ভালো খবর

হাজারেরও বেশি অনাথ শিশুর 'মা' সিন্ধুতাই সাপকল

টিম সিলি পয়েন্ট Jan 23, 2021 at 3:43 am ভালো খবর

জীবন যাদের সবদিক থেকে কোণঠাসা করে, তারা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পান, তখনই বোধহয় তৈরি হয় এক-একটা জ্যান্ত মহাকাব্য। সিন্ধুতাই সাপকলের কাহিনিও তেমনই। হাজারেরও বেশি অনাথ শিশুকে প্রতিপালন করার বিরল কৃতিত্ব রয়েছে মারাঠি এই মহিয়সীর ঝুলিতে। অথচ তাঁর নিজের জীবনের শুরুটাই ছিল একটা কঠিন সংগ্রাম।

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর, ভারতের মহারাষ্ট্রের ওয়ারদার জেলার একটি দরিদ্র পরিবারে সিন্ধুতাইয়ের জন্ম। খুব কষ্ট করে তাঁকে বড় হয়ে উঠতে হয়েছে। পরিবারের সামর্থ্য ছিল না পড়ার ব্যয় বহন করার‍। তাই মাত্র দশ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তাঁর। বয়সে তাঁর চেয়ে কুড়ি বছরের বড় শ্রীহরি সাপকলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামীর সংসারে এসেও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি সিন্ধুতাইয়ের। দিনের পর দিন স্বামীর অবহেলা ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট সহ্য করে ১০ বছর সংসার করতে পেরেছিলেন তিনি। তারপর স্বামীই তাঁকে তাড়িয়ে দেন। তার নেপথ্যে ছিল সিন্ধুতাইয়ের এক সাহসী কাজ।

ওয়ারদার জেলার বিভিন্ন গ্রামে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হতো গরুর গোবর। এই গোবর বিক্রির অর্থই ছিল অনেকের আয়ের উৎস। কিন্তু গ্রামের এক প্রভাবশালী বন বিভাগের কর্মী গ্রামের সব গোবর সংগ্রহ করে বন বিভাগের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছিল। আর গ্রামের মানুষকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছিল। সিন্ধুতাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।  বনবিভাগের কর্তারা ঘটনার তদন্ত করেন এবং সেই বেআইনি ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। সেই অসাধু বনকর্মী প্রতিশোধ নেবার জন্য  সিন্ধুতাইয়ের স্বামীকে অনেক টাকা দেয়, বিনিময়ে সিন্ধুতাইকে ত্যাগ করতে বলে। টাকার লোভে শ্রীহরি সাপকল তাই করে। 

আরও পড়ুন : বাইকেই ক্লাসরুমের সরঞ্জাম : গরীব শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেই পৌঁছে যাচ্ছেন ছত্তিশগড়ের ‘রুদ্র স্যার’

২০ বছর বয়সী সিন্ধুতাইয়ের গর্ভে তখন নয় মাসের একটি সন্তান। স্বামী মারধোর করে ঘর থেকে বের করে দিলে সেই গ্রামের কারো কাছে তিনি সাহায্য পান না। পথেই একটি গোয়ালঘরে কারো সাহায্য ছাড়া সন্তান প্রসব করেন। এরপর অসুস্থ ক্লান্ত শরীরে বাপের বাড়ি গিয়েও আশ্রয় পান না। উপায়ান্তর না দেখে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। ধর্মীয় গান গাইতে পারতেন। গান গেয়ে রেলস্টেশনে ভিক্ষা করতে শুরু করলেন। এই সময় তিনি খেয়াল করেন, অনেক অনাথ পথশিশু অসহায় অবস্থায় পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। নিজের ভিক্ষালব্ধ টাকায় তিনি কিছু কিছু পথশিশুকেও খাওয়াতে শুরু করলেন। এই মহৎ উদ্দেশ্যই তাঁকে নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করল। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পথশিশুদের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। আর মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে বেছে নিলেন একটি কবরখানা, যেখানে অনেকের থাকায় অসুবিধা নেই।  শিশুরা তাঁকে ‘মা’ নামে ডাকতে থাকে। যাতে পক্ষপাত না করে ফেলেন, তাই নিজের মেয়ে মমতাকে পাঠিয়ে দেন পুনের শ্রীমন্ত দাগড়ু শেঠ হালওয়াই ট্রাস্টে। নিজে সমস্ত মনোযোগ ঢেলে দেন অনাথ শিশুদের লালন-পালনে। ধীরে ধীরে সিন্ধুতাইয়ের কাছে অনাথ শিশুর ভিড় বাড়তে থাকে। তিনি তাদের আশ্রয়, খাবার, কাপড় ছাড়াও শিক্ষার ব্যবস্থাও করেন। ক্রমে কিছু কিছু সাহায্যও পেতে থাকেন, বড় হয়ে উঠতে থাকে তার সংসার। নাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। এই মুহূর্তে, ৭২ বছর বয়সে, তাঁর নেতৃত্বে মোট সাতটি অনাথ-আশ্রম চলে। আজ পর্যন্ত ১০০০-এরও বেশি অনাথ শিশুর দত্তকভার নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার ও সম্মান। সিন্ধুতাইয়ের অনাথ-আশ্রম থেকে বেরিয়ে পরবর্তীকালে অনেকেই কৃতী ও প্রতিষ্ঠিত নাগরিক হয়েছে। তারাও পরবর্তীকালে সিন্ধুতাইয়ের মহতী উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, সক্রিয় সাহায্য করেছেন। মেয়ে মমতাও সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করে মায়ের উদ্যোগে সামিল হয়েছে। মজার কথা, বহু বছর আগে সিন্ধুতাইয়ের স্বামী শ্রীহরি সাপকলও বহু বছর পর তাঁর কাছে এসে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। সিন্ধুতাই তাঁকে ক্ষমা করেন, নিজের অন্য সন্তানদের সঙ্গে সেই ৮০ বছরের বৃদ্ধকেও আশ্রয় দেন সন্তান হিসেবে।

বাহাত্তর পেরিয়ে আজও সিন্ধুতাই নিজের কর্তব্যে অবিচল। তাঁর জীবনকথা নিয়ে একটি মারাঠি ছবিও হয়েছে। অনন্ত মহাদেবন পরিচালিত ‘মি সিন্ধুতাই সাপকল’ নামে সেই ছবিটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে।  


#Sindhutai Sapkal # social worker # social activist #orphaned children #Mother of Orphans #অনাথ শিশু #পথশিশু #অনাথ আশ্রম #ভালো খবর #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

3

Unique Visitors

181989