে প্রথমবার এই ফ্রাইডে ইভনিং ডিসকোর্স বক্তৃতা দিতে আসবেন জগদীশচন্দ্র, পরে ১৯০১-এর মে মাসের দশ তারিখে তিনি আরও একবার এই বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন) প্রথমবার তিনি ব্যক্ত করেছিলেন তাঁর অনুমান যে আলোও তড়িৎ এবং চৌম্বক বলরেখার কম্পনের ফলে সৃষ্ট হতেই পারে।
আসলে সেদিন তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার কথাই ছিল না। অন্য একজনের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফ্যারাডে বলতে ওঠেন বক্তৃতার বিষয় নিয়েই, আর শেষের দিকে কিছু সময় হাতে থাকায় সেই সময়টায় ফ্যারাডে জুড়ে দেন আলো সম্বন্ধে তাঁর ধারণার কথা। তবে তাঁর কথায় সেদিন খুব বেশি কেউ গুরুত্ব দেননি। তবে তিনি কিন্তু দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করতেন যে আলো, তড়িৎ আর চুম্বকের মধ্যে একটা অন্তর্লীন সম্পর্ক আছেই। এরপর মে মাসে ‘ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ এই বিষয়ে তাঁর একটি পেপারও প্রকাশিত হয়, ‘Thoughts on Ray Vibrations’ নামে। বছর কয়েক পরে ম্যাক্সওয়েলের পেপার প্রকাশিত হওয়ার পর তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ হিসেবে আলোকে সবাই মেনে নিতে বাধ্য হন।
ফ্যারাডের তড়িৎচুম্বকীয় যাবতীয় তত্ত্ব একত্রিত হয়ে তিনটি খণ্ডে ‘Experimental Researches in Electricity’ নামে প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। পরবর্তী সময়ে ম্যাক্সওয়েলের যুগান্তকারী কাজের ভিত্তিভূমি হিসেবে নির্দেশ করা যায় এই কাজকেই।
তবে এ কথা ঠিক যে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দিকে ফ্যারাডেই ইউরোপের সবচেয়ে পরিচিত তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হলেও গণিতে তিনি অতটা দক্ষ ছিলেন না। যদিও পরীক্ষানিরীক্ষার দিক থেকে তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত, আর গাণিতিকভাবে সাজিয়েগুছিয়ে যিনি তড়িৎচুম্বকীয় যাবতীয় বিষয়গুলোকে এক ছাতার নীচে আনলেন, তিনি অবশ্যই জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, আমাদের বিদ্যাসাগরের চেয়ে বছর এগারোর ছোট (১৮৩১- ১৮৭৯) এক স্কটিশ বিজ্ঞানী। ফ্যারাডে যেটা পারেননি, বছর কয়েক বাদে ম্যাক্সওয়েল তাঁর সেই ধারণাকেই সার্থক এবং বাস্তব রূপ দিতে পেরেছিলেন। তাঁর ১৮৬৫ সালের ‘Dynamical Theory of the Electromagnetic Field’ নামে বিখ্যাত সেই পেপারটিতেই ম্যাক্সওয়েল প্রথম জানিয়েছিলেন তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র নিয়ে তাঁর যুগান্তকারী ভাবনার কথা। তবে তারও আগে, ১৮৫৬ সালে তিনি আর একটি পেপারে ফ্যারাডে-র তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বকে ব্যাখায় করলেন নতুনভাবে। পেপারটার নাম ‘অন ফিজিক্যাল লাইনস অব ফোর্স’।
ম্যাক্সওয়েল তাঁর ১৮৬৫-র ওই পেপারটিতে একাধিক জায়গায় উল্লেখ করেছিলেন পূর্বসূরি ফ্যারাডে-র কাজের গুরুত্বের কথা। স্বীকার করেছেন, ফ্যারাডে-র কাছে তিনি কতভাবে ঋণী সেটা।
একটা মজার ব্যাপার এখানে বলে নেওয়া যেতে পারে। আইজ্যাক নিউটন একবার এক চিঠিতে তাঁর প্রতিপক্ষ এবং সে আমলের আর এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী রবার্ট হুক-কে লিখেছিলেন যে তিনি বহু দূরের বিষয়বস্তু দেখতে সক্ষম হয়েছেন এই কারণেই যে তিনি দৈত্যদের কাঁধের ওপর দাঁড়াতে পেরেছিলেন [* If I have seen further, it is by standing on the shoulders of Giants.]। কথাটা নিয়ে যদিও বিতর্ক আছে যে নিউটন হয়তো রবার্ট হুকের শারীরিক ত্রুটিকেই ব্যঙ্গ করেছিলেন (হুক সামান্য কুঁজো ছিলেন) ওই দৈত্যদের কাঁধে ভর দেওয়ার উলেখ করে, তবে সে প্রসঙ্গ সরিয়ে রাখলেও কথাটা সত্যি খুব দামি। প্রত্যেকেই তো তাঁর কাজ গড়ে তোলেন পূর্বসূরিদের কাজের ওপর ভিত্তি করেই।
ঠিক একই কথা আবার আমরা শুনতে পাই আড়াইশো বছর পর, কেমব্রিজে এক বক্তৃতা দিতে গিয়ে যখন আলবার্ট আইনস্টাইনকে কেউ একজন বলেন যে আপনি তো বিরাট সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন, কিন্তু আসলে আপনি যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নিউটনের মতো এক দৈত্যের কাঁধেই। তখন আইনস্টাইন নাকি তাঁকে বলেন, ‘না আমি আসলে দাঁড়িয়ে রয়েছি ম্যাক্সওয়েল-এর কাঁধে।’ তাঁর কাজের আসল ভিত্তি যে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব, এটাকেই ইঙ্গিত করেছিলেন আইনস্টাইন। ঠিক একইভাবে ম্যাক্সওয়েলকেও জিজ্ঞেস করলে তিনি নিশ্চয়ই বলতেন, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন ফ্যারাডে-র কাঁধে ভর করেই।
………………
· দরকারি বই
Faraday, Maxwell and the Electromagnetic Field: Nancy Forbes and Basil Mahon, Prometheus Books, New York, 2014.
আগের পর্ব পড়ুন : বেতারের আদিযুগ ও জগদীশচন্দ্র (চতুর্থ পর্ব)